শেয়ার বিজ ডেস্ক: পুলিশ এখন মানুষের ‘আস্থা ও বিশ্বাস’ অর্জন করেছে মন্তব্য করে এ বাহিনীর সদস্যদের সততার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের তাগিদ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গতকাল এক অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, ‘আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন, জনগণের পাশে থাকবেন এবং জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবেন, সেটাই আমাদের লক্ষ্য।’ সূত্র: বাংলা ট্রিবিউন
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পুলিশ বাহিনীর জন্য যত রকমের সুযোগ-সুবিধা করা এবং বিশেষায়িত বাহিনী গড়ে তোলা, মানুষের সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়া, মানুষের কাছে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা আমরা করে যাচ্ছি। কাজেই সেইভাবে সততার সঙ্গে আপনারা কাজ করে যাবেন, সেটাই আমরা চাই।’
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জš§শতবার্ষিকী উপলক্ষে দেশের ৬৫৯টি থানায় নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় স্থাপিত সার্ভিস ডেস্কের উদ্বোধন এবং গৃহহীনদের জন্য বানানো ঘর হস্তান্তর করা হয় এ অনুষ্ঠানে। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর যে ঐতিহাসিক বার্তাটা, এই পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে হবে আমি মনে করি, এই হেল্প ডেস্ক নির্মাণের মাধ্যমে নারী, শিশু, বয়স্ক, প্রতিবন্ধীদের সেবা দেয়া এবং গৃহহীনদের গৃহ দেয়া, এটা জনগণের পুলিশেরই কাজ। কাজেই আজকের পুলিশ জনগণের পুলিশ হিসেবেই আপনারা আজ মানুষের আস্থা, বিশ্বাস অর্জন করেছেন।’
নারী, শিশু, বয়স্ক ও প্রতিবন্ধীদের সেবায় স্থাপিত পুলিশের সার্ভিস ডেস্কের প্রশংসা করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, ‘আমাদের নারী সমাজ, শিশু বা বয়স্করা, তাদের বিরুদ্ধে অন্যায় হলে বলতে পারে না। নারীদের ব্যাপারে তো এটা আরও বেশি। তাদের পক্ষে অন্যায়ের প্রতিকার চাওয়ার সুযোগটা আপনারা করে দিয়েছেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা সমাজটাকে উন্নত করতে চাইÑপিছিয়ে পড়া, অনগ্রসর, তৃণমূল পর্যায়ে পড়ে থাকে বা যারা বিভিন্ন ক্ষেত্রে নিজেদের অবাঞ্ছিত মনে করে, শত নির্যাতনের মুখেও প্রতিকার চাইতে পারে না, সেই মানুষগুলোর মাঝে আস্থা-বিশ্বাস ফিরিয়ে আনা; নাগরিক অধিকার রয়েছে, সেটা নিশ্চিত করা এবং তাদের সহযোগিতা করা।’ সেবা প্রার্থীদের আইনগত সহায়তার জন্য পুলিশের প্রতি আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী।
তৃণমূল পর্যায় পর্যন্ত সরকারের উন্নয়নের পদক্ষেপের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর থেকে উন্নয়নটা তৃণমূল থেকেই শুরু করেছি। শুধু রাজধানী কিংবা শহরভিত্তিক না, সর্বস্তরের মানুষ যেন উন্নয়নের ছোঁয়াটা পায়, সেটা লক্ষ্য রেখে সরকার কাজ করে যাচ্ছে।’
জাতির পিতার গুচ্ছগ্রাম প্রকল্পের কথা উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমরা জাতির পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে এগিয়ে যাচ্ছি। বাংলাদেশে একটি মানুষও গৃহহীন, ভূমিহীন ও ঠিকানাবিহীন থাকবে না। প্রথমবার সরকারে এসে বলেছিলাম, কোনো কুঁড়েঘর থাকবে না, আমরা একটা টিনের ঘর হলেও দেবো। দ্বিতীয়বার সরকারে এসে সেমিপাকা ঘর দিচ্ছি এবং উন্নতমানের জীবনযাপন যেন করতে পারে তার ব্যবস্থা করে দিয়েছি।’
