পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা

ভিটামিন ‘এ’, ‘সি’, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম প্রভৃতি উপাদানসমৃদ্ধ ফল কুল। রোগ প্রতিরোধে ভূমিকা রাখে। শরীরের রোগ প্রতিরোধক্ষমতাও বাড়িয়ে দেয়। দেখে নিন এর পুষ্টিগুণ ও রোগ প্রতিরোধক্ষমতা

কুলে বিদ্যমান ভিটামিন ‘সি’ গলার ইনফেকশনজনিত অসুখ, যেমন টনসিলাইটিস, ঠোঁটের কোণে ঘা, জিভে ঠাণ্ডাজনিত লালচে ব্রণের মতো ফুলে যাওয়া ও ঠোঁটের চামড়া উঠে যাওয়া রোধ করে

যকৃতের কাজের ক্ষমতা কয়েক গুণ বাড়িয়ে দেয়

এর রস অ্যান্টিক্যান্সার ড্রাগ হিসেবে ব্যবহƒত হয়। ক্যানসার সেল, টিউমার সেল, লিউকোমিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করার অসাধারণ শক্তি রয়েছে

উচ্চরক্তচাপের রোগীদের জন্য এই ফল যথেষ্ট উপকারী

রক্ত বিশুদ্ধকারক হিসেবে এর গুরুত্ব অপরিসীম

ক্রমাগত মোটা হয়ে যাওয়া, রক্তশূন্যতা থেকে রক্ষা করে

খাবারে রুচি আনার জন্যও এই ফলটি বিশেষ ভূমিকা রাখে

নিদ্রাহীনতা দূর করে ও মানসিক চাপ কমায়

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে। হজমজনিত সমস্যার সমাধান করে

ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে

এর ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস হাড় গঠন ও দাঁতের সুরক্ষায় ভূমিকা রাখে

রুক্ষতা দূর করে ত্বক কোমল করে। রোদে পোড়া ত্বক সুরক্ষায়ও কার্যকর

বয়সের ছাপ পড়তে বাধা দেয়

 

সর্তকতা

ডায়াবেটিক রোগীদের কুল এড়িয়ে চলাই শ্রেয়, কেননা পাকা কুলে চিনি থাকে। যাদের শ্বাসকষ্ট আছে, তাদের কাঁচা কুল বেশি না খাওয়াই উত্তম। হ

 

 

 

চাষ পদ্ধতি

মৌসুমি ফল কুল। বরই কিংবা কুলÑদুই নামেই সমান পরিচিত ফলটি। কাঁচা-পাকা অবস্থায় খাওয়া যায়। ছোট-বড় সবার কাছে এই ফলটি প্রিয়।

ফলটি অর্থকরী। পুষ্টিগুণসমৃদ্ধও বটে। আমাদের দেশের আবহাওয়া কুল চাষের জন্য খুবই উপযোগী। দেশের প্রায় সব জেলায় কুল চাষ হয়। বেশকিছু জাতের কুলের আবাদ হয়ে থাকে। কুলগাছ লাবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা সহ্য করতে পারে। এমনকি যে কোনো ধরনের মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। বর্তমানে ব্যবসায়িক ভিত্তিতে কুল চাষ ও বাজারজাত হচ্ছে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে কুল রফতানি করা সম্ভব।

 

জাত

কুলের বেশ কিছু জাত রয়েছে। কয়েকটি কুলের মধ্যে উল্লেখযোগ্য বারি কুল-১, বারি কুল-২, আপেল কুল, বাউকুল-১, নারকেল বরই, থাইকুল, দেশি টক বরই প্রভৃতি। এলাকাভেদে সাধারণত একেক জাতের কুল ভালো জšে§।

 

সুবিধা

প্রতিবছর পর্যাপ্ত পরিমাণ ফল দেয়

কুল চাষে যত্ন, পরিচর্যা ও খরচ তুলনামূলক কম

কুলগাছ অত্যন্ত কষ্টসহিষ্ণু এবং স্বল্প উর্বরতাসম্পন্ন মাটি ও প্রতিকুল আবহাওয়ায়ও সফলভাবে চাষ করা যায়

অনুন্নত জাতকে খুব সহজেই উন্নত জাতে রূপান্তর করা যায়

ডাল ছাঁটাই করে প্রচুর জ্বালানি পাওয়া যায়

প্রয়োজনে গাছের আকার সীমিত করে রাখা যায়

খুব সহজেই এক গাছে একাধিক জাতের কুঁড়ি সংযোজন করা যায়

এতে রোগবালাই ও অনিষ্টকারী পোকামাকড়ের উপদ্রব তুলনামূলকভাবে কম

 

চারা ও মাটি নির্বাচন

চাষের জন্য দোআঁশ মাটি উত্তম। এর অন্যতম বৈশিষ্ট্য এটি লবাণাক্ততা ও জলাবদ্ধতা উভয়ই সহ্য করতে পারে। কুলগাছ দুভাবে লাগানো যায়। বীজ দিয়ে ও কলম তৈরি করে। কুল চাষে কলম চারা ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। কলমের চারা ভালো, কারণ এতে বংশগত গুণ ঠিক থাকে। বীজ থেকে চারা পেতে হলে বীজকে  ভেজা গরম বালির ভেতর রেখে দিলে চারা তাড়াতাড়ি গজাবে। কলমের চারা পাওয়ার জন্য নির্বাচিত স্থানে বীজবপন ও চারা তৈরি করে তার ওপর বাডিংয়ের মাধ্যমে কলম তৈরি করে নেওয়া ভালো। জাত, স্থান ও জলবায়ুভেদে মাঘ-ফাল্গ–ন থেকে ভাদ্রের মাঝামাঝি পর্যন্ত বাডিং করা যায়।

