পূর্বাচল প্রকল্প বাস্তবায়নের গতি বাড়ুক

পূর্বাচলে নতুন শহর স্থাপনের কাজে ধীরগতি সেখানে প্লট পেতে আবেদনকারীদের অপেক্ষার প্রহরই শুধু দীর্ঘায়িত করেনি, অনেকের মনে নানা প্রশ্নেরও জন্ম দিয়েছে এর মধ্যে। বস্তুত ২২ বছর আগে প্রকল্পটি নেওয়া হয়েছিল রাজধানীতে আবাসন সংকট কমানোর লক্ষ্যে। যথাসময়ে এর বাস্তবায়ন না হওয়ার প্রভাব রাজধানীর জনজীবনে যে নানাভাবে পড়েছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। বিষয়টি অবশ্য প্রকল্প বাস্তবায়নকারী প্রতিষ্ঠান রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষেরও (রাজউক) জানা। গতকালের শেয়ার বিজে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমই) এ প্রকল্প-সংক্রান্ত প্রারম্ভিক প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে কাজের অগ্রগতির যে তথ্য তুলে ধরা হয়েছে, তাতে মনে হচ্ছে বর্তমান ধারায় চলতে থাকলে বর্ধিত সময়েও প্রকল্পের কাজ শেষ করা কঠিন হবে। উল্লেখ্য, প্রথমবার বাস্তবায়নের মেয়াদ বৃদ্ধির সঙ্গে ব্যয়ও বেড়ে প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে এ প্রকল্পের। দ্বিতীয়বার মেয়াদ ২০১৮ সালের জুন পর্যন্ত বাড়ানো হলেও তখন বাজেট বাড়ানো হয়নি। সন্দেহ নেই, উল্লিখিত সময়ে কাজ শেষ না হওয়ায় তৃতীয়বার যদি মেয়াদ বৃদ্ধি করতে হয়, তাহলে বাজেটও বাড়াতে হবে। এজন্য প্রকল্পটি বাস্তবায়নের গতি বাড়ানো দরকার। যাবতীয় কাজ নির্ধারিত সময়ে শেষ করতে নেওয়া দরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ।
অবশ্য প্রকল্পের অবশিষ্ট কাজ নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই শেষ করা সম্ভব বলে আশা করছে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়। অনেকের মনে এ ব্যাপারে সংশয় থাকলেও মন্ত্রণালয়টির এমন প্রত্যাশা অবাস্তব নয়। এজন্য নৌবাহিনীর সহযোগিতা নেওয়ার উদ্যোগ গৃহীত হচ্ছে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে। এটা সদিচ্ছারও একধরনের প্রকাশ। এ অবস্থায় আমরা চাইবো, স্থানীয়দের বাধাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান অপসারণ-সংক্রান্ত যেসব জটিলতা এখনও সেখানে বিদ্যমান, সেগুলোর সমাধানেও নেওয়া হোক কার্যকর পদক্ষেপ। মনে রাখা দরকার, কোনো স্থানে আইনি জটিলতা থাকলে সেখানে প্রকল্পের কাজ এগোনো মুশকিল হবে। জানা যাচ্ছে, পর্যায়ক্রমে প্রায় ৬০ হাজার ফ্ল্যাট নির্মাণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে এ প্রকল্পে। এর ফলে আবাসন খাত ঘিরে কিছু সময়ের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড সম্পন্ন হবে। প্রশ্ন হলো, এজন্য যেসব প্রস্তুতি দরকার, তা নেওয়া হচ্ছে কি? কর্তৃপক্ষের প্রস্তুতিহীনতায় আবেদনকারীদের যেন নতুন কোনো ভোগান্তিতে পড়তে না হয়, সেটাও আমরা বিবেচনায় রাখতে বলবো সংশ্লিষ্টদের।
এটা ঠিক, নতুন ঢাকাকেও আমরা গড়ে তুলতে পারিনি পরিকল্পিত উপায়ে। বিভিন্ন সংস্থার জরিপে দেখা গেছে, ঢাকা উঠে এসেছে বিশ্বের বসবাসের অযোগ্য নগরীগুলোর তালিকায় উপরের দিকে। শুধু এ নগরীতেই যানজটের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে মোট জাতীয় আয়ের প্রায় তিন শতাংশ। এর প্রভাব নানাভাবে পড়ছে জনস্বাস্থ্যেও। এজন্য নতুন আবাসিক এলাকাগুলোকে পরিকল্পিত উপায়ে গড়ে তোলা দরকার। তাহলে বহু কষ্টে অর্জিত অর্থে গড়া স্বপ্নের আবাস অধিবাসীদের জন্য ‘সমস্যা’ হয়ে দাঁড়াবে না। সবুজের অভাব রাজধানীতে প্রকট হয়ে উঠছে দিন দিন। হারিয়ে যাচ্ছে খেলার মাঠ। রাজধানীর বিদ্যমান এসব সমস্যা নতুন এ আবাসিক প্রকল্পে যেন না থাকে, সেটা আমরা চাই।
বাস্তবতা হলো, পূর্বাচলে বসতি স্থাপন শুরু হলে ঢাকা থেকে বেশকিছু মানুষ চলে যাবে ওখানে। বিদ্যমান অবস্থায় অফিসের জন্য তাদের প্রতিদিন আসতে হবে রাজধানীতে। ফলে নগরীতে চলাচলের চাপ খুব একটা কমবে না। এজন্য নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে কিছু সরকারি দফতর স্থানান্তর দরকার। তাতে ওই আবাসিক এলাকার অধিবাসীদের অফিস করতে যেমন সুবিধা হবে, তেমনি কিছুটা চাপমুক্ত হবে রাজধানী। পূর্বাচল আবাসিক প্রকল্পের বাস্তবায়ন ঘিরে এসব বিষয়ও বিবেচনায় রাখা হোক। এটির বাস্তবায়ন হলে রাজধানীতে আবাসন সংকটের কিছুটা সমাধান হয়তো হবে; কিন্তু তা যেন কর্মজীবী মানুষের জীবনে নতুন কোনো সংকট সৃষ্টি না করে, সে ব্যাপারে যথাযথ পরিকল্পনাও আমরা চাই।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০