সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: মশলাজাতীয় পণ্যের আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অনুকূল ট্রেডার্স। প্রতিষ্ঠানটির অবস্থান চট্টগ্রামে দেশের সবচেয়ে বড় পাইকারি বাজার খাতুনগঞ্জের নবী সুপার মার্কেটে। আর প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছেন মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক সজীব কুমার সিংহ, যিনি ব্যবসার প্রয়োজনে পূবালী ব্যাংক লিমিটেড সিডিএ করপোরেট শাখা থেকে ঋণ সুবিধা গ্রহণ করেছিলেন। কিন্তু নিয়মিত পাওনা পরিশোধের ব্যর্থতায় খেলাপি হয়ে পড়েন পূবালী ব্যাংকে। তার কাছে ব্যাংকটির মোট খেলাপি পাওনার পরিমাণ ২২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। আর এ খেলাপি পাওনা আদায়ে বন্ধকি সম্পত্তি আগামী ২২ সেপ্টেম্বর নিলামের উদ্যোগ নিয়েছে ব্যাংক।
পূবালী ব্যাংক লিমিটেড সূত্রে জানা যায়, সজীব কুমার সিংহ প্রথম দিকে ঋণের পাওনা নিয়মিত পরিশোধ করলেও সাম্প্রতিক সময়ে অনিয়মিত হয়ে পড়ে। গত ৩১ জুলাইয়ে ব্যবসায়ী সজীব কুমার সিংহয়ের মালিকানাধীন অনুকূল ট্রেডার্সের কাছে সুদাসলে ব্যাংকটির মোট খেলাপি পাওনার পরিমাণ ২২ কোটি ৩৫ লাখ ৮৭ হাজার ২৫৫ টাকা। আর এ খেলাপি পাওনা আদায়ে বেশ কয়েকবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাগাদা দিলেও সজীব কুমার সিংহ পাওনা পরিশোধে উদ্যোগ নেননি। ফলে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ অর্থঋণ আদালত আইন-২০০৩-এর ১২ ধারা অনুসারে ঋণ আদায়ে কোতোয়ালি থানার রুমঘাটায় এলাকার জমি বন্ধকিতে থাকা ২১ দশমিক ৩০ ডেসিমেল সম্পত্তি নিলামে বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছে, যা আগামী ২২ সেপ্টেম্বর সিডিএ করপোরেট শাখায় অনুষ্ঠিত হবে। এতে আগ্রহী ক্রেতারা উপস্থিত হয়ে নিলামে এসব সম্পত্তি কিনতে পারবেন।
সরেজমিনে খাতুনগঞ্জ নবী সুপার মার্কেটে গিয়ে দেখা যায়, মশলাজাতীয় পণ্যের আমদানিকারক ও পাইকারি বিক্রেতা প্রতিষ্ঠান অনুকূল ট্রেডার্স নিয়মিত ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনা করছে। তবে আগের মতো বেচাবিক্রি নেই। প্রতিষ্ঠাটির পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে সাইনবোর্ড আছে। এর মধ্যে মেঘনা ব্যাংক লিমিটেড, মেঘনা ব্যাংক সিকিউরিটিজ লিমিটেড, মেসার্স বাগদাদ ট্রেডিং কোম্পানি, মেসার্স অনুকূল ট্রেডার্স সেলফ সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট প্রভৃতি।
এ বিষয়ে পূবালী ব্যাংক লিমিটেডের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, বকেয়া পাওনা আদায়ে ঋণের বিপরীতে বন্ধকিতে জমি নিলামে বিক্রয়ের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। তার পাওনা পরিশোধের সক্ষমতা আছে। শহরে তার বিভিন্ন জায়গায় বিল্ডিং আছে, যা ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। কিন্তু তিনি ইচ্ছা করে পাওনা পরিশোধ করছেন না।
তিনি আরও বলেন, ব্যবসার নামে ঋণ নিয়ে তিনি মেঘনা ব্যাংকের পরিচালক হয়েছেন, যা ভুল সিদ্ধান্ত ছিল। তিনি এখন আরও কয়েকটা ব্যাংকের খেলাপি। কারণ ব্যবসায় সময় না দিয়ে অন্যকিছু করলে তাতে ব্যবসার ক্ষতি হয়, এটাই তার উদাহারণ। একই অবস্থা চট্টগ্রামের অন্যান্য ব্যবসায়ীদের। তারা মূলত ভালো ব্যবসায়ী নন।
জানতে চাইলে অনুকূল ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী ও মেঘনা ব্যাংক লিমিটেডের উদ্যোক্তা পরিচালক সজীব কুমার সিংহ শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি ২০১৫ সাল থেকে পূবালী ব্যাংকের সঙ্গে বিজনেস করছি। আমার এক সময়ে ৮৫ কোটি টাকা লোন ছিল। এর মধ্যে আমি বেশিরভাগ লোন শোধ করেছি। এখন ১৩ কোটির মতো পাওনা হবে। কিন্তু ব্যাংক বলছে, ২২ কোটি ৩৫ লাখ টাকার মতো। আমি ব্যাংকের পাওনা পরিশোধে আগ্রহী। এমনকি কভিডের মধ্যে আড়াই কোটি টাকা জমা দিয়েছি। আমি তাদের কাছে অনুরোধ করেছি সুদ কিছু মওকুফ করে দিয়ে তিন থেকে পাঁচ বছরের রি-শিডিউল করার জন্য। এর জন্য আমি ৭৩ লাখ টাকার চেকও জমা দিয়েছি। এর মধ্যে আমাকে খেলাপি ঘোষণা করে সম্পত্তি নিলামে তুলেছে। অথচ আমার সম্পত্তির মূল্য আরও বেশি। যখন থেকে লোন নিয়েছি তখন খালি জমি ছিল, এখন বহুতল ভবন করেছি। আমার ইচ্ছা ব্যাংকের পাওনা পরিশোধ করব। কিন্তু সুদ কমিয়ে দিতে হবে।’
