কামরুল হাসান চৌধূরী, নওগাঁ: সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। দুর্গোৎসবে অতিথি আপ্যায়নে লুচি ও মিষ্টির সঙ্গে নাড়–র বিকল্প হয় না। অর্থাৎ নাড়– না হলে যেন অপূর্ণ থেকে যায় পূজা। তাই এ সময় নাড়– তৈরির মূল উপকরণ নারিকেলের চাহিদা বেড়ে যায়। পূজা উপলক্ষে নারিকেলের চাহিদা বেড়েছে নওগাঁয়।
দুর্গোৎসবে প্রতিটি বাড়িতে নাড়– তৈরিতে নারিকেলের গুরুত্ব বেড়ে যায়। মন্দিরে আগত অতিথিদের লুচি ও মিষ্টির সঙ্গে নাড়– দিয়ে আপ্যায়ন করা হয়। আর এ সময় মুসলিমরাও মেয়ে-জামাতাকে দাওয়াত করে বাড়িতে আনেন। মেয়ে-জামাতা, নাতি-নাতনিদের আগমনে বাড়িতে যেন আনন্দের জোয়ার বয়ে যায়। সেই আনন্দ আরও কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয় নারিকেল আর গুড় দিয়ে তৈরি নাড়–। বাটিতে মুড়ির সঙ্গে নাড়– নিয়ে সবাই মিলে খাওয়ার মজাটাই আলাদা।
শহরের ডাবপট্টিতে চারজন পাইকারি নারিকেল বিক্রেতা আছেন। এছাড়া খুচরা বিক্রেতা আছেন কয়েকজন। তবে পাইকারি বিক্রেতাদের দোকানে ভিড় বেশি। এসব নারিকেল বরিশাল ও নোয়াখালী থেকে পূজার বাজারে বিক্রির জন্য নিয়ে আসা হয়েছে। পূজার সময় আট-দশ দিন প্রচুর নারিকেল বিক্রি হয়। ডাবপট্টিতে এখন প্রতিদিন পাঁচ-ছয় হাজার নারিকেল বিক্রি করা হচ্ছে।
খোসা ছাড়া নোয়াখালীর বড় আকারের প্রতিটি নারিকেল ২০ টাকা, মাঝারি ১৫ টাকা এবং ছোট ১২ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর বরিশালের বড় আকারের প্রতিটি নারিকেল ২৪ টাকা এবং ছোট আকারের নারিকেল বিক্রি করা হচ্ছে ১৫ টাকায়। আর প্রতিটি নারিকেলের ছোবড়া আলাদাভাবে বিক্রি করা হচ্ছে দু-এক টাকায়। এগুলো সোফা ও জ্বালানির কাজে ব্যবহার করা হয়।
শহরের পার-নওগাঁ মহল্লার কনক মণ্ডল জানান, বাড়িতে নারিকেলের গাছ নেই। পূজার সময় বাড়িতে নাড়– না হলে কেমন একটা খাপছাড়া দেখায়। ছেলেমেয়ে, আত্মীয়-স্বজনদের নাড়– দিয়েই তো আপ্যায়ন করতে হবে। এজন্য তিনি ১৪টি মাঝারি আকারের নারিকেল কিনেছেন।
বক্তারপুর গ্রামের জরিনা বিবি। দোকান থেকে বেছে বেছে বড় আকারের ছয়টি নারিকেল কিনেছেন। তিনি জানান, বাড়িতে ছেলেমেয়ে আছে। প্রতিবেশীদের নাড়– দেখে ওরা কান্নাকাটি শুরু করে। পূজার সময় আমাদের উৎসব শুরু হয়। শুধু নাড়– না, নারিকেল দিয়ে ক্ষীর ও পায়েস করা হবে।
মেসার্স মিলন এন্টারপ্রাইজের পাইকারি বিক্রেতা শহিদুল ইসলাম জানান, পূজার মৌসুমে তার নারিকেলের চাহিদা প্রায় সাত হাজার। বাজারে ডাবের দাম বেশি হলেও নারিকেলের দাম অনেকটা কম। প্রতিটি নারিকেল আকারভেদে ১৫ থেকে ২০ টাকায় বিক্রি করা হচ্ছে। আর প্রতিটি ডাবের দাম ৩৫ থেকে ৫০ টাকা। পূজার সময় বেশি বিক্রি করা হলেও অন্য সময় দিনে ১৫০ থেকে ২০০টি নারিকেল বিক্রি করা হয়।
Add Comment