শেয়ার বিজ ডেস্ক: জাতীয় পুষ্টিসেবার দ্রুত বাস্তবায়নের ওপর একটি উচ্চ পর্যায়ের ন্যাশনাল অ্যাডভোকেসি মিটিং রাজধানীর একটি হোটেলে অনুষ্ঠিত হয়েছে। এতে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম।
ওই অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাতীয় পর্যায়ে পুষ্টিসেবা পৌঁছে দেওয়ার লক্ষ্যে সব পৃষ্ঠপোষকদের সমবেতভাবে এগিয়ে যাওয়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন ও জাতীয় পুষ্টিসেবা দ্রুত সারা দেশে ছড়িয়ে দেওয়ার মাধ্যমে প্রতিটি নারী ও শিশুর পুষ্টি নিশ্চিত করার নির্দেশ দেন। ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ এডোয়ার্ড বেইবেদার অনুষ্ঠানে উপস্থিত পৃষ্ঠপোষকদের ‘পুষ্টির জন্য ঐক্যবদ্ধ’ হওয়ার স্লোগানে উদ্বুদ্ধ হয়ে সবার যৌথ প্রয়াসে ২০২৫ সালের মধ্যে ১৬ লাখ শিশুকে অপুষ্টিজনিত বিভিন্ন সমস্যার হাত থেকে বাঁচানোর আহবান জানান।
বাংলাদেশে এখনও প্রতি তিনজনে একজন শিশুর সঠিক বিকাশ নানাভাবে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে, যা তাদের বেঁচে থাকার অধিকারসহ শারীরিক ও মানসিক বিকাশের অধিকার থেকে বঞ্চিত করছে, যার পরিণতিতে আমরা মেধাভিত্তিক সক্ষমতা এবং উৎপাদনশীলতার ক্ষেত্রে অপূরণীয় ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছি। এই পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ সরকার ২০১১ সালে জাতীয় পুষ্টিসেবা বা এনএনএস কার্যক্রম শুরু করে। এই কার্যক্রমের অন্তর্ভুক্ত হয়েছে মা ও শিশুর পুষ্টিসেবা, যেখানে বিশেষ গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে মায়ের গর্ভকাল থেকে শিশুর বয়স দুই বছর পূর্ণ হওয়া পর্যন্ত সময়কালকে বা শিশুর জীবনের প্রথম এক হাজার দিনকে, যা কিনা পুষ্টিসেবা কার্যক্রমের জন্য একটি সুবর্ণ সুযোগ।
অনুষ্ঠানে ছিলেন বাংলাদেশে নিযুক্ত কানাডার হাইকমিশনার বেনোয়া প্রিফোন্টেইন, ইউনিসেফের কান্ট্রি রিপ্রেজেন্টেটিভ এডোয়ার্ড বেইবেদার, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের হেল্থ সার্ভিস ডিভিশনের সচিব মোহাম্মদ সিরাজুল হক খান, স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্যশিক্ষা ও পরিবারকল্যাণ ডিভিশনের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম, হেল্থ সার্ভিসের ডিরেক্টর জেনারেল প্রফেসর ড. আবুল কালাম আজাদ প্রমুখ।
স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব রোক্সানা কাদের, ইউনিসেফের চিফ নিউট্রিশন অনুরাধা নারায়ণ, ন্যাশনাল নিউট্রিশন সার্ভিস প্রকল্পের লাইন ডিরেক্টর ও ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেল্থ নিউট্রিশনের ডিরেক্টর ড. এবিএম মাজহারুল ইসলাম, ডিরেক্টরেট জেনারেল অব ফ্যামিলি প্ল্যানিংয়ের (ডিজিএফপি) ডিরেক্টর জেনারেল ড. কাজী মুস্তাফা সারওয়ার, আইসিডিডিআরবি’র সিনিয়র রিসার্চ ইনভেস্টিগেটর এসকে মাসুম বিল্লাহ, ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেল্থ নিউট্রিশনের প্রোগ্রাম ম্যানেজার এসএম মুস্তাফিজুর রহমানসহ বিভিন্ন দাতা সংস্থা ও আন্তর্জাতিক সংস্থার প্রতিনিধিরা।
জাতীয় পর্যায়ের এই অ্যাডভোক্যাসি মিটিং বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে যৌথভাবে আয়োজন করেছে ইউনিসেফ বাংলাদেশ, সেইসঙ্গে ছিল প্রকল্প বাস্তবায়নের অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান
চিলড্রেন্স ইনভেস্টমেন্ট ফান্ড ফাউন্ডেশন, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও বিল অ্যান্ড মেলিন্ডাগেইটস ফাউন্ডেশন।
এছাড়া প্রকল্পের আওতাভুক্ত জেলাগুলোর মধ্যে এখন ১৮১টি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে মারাত্মক অপুষ্টিতে আক্রান্ত শিশুদের চিকিৎসার ব্যবস্থা রয়েছে, যা আগে ছিল মাত্র পাঁচটি স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। গত দুই বছরে ৫৫ লাখ গর্ভবতী ও প্রসূতি মাকে আয়রন ফলিক এসিড
(আইএফএ) ট্যাবলেট বিতরণ করা হয়েছে এবং প্রায় ৬৬ লাখ শিশুর পরিচর্যাকারীকে আইওয়াইসিএফ-বিষয়ক কাউন্সেলিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। গুরুতরভাবে অপুষ্টিজনিত সমস্যায় আক্রান্ত সাত হাজার ১০১ শিশু পেয়েছে জীবনরক্ষাকারী চিকিৎসাসেবা, যা সারা দেশে চিকিৎসাপ্রাপ্ত মোট অপুষ্ট শিশুর ৭৪ শতাংশ।