পূর্বাচলে বসতি স্থাপনে আর কত অপেক্ষা?

মাসুম বিল্লাহ জাকারিয়া পলাশ : রাজধানীর আবাসন সংকট মোকাবিলায় পূর্বাচলে নতুন শহর স্থাপনের উদ্যোগ শুরু হয়েছিল ২২ বছর আগে। ধাপে ধাপে বাড়ানো হয়েছে প্রকল্পের মেয়াদ। ২০১৮ সালের জুন মাসের মধ্যে এ প্রকল্প শেষ হওয়া কথা। কিন্তু এখনও ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়নি। স্থানীয়দের বাধাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অপসারণ সংক্রান্ত জটিলতার কারণে বেশকিছু কাজ পিছিয়ে আছে বলে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের আইএমইডির প্রারম্ভিক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে। অবশ্য অবশিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করার আশা প্রকাশ করছে গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। এজন্য নৌবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।

জানা যায়, ১৯৯৫ সালে সর্বপ্রথম পূর্বাচলে আবাসন শহর স্থাপনের জন্য ‘পূর্বাচল নতুন শহর’ প্রকল্পের শুরু হয়। ঢাকার পার্শ্ববর্তী নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ ও গাজীপুরের কালীগঞ্জ থানার অন্তর্ভুক্ত ৬ হাজার ১৫০ একর জমিতে প্রায় ৩ হাজার ৩১২ কোটি টাকা ব্যয়ে দেশের প্রথম পরিকল্পিত এ আবাসন প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। শুরুতে ওই প্রকল্পের সময়সীমা ধরা হয় ২০১০ সাল পর্যন্ত। পরে এটি সংশোধন করে ২০১৩ সালকে সমাপ্তির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়। সে সময় প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে ৭ হাজার ৭৮২ কোটি টাকা করা হয়। পরে প্রকল্পের ব্যয় বৃদ্ধি না করলেও মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৮ পর্যন্ত করা হয়। সে হিসাবে প্রকল্পটিতে আবাসন শুরুর জন্য বাকি রয়েছে ১৫ মাস। এ সময়ের মধ্যে প্রকল্পটি শেষ করা নিয়ে সংশয় তৈরি হচ্ছে।

চলতি মাসে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগ (আইএমইই) প্রকল্পের নিবিড় পরিবীক্ষণ সংক্রান্ত প্রারম্ভিক প্রতিবেদন দেয়। ওই প্রতিবেদন অনুসারে এখনও প্রকল্পটির সব জায়গায় ভূমি উন্নয়নের কাজ শেষ হয়নি। প্রতিবেদনে বলা হয়, প্রকল্পের ভূমি উন্নয়ন কাজ প্রায় ৮০ শতাংশ সমাপ্ত হয়েছে। অসম্পূর্ণ অবশিষ্ট ২০ শতাংশ এলাকায় কিছু স্থানীয় সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়। বলা হয়, ওই এলাকায় ঘরবাড়ি, বাজার, স্কুল-কলেজ, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান, বাঁধ, গাছপালা ইত্যাদি অপসারণ ও স্থানীয়দের বাধা নিরসনের কাজ করতে হবে।

কর্মপরিকল্পনা অনুসারে প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলোর মধ্যে ভূমি উন্নয়ন ছাড়াও লেক ও জলাধার উন্নয়ন, রাস্তা, ড্রেন, ব্রিজ, স্কুল ও ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান স্থাপন, লিংক রোড স্থাপন, কুড়িল ফ্লাইওভার নির্মাণ এবং বিদ্যুৎ, পানি ও গ্যাস সরবরাহের কাজ রয়েছে। এসব কাজের মধ্যে ১৩ দশমিক ১৩ কিলোমিটার দীর্ঘ লিংক রোডের এক্সপ্রেসওয়ে ও সার্ভিস রোড নির্মাণ সম্পন্ন হয়েছে। তবে ৩১৯ কিলোমিটার অভ্যন্তরীণ রাস্তার অর্ধেকের খানিকটা বেশি সম্পন্ন হয়েছে। গত অক্টোবর মাসে ১১০ কিলোমিটার নতুন রাস্তা নির্মাণের কাজ শুরু হলেও প্রায় ৫০ কিলোমিটারের কাজ বিদ্যমান সমস্যার কারণে এখনও শুরু করতে পারেনি প্রকল্প বাস্তবায়নকারী সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক)।