তিনি বলেন, ‘যার শুভ ফল সারাদেশে ছড়িয়ে যাবে। উন্নয়নটা গতিশীল হবে। মানুষের যখন থাকার জায়গা হয়, তখন সেটাই তার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হয়। এতে মানুষের ভেতরে আত্মবিশ্বাস ও আস্থা সৃষ্টি হয়। সেটা তাকে সুযোগ করে দেয় নিজের পায়ে দাঁড়াবার, আত্মকর্মসংস্থান করার।’
পুলিশকে প্রযুক্তিগতভাবে যুগোপযোগী করতে সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ডিজিটাল বাংলাদেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পর্যায় পর্যন্ত ব্রডব্যান্ড পৌঁছে যাচ্ছে। কাজেই এখন যোগাযোগের সুযোগ অনেক বেশি। তাই যেকোনো জায়গায় বসে মানুষের দুঃখ, দুর্দশা জানা বা কোনো নির্যাতন করলে, তার প্রতিকার করার সুযোগ আছে।’
পুলিশের ৯৯৯ সেবার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কোনো দুর্গত এলাকায় কেউ পথ হারিয়ে ফেললে, তাকেও পুলিশ উদ্ধার করে নিয়ে আসছে।’ করোনাকালীন পুলিশের কর্মকাণ্ডের প্রশংসা করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘জাতির পিতা আমাদের স্বাধীনতা দিয়ে গেছেন, তা সমুন্নত করে মানুষের সেবা দেয়াটাই দায়িত্ব।’
প্রশিক্ষণে গুরুত্ব দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পুলিশের হেল্প ডেস্কে যারা কাজ করেন, তাদের শুধু দেশে না, বিদেশেও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে দেবো। তারা যেন বিদেশ থেকেও প্রশিক্ষণ নিয়ে আসতে পারে। কারণ, কোন দেশে, ?কীভাবেÑএটাতে মানবিক দিক ও মনস্তাত্ত্বিক বিষয় রয়েছে, সেই বিষয়ে অভিজ্ঞতা সঞ্চয়ের প্রয়োজন রয়েছে। তাই এখানে কাউকে বিদেশে পাঠিয়েও যদি ট্রেনিং করিয়ে আনতে হয়, সেটা করাবো এবং তারা অন্যদের ট্রেনিং করাবেন।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সুপ্রশিক্ষিত একটা বাহিনী, যে বাহিনী মানুষের পাশে থাকবে। মানুষের কল্যাণ ও কাজ করবে। সেটাই আমরা চাই। সেভাবে আমরা গড়ে তুলব।’
এই পুলিশকে জনগণের পুলিশ হতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের এই উদ্ধৃতি তুলে ধরে তিনি বলেন, আমি মনে করি হেল্প ডেস্ক নির্মাণের মাধ্যমে নারী, বয়স্ক, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের সেবাদান করা এবং গৃহহীনদের গৃহ দেয়া, এটা জনগণের পুলিশেরই কাজ। আজকের পুলিশ জনগণের পুলিশ হিসেবেই মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করেছেন।
বাংলা নববর্ষ ও ঈদের আগাম শুভেচ্ছা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আপনারা জনগণের পাশে দাঁড়িয়েছেন। জনগণের পাশে থাকবেন। জনগণের কল্যাণে কাজ করে যাবেন। সেটাই আমাদের লক্ষ্য। সেই লক্ষ্যেই আওয়ামী লীগ সরকারে আসার পর পুলিশ বাহিনীর জন্য যত রকমের সুযোগ-সুবিধা করা এবং বিশেষায়িত বাহিনী গড়ে তুলছি। এর মাধ্যমে সেবাটা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেয়ার চেষ্টা করছি।
অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন স্বরাস্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আখতার হোসেন, পুলিশের মহাপরিদর্শক বেনজীর আহমেদ প্রমুখ।