নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম: ক্ষুদ্রঋণ প্রদানে নিয়োজিত এনজিওদের সুদের হার নির্ধারণ করে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংকের অধীনে মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি। কিন্তু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার নির্ধারণ করেন তারা নিজেরাই। হঠাৎ করে বেশ কিছু ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো কারণ ছাড়াই অনেকটা তরকারি, চাল-ডালের ব্যবসায়ীদের মতো সুদের হার বাড়িয়ে দিয়েছেন। আর হঠাৎ করে এভাবে সুদের হার বাড়িয়ে দেওয়ার ফলে ক্ষুদ্র, মাঝারি ও প্রান্তিক গ্রাহকরা পড়েছেন বিপাকে।
বিনা কারণে ও কোনো প্রকার পূর্বানুমতি ছাড়াই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার বাড়ানোর প্রতিবাদে গতকাল এক বিবৃতিতে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম নগর ও বিভাগীয় নেতারা উপরোক্ত দাবি জানান।
নেতারা বলেন, সুদের হার বাড়ার কারণে জীবনযাত্রার ব্যয় বাড়বে। যার সর্বশেষ দায়ভার গিয়ে পড়বে সাধারণ জনগণের ওপর। তাই ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সুদের হার বাড়িয়ে নাগরিক জীবনে বিড়ম্বনা সৃষ্টির পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাংলাদেশ ব্যাংক নীরব দর্শকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর এ ধরনের আচরণ বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের জাতীয় প্রতিনিধিত্বকারী এ সংগঠন।
বিবৃতিতে ক্যাব নেতারা বলেন, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের একশ্রেণির পরিচালনা পর্ষদ ও কর্মকর্তাদের যোগসাজশে গুটিকয়েক বড় ব্যবসায়ী নামধারী লুটেরাদের অনিয়ম, পুকুরচুরির কারণে দেশের ব্যাংকিং সেক্টর পুরোপুরি ধ্বংসের ধারপ্রান্তে। অনেক ব্যাংক দেউলিয়া প্রায়। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো কিছু মুষ্টিমেয় অসাধু চক্রকে বিশাল আকারে ঋণ মঞ্জুরি, ঋণ পুনঃতফসিলিকরণ এবং ঋণের সুদ মওকুফ করলেও ক্ষুদ্র গ্রাহকদের বেলায় তার উল্টো চিত্র। অপেক্ষাকৃত ক্ষুদ গ্রাহকদের ঋণ পাওয়া খুবই কঠিন ও সুদের হারও অনেক বেশি। ব্যাংক কর্তৃপক্ষ বড় গ্রাহকের ঋণ মওকুফে বেশ আগ্রহী হলেও ক্ষুদ্র গ্রাহকের ঋণ মওকুফ বা তাদের কোনো প্রকার ছাড় দিতে নারাজ। ফলে প্রান্তিক উদ্যোক্তারা ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণের সুদ পরিশোধে প্রায় নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে। আর গুটিকয়েক বড় গ্রাহক কোনো প্রকার ডকুমেন্টস ও সিকিউরিটি ছাড়াই কোটি কোটি টাকার ঋণ নিয়ে ব্যাংককে ফতুর করে দিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও সরকার এ বিষয়ে কোনো প্রকার পদক্ষেপ না নিয়ে ক্ষুদ্র গ্রাহকের ওপর খ গ চালাতে মরিয়া। এটা খুবই অগণতান্ত্রিক ও ব্যাংকিং ক্ষেত্রে সুশাসনের পুরোপুরি পরিপন্থী। কারণ একটি ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সিংহভাগ গ্রাহকই ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক। কিন্তু যাবতীয় সুবিধাগুলো গুটিকয়েক বড় গ্রাহককে ঘিরে। প্রান্তিক গ্রাহকগুলোকে শোষণ করার এই নীতি অনুসরণ করে চলেছে। সে কারণে প্রান্তিক ও মাঝারি গ্রাহকরা ব্যাংকের সুদ বহন করতে না পেরে তাদের ব্যবসা-বাণিজ্য গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন। আর এই ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারাই দেশের অর্থনীতির প্রাণ। তাদের অবদানে বাংলাদেশ আজ এলডিসি থেকে উন্নয়নশীল দেশের কাতারে পরিগণিত হতে যাচ্ছে। আর এ সোনার কারিগরদের রক্ত চুষে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কিছু মালিক ও কর্মকর্তারা টাকার পাহাড় গড়ছেন, যা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।
নেতারা আরও ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীকে সুবিধা প্রদানের জন্য দেশের যাবতীয় নীতি তৈরি হয়। সে কারণে দেশের ১৬ কোটি মানুষের স্বার্থ সব সময় উপেক্ষিত থাকে। ব্যাংকিং আইন পরিবর্তন তার একটি বড় নজির। আর বড় ঋণখেলাপি ও ঋণগ্রহীতাদের সুবিধা দেওয়ার জন্য যাবতীয় আয়োজন ব্যাংকগুলো করলেও ক্ষুদ্র ও প্রান্তিক গ্রাহকদের বেলায় সব নিয়মনীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়, যা শুধু দুঃখজনক নয়, সীমাহীন নৈরাজ্য ও লুটপাটের বহিঃপ্রকাশ। যার কারণে আজ ব্যাংকিং সেক্টরে সুশাসন সোনার হরিণে পরিণত হয়েছে।
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন ক্যাব কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট এসএম নাজের হোসাইন, ক্যাব চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাধারণ সম্পাদক কাজী ইকবাল বাহার ছাবেরী, ক্যাব মহানগর সাধারণ সম্পাদক অজয় মিত্র শংকু, দক্ষিণ জেলা সভাপতি আলহাজ আবদুল মান্নান প্রমুখ।