প্রতিনিধি, জাবি : জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলনকারী-পুলিশ-ছাত্রলীগ ত্রিমুখী সংঘর্ষে দুই অধ্যাপক, সাংবাদিকসহ দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) রাত পৌনে তিনটায় আন্দোলনকারীদের দমাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনের ভেতরে পুলিশ গুলি চালালে ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক ড. খোঃ লুৎফুল এলাহী মারাত্মকভাবে আহত হন। সন্ধ্যায় আন্দোলনকারী ও ছাত্রলীগের সংঘর্ষ থামাতে গেলে রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ড. আওলাদ হোসেন আহত হন।
এছাড়া সাংবাদিক পরিচয় দেওয়ার পরেও পুলিশের গুলি ও ছাত্রলীগের হামলার শিকার ছয় সাংবাদিক। রাতভর সংঘর্ষে পুলিশসহ উভয় পক্ষের অন্তত দুই শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে তিন প্লাটুন পুলিশ কাজ করেন। এক পর্যায়ে অতিরিক্ত পুলিশ সহ একটি জলকামান আনা হয় জাবি ক্যাম্পাসে।

আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ নুরুল আলমের বাসভবনে আশ্রয় নিলে তাদের ওপর ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে হামলা চালায়। প্রথমে পুলিশ পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করলেও বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হল থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা এসে আন্দোলনকারীদের সাথে যোগ দিলে পুলিশও সংঘর্ষে জড়ায়।
এদিকে সোমবার রাত নয়টায় দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নুরুল আলমের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন শিক্ষার্থীরা। রাত সোয়া ১০ টায় শিক্ষার্থীরা উপাচার্যের বাসভবনের সামনে অবস্থান নেন।
এর আগে সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। মিছিলটি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের সামনে আসলে অতর্কিত হামলা করে ছাত্রলীগ।
এই ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, সাংবাদিক এবং নারী শিক্ষার্থীসহ অর্ধ-শতাধিক আহত হন। হামলার প্রতিবাদে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের পাদদেশে জড়ো হতে থাকে। এরপর একটি মিছিল নিয়ে উপাচার্যের বাসভবন ঘেরাও করে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
আন্দোলনরত শিক্ষার্থী হাসিব জামান বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল করছিলাম। মিছিলে ছাত্রলীগ আমাদের ওপরে অতর্কিত হামলা করে। ছাত্রলীগের এই হামলায় আমাদের একজন শিক্ষক পর্যন্ত আহত হয়। এই সময় প্রক্টোরিয়াল টিম এবং কোনো নিরাপত্তা কর্মকর্তা উপস্থিত ছিল না। ক্যাম্পাসের বাইরে থেকে সন্ত্রাসী এনে আমাদের উপরেই হামলা চালানো হয়। বিশ্ববিদ্যালয় উপাচার্য যেহেতু বিশ্ববিদ্যালয় সর্বোচ্চ অভিভাবক এজন্য আমরা তার কাছে বিচারের দাবিতে এসেছি।
পরে সাধারণ শিক্ষার্থীরা নিজ নিজ হলে ফিরে গেছেন। পুলিশ জলকামান সহ উপাচার্যের বাসভবনে টহলে আছেন। তবে সকালের আলো ফুটতেই বিভিন্ন হল থেকে ছাত্রলীগ কর্মীদের ব্যাগপত্র গুছিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্য রওনা দিতে দেখা গেছে।
এরপর দুপুর বারোটা থেকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা একটি মিছিল বের করেন। মিছিলটি ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক প্রদক্ষিণ করে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে যুক্ত হন ধামরাই কলেজ, গণ বিশ্ববিদ্যালয় ও আশেপাশের কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা।
সর্বশেষ তথ্য পাওয়া পর্যন্ত সাধারণ শিক্ষার্থীরা ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করে রেখেছে।