আইএমইডির প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, প্রকল্পের পানি ও পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা স্থাপনের জন্য প্রথমে ঢাকা ওয়াসা সম্মতি দিয়ে পরে অপারগতা প্রকাশ করে। ফলে এ কাজ পিছিয়ে যায়। এখন সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা (পিপিপি) পদ্ধতিতে বেসরকারি বিনিয়োগের মাধ্যমে পয়ঃনিষ্কাশনের ব্যবস্থা স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।

অবশ্য ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে পুরো কাজ শেষ করতে না পারলেও অধিকাংশ এলাকায় বসতি স্থাপন শুরু করা যাবে বলে আশাবাদী গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের সচিব শহীদ উল্লা খন্দকার। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, গাজীপুর অংশে একটু সমস্যা রয়েছে। বাকি এলাকায় এরই মধ্যে গৃহায়ণ শুরুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগও পাচ্ছে তারা। আশা করছি প্রকল্পের অবশিষ্ট মেয়াদের মধ্যে ৯০ শতাংশের বেশি কাজ শেষ হবে।

সূত্রমতে, প্রকল্পে পর্যায়ক্রমে ৬০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা রয়েছে। সেজন্য আটটি ব্লকের মধ্যে তিনটি ব্লকে ২০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের জন্য সরকারি-বেসরকারি সহযোগিতা (পিপিপি) পদ্ধতি গ্রহণের বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে গত সেপ্টেম্বরে। প্রকল্পে উঁচু ভবন নির্মাণের জন্য ড্রইং-ডিজাইনসহ বিভিন্ন কার্যক্রমের জন্য পরামর্শক নিয়োগেরও পরামর্শ দেওয়া হয়েছে রাজউককে।

এদিকে প্রকল্পের বিভিন্ন কার্যক্রমের মধ্যে ফ্লাইওভার নির্মাণ শেষ হলেও ব্রিজ নির্মাণকাজ পিছিয়ে রয়েছে প্রায় অর্ধেক। ৩ দশমিক ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ কুড়িল ফ্লাইওভারটি নির্মাণ শেষ হয়েছে। কিন্তু, ৬২টি ব্রিজের মধ্যে ১৮টির কাজ শেষ এবং ১৬টির কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে। প্রতিবেদন অনুসারে প্রকল্পের গাজীপুর অংশে এবং সীমানাসংলগ্ন অবশিষ্ট ব্রিজগুলো ২০১৮ সালের জুনের মধ্যে শেষ করার কর্মসূচি রয়েছে। প্রকল্পের গাজীপুর অংশের ১৫টি ব্রিজসহ অবশিষ্ট রাস্তা ও লেক উন্নয়ন কাজ বাংলাদেশ নৌবাহিনীর মাধ্যমে বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে রিপোর্টে বলা হয়। এছাড়া প্রকল্প এলাকায় ৪৮ কিলোমিটার লেক/খাল এবং ৫ দশমিক ২ কিলোমিটার নদীর তীর উন্নয়নের কাজ ছিল। এর মধ্যে নদীর তীর উন্নয়নের কাজ শেষ হলেও খালের মাত্র ২ দশমিক ৫ কিলোমিটারের কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আরও ৫ কিলোমিটারের কাজ চলমান রয়েছে। তবে, বাকি রয়েছে ৩০ কিলোমিটারের কাজ, যা অবশিষ্ট এক বছরের মধ্যে শেষ করতে বেশ বেগ পেতে হবে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০