পবিত্র রমজান মাস শুরুর আগেই আরেক দফা বেড়েছে বেশ কিছু নিত্যপণ্যের দাম। এই মূল্যবৃদ্ধির জন্য চারটি কারণ চিহ্নিত করেছেন ব্যবসায়ীরা। সেগুলো হলো ডলার-সংকট ও এর বাড়তি দাম, চাঁদাবাজি, সংঘবদ্ধ চক্র বা সিন্ডিকেট এবং উচ্চ শুল্ক।
অবশ্য পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে ব্যবসায়ীদের যে ‘দায়িত্ব-কর্তব্য’ রয়েছে সেটিও স্মরণ করিয়ে দেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই সভাপতি। তার ভাষায়Ñদিন শেষে একটা কথা আছে, ব্যবসায়ীরা অতি মুনাফা করেন এই অতি মুনাফা ও মজুতদারি থেকে বেরিয়ে আসতে ব্যবসায়ীদের মানসিকতা পরিবর্তন করতে হবে।
নিত্যপণ্যের মূল্যবৃদ্ধির জন্য ব্যবসায়ীরা যে চার কারণের কথা বলেন, সেটি সমাধানে তারা যেমন এককভাবে ব্যবস্থা নেতে পারেন না; তেমনই সরকারও পারে না বলেই আমরা মনে করি। কিন্তু উভয়পক্ষ নৈতিকতা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে নিজ কর্তব্য পালন করছে কি নাÑসেটিই বড় প্রশ্ন।
চাঁদাবাজি হয় রাজনৈতিক পরিচয়ে, সিন্ডিকেট করেন ব্যবসায়ীরা। চাঁদাবাজি বন্ধে সুশাসন ও সুস্পষ্ট রাজনৈতিক অঙ্গীকার প্রয়োজন। আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করা গেলে শূন্য সহনশীলতায় চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটের কারসাজি চিহ্নিত এবং তা দমন করা সম্ভব। পরিবহনসহ বিভিন্ন পর্যায়ে চাঁদাবাজির কারণে সবজি থেকে শুরু করে সব ধরনের পণ্যের দাম বাড়ছে। সিন্ডিকেটের কারণে ব্রয়লার ও গরুর মাংসের দাম কমছে না। উচ্চ শুল্কের কারণে আকাশচুম্বী হয়েছে চিনি ও খেজুরের দাম।
সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণে আইন সংস্কার করে ছোট ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের উৎপাদন এবং পণ্য সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত করতে পারলে একচেটিয়া ব্যবসার অবসান ঘটতে পারে। এখন বড় শিল্পগোষ্ঠী মুড়ি, মসলা, বেকারি পণ্য, ডিমের ব্যবসা করছে। একসময় এগুলো ছিল কম পুঁজির ব্যবসা। প্রতি বছরই ‘রমজানে নিত্যপণ্যের উৎপাদন, আমদানি, মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে’ মতবিনিময় সভা করে নিত্যপণ্যের ব্যবসার সঙ্গে যুক্ত সাধারণ ব্যবসায়ীরা। তারা রমজান মাসে সংযম ও পরিমিতিবোধের সঙ্গে ব্যবসা করার আহ্বান জানান। এবারও তারা বলেছেন, কোনো ব্যবসায়ী পণ্যের বেশি দাম রাখবেন না। অন্যদিকে সংসদে প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন, রমজানে দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে।
ব্যবসায়ীদের অভিযোগ ও সমস্যা সমাধানেও ব্যবস্থার নিতে হবে। বুধবার ব্যবসায়ীদের সভায় রাজধানীর কাপ্তান বাজারের ব্যবসায়ী নেতা ব্রয়লার মুরগির বাড়তি দামের জন্য সিন্ডিকেটকে দায়ী করেন। ব্যবসায়ীরা কীভাবে নিজেদের মতো করে দাম নির্ধারণ করেন, মুরগির দাম বাড়িয়ে দেন; সে বিষয়