জমি তৈরি ও চারা রোপণ পদ্ধতি

কুলের বাগান তৈরির জন্য উঁচু ও মাঝারি উঁচু জমি ভালো

চারা রোপণের মাসখানেক আগে ১ মিটার–১ মিটার–১ মিটার মাপের গর্ত তৈরি করে নিতে হবে

রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে গর্তের মাটির সঙ্গে সার মিশিয়ে রাখতে হবে

বাগান তৈরির জন্য বর্গাকার রোপণ প্রণালী অনুসরণ করতে হবে

গাছের দূরত্ব ছয় থেকে সাত মিটার রাখতে হবে। জাত ও জায়গাভেদে দূরত্ব কম-বেশি হতে পারে

স     এছাড়া বাড়ির আনাচেকানাচে, পুকুর পাড়ে ও আঙ্গিনার অনুর্বর মাটিতে গর্ত করে কুলের চাষ করা যায়

 

সার ব্যবস্থাপনা

চারা রোপণের ১০ থেকে ১৫ দিন আগে পচা গোবর ১০ কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫৫ গ্রাম ও ইউরিয়া সার ২৫০ গ্রাম প্রতি গর্তে দিতে হবে। এক থেকে দুই বছর বয়সে গাছপ্রতি পচা গোবর আট কেজি, টিএসপি সার ২৫০ গ্রাম, এমওপি সার ২৫০ গ্রাম ও ইউরিয়া সার

৩০০ গ্রাম দিতে হবে। বয়স বাড়ার সঙ্গে সারের পরিমাণ বাড়াতে হবে। বছরে দুই থেকে তিন কিস্তিতে সার দিতে হয়Ñপ্রথমে ফল ধরার পর, দ্বিতীয়বার ফল সংগ্রহের পর ও তৃতীয়বার বর্ষার পর দেওয়া ভালো।

 

সেচ

সার দেওয়ার পর হালকা সেচ দিয়ে মাটি ভিজিয়ে দিতে হবে। শুষ্ক মৌসুমে বিশেষ করে ফুল ও ফল ধরার সময় মাসে একবার সেচ দিলে ভালো ফলন পাওয়া যায়।

 

রোগবালাই

কুলগাছ সাধারণত বিছাপোকা, লাল ক্ষুদ্র মাকড়সা, কাণ্ড, পাতা ও ফল ছিদ্রকারী পোকাসহ এক ধরনের ছত্রাক (পাউডাড়ি মিলভিউ) দ্বারা আক্রান্ত হয়। এসব কীটপতঙ্গের আক্রমণে ফলন কমে যায় এবং ফুল ও ফল গাছ থেকে ঝরে পড়ে।

প্রতিকার

বিছাপোকা ও পাতাখেকো পোকার জন্য প্রতিলিটার পানিতে দুই মিলিলিটার পাইরিফ্সজাতীয় কীটনাশক মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। মাকড়শা দ্বারা আক্রান্ত হলে প্রতি লিটার পানিতে দুই টাফগড়ের সঙ্গে দুই গ্রাম থেয়োভিট মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। কাণ্ড ও ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমণ হলে প্রতি লিটারে এক মিলিলিটার হারে সাইপারমেথ্রিন-জাতীয় কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। ছত্রাকের আক্রমণ হলে প্রতি লিটার পানিতে কার্বেনডাজম ও দুই গ্রাম মেনকোজেব ভালোভাবে মিশিয়ে গাছে স্প্রে করতে হবে। এছাড়া অধিক ফলনের জন্য ফুলে লিটুনেস বা অ্যাগনলসহ ভালো মানের পিজিআর ব্যবহার করতে পারেন।

 

পরিচর্যা

প্রথম বছর গাছটির কাঠামো মজবুত করার জন্য গোড়া থেকে ৭৫ সেন্টিমিটার উঁচু পর্যন্ত কোনো ডালপালা রাখা যাবে না

শক্ত-সামর্থ্য কিছু শাখা-প্রশাখা গাছের অবস্থা অনুযায়ী রাখতে হবে, যেন ডালপালা সুন্দরভাবে বেড়ে উঠতে পারে

ছাঁটাইয়ের সময় শক্ত-সামর্থ্য শাখাগুলোর গোড়া থেকে না কেটে কিছু অংশ রেখে সামনের অংশ কেটে ফেলতে হবে

দুর্বল ও রোগাক্রান্ত ডালগুলো গোড়া থেকে কাটতে হবে

বাগানের আশেপাশে ঝোপজঙ্গল ও আগাছা পরিষ্কার করতে হবে

গাছে অসময়ে আসা ফুল ও কুড়ি নষ্ট করে ফেলতে হবে

মাটিতে পড়ে যাওয়া আক্রান্ত ফলগুলো সংগ্রহ করে লার্ভা বা পিউপা কিংবা পূর্ণবয়স্ক পোকাসহ ধ্বংস করতে হবে

 

ফল সংগ্রহ

মধ্য পৌষ থেকে মধ্য চৈত্রের মধ্যে ফল পাওয়া যেতে পারে। ফলের রং হাল্কা সবুজ বা হলদে হলে সংগ্রহ করা ভালো।

 

প্রশিক্ষণ

স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। বাংলাদেশে সব জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদফতরের কৃষিবিষয়ক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র রয়েছে। এছাড়া কুল চাষের আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে এ বিষয়ে বিস্তারিত জেনে নিতে পারেন।

 

শিপন আহমেদ

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০