পূজার বাণিজ্যে নারকেল ও গুড়ের বিক্রি তুঙ্গে

প্রতিনিধি, রাজশাহী: পূজার আবহ যখন সবখানেই ছড়িয়ে পড়ছে, তখনই নারকেল ও গুড়ের চাহিদাও আকাশ ছুঁয়েছে। মিষ্টির ঘ্রাণে ভরা পূজার প্রসাদ ও উপাচার তৈরিতে দুটি উপকরণ যেন হয়ে উঠেছে অপরিহার্য। বাজারের প্রতিটি কোণে নারকেল আর গুড়ের বিক্রি বাড়ছে, আর এ নিয়ে খুশির হাসি ব্যবসায়ীদের মুখে। নারকেল নাড়ু আর গুড়ের পিঠা ছাড়া পূজার রসনাতৃপ্তি অসম্পূর্ণ। এসব মিষ্টি তৈরিতে নারকেল ও গুড়ের ভূমিকা এতটাই গুরুত্বপূর্ণ যে, ব্যবসায়ীরা এ সময় দ্বিগুণ লাভে পণ্য বিক্রি করেন। তাদের মতে, পূজার দিনগুলো যেন সারা বছরের অপেক্ষার প্রাপ্তি।

রাজশাহীর সাহেববাজারের বিপরীত পাশে রয়েছে নারকেল ও গুড়ের দোকান। সেখানে পূজার শুরু থেকেই ক্রেতাদের ভিড়ে মুখরিত। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, পূজার সময়ে নারকেল ও গুড়ের চাহিদা বেড়ে যাওয়ার কারণে তাদের বিক্রিও ভালো হচ্ছে। ফলে পণ্যের দামও স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় বেশ চড়া।
প্রতি বছর পূজার সময় রাজশাহী থেকে প্রায় ২-৪ লাখ টাকার নারকেল বিক্রি হয়; তবে এ বছর দাম আরও বেড়ে যাওয়ায় বিক্রি বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার প্রতিটি নারকেল ১০০-১১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত বছরের তুলনায় প্রায় ৩০-৪০ টাকা বেশি। পূজার জন্য নারকেলের চাহিদা বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা বাড়তি।

রাজশাহী থেকে নারকেল শুধু স্থানীয় বাজারেই সীমাবদ্ধ নয়, বরং দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও পাঠানো হয়। বিশেষ করে, চট্টগ্রাম, খুলনা ও বরিশালের মতো দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোড পূজার সময় নারকেলের চাহিদা অনেক বেশি থাকে। পূজার আগে থেকেই তারা এসব অঞ্চলে নারকেল সরবরাহ করেন, যার ফলে তাদের আয় উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি পায়।

পূজার সময় নারকেলের পাশাপাশি গুড়ের চাহিদাও বেড়ে যায়। রাজশাহীর বিখ্যাত বাজার বানেশ্বর ও সাহেববাজারের দোকানগুলোড কুষ্টিয়া, পাবনা এবং নাটোরসহ বিভিন্ন অঞ্চল থেকে গুড় আসে।
স্থানীয় ব্যবসায়ীরা বলছেন, এবার গুড়ের দামও উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। যেখানে গত বছর প্রতি কেজি গুড় ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে, সেখানে এবার তা ১৪০-১৫০ টাকায় পৌঁছেছে। পূজার জন্য গুড় একটি অপরিহার্য উপকরণ হওয়ায় এ সময়ে এর দাম বৃদ্ধি অপ্রত্যাশিত নয়। নারকেল ও গুড় একসঙ্গেই বিক্রি করছেন রাজশাহীর ব্যবসায়ী আবুল কালাম। তিনি বলেন, পূজার সময় নারকেল ও গুড়ের বাজারে যে চাহিদা থাকে, তা বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় বহুগুণ বেশি। পূজার পর চাহিদা কিছুটা কমলেও, এ সময়ে হওয়া বাণিজ্যই তাদের সারা বছরের আয়ের একটি বড় অংশ হিসেবে বিবেচিত হয়।

নারকেল ব্যবসায়ী মো. শহিদুল ইসলাম বলেন, পূজার সময় আমাদের ব্যবসা বেশ জমজমাট থাকে। ক্রেতারা এ সময়ে প্রচুর নারকেল কিনে নিয়ে যান, যার ফলে বিক্রিও বাড়ে। তবে এ বছর নারকেলের দাম কিছুটা বেশি। চাহিদা বেশি থাকায় দামও বাড়ছে, কিন্তু আমাদের পণ্য বিক্রি কমেনি। বরং প্রতিদিন ৪০০-৫০০ পিস নারকেল বিক্রি করছি। পূজার সময়টা আমাদের জন্য সেরা সময়গুলোর একটি, কারণ সারা বছরের আয়ের একটি বড় অংশ আমরা এই সময়েই করতে পারি। গুড় ব্যবসায়ী মো. হাসান আলী বলেন, পূজার সময় গুড়ের চাহিদা হঠাৎ করে বেড়ে যায়। প্রতিবারই এ সময় গুড়ের বাজার বেশ ভালো থাকে; তবে এবারের মতো দাম এত বাড়তে আগে দেখিনি। গত বছর যেখানে প্রতি কেজি গুড় ৯০-১০০ টাকায় বিক্রি করেছি, সেখানে এ বছর তা ১৪০-১৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। যদিও দাম বেশি, ক্রেতাদের সংখ্যা তবু কমছে না। পূজার প্রসাদ তৈরিতে গুড়ের ব্যবহার বাধ্যতামূলক; তাই সবাই আগেভাগেই গুড় কিনে রাখেন।

ক্রেতারা বলছেন, পূজার সময় নারকেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় তাদের জন্য কিছুটা কষ্টকর হলেও, পূজার জন্য নারকেল এবং গুড় কেনা বাধ্যতামূলক হয়ে দাঁড়ায়। অনেকে আবার এ মূল্যবৃদ্ধির সঙ্গে মানিয়ে নিয়েছেন। তারা বলেন, পূজার সময় এসব জিনিসের চাহিদা বাড়ে; তাই দামও স্বাভাবিকভাবেই বাড়বে।
ক্রেতা অমিত বসাক জানান, প্রতি বছরই পূজার আগে নারকেলের দাম বাড়ে, তবে এবারের দামটা একটু বেশি মনে হচ্ছে। তবুও পূজার প্রসাদ তৈরির জন্য এ উপকরণগুলো কেনা আমাদের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

আরেক ক্রেতা মধুমিতা দেবী বলেন, দাম বেশি হলেও পূজার আনন্দের জন্য নারকেল-গুড় কিনতেই হয়। পূজায় নারকেল না থাকলে যেন পূজার আনন্দটাই অসম্পূর্ণ থেকে যায়।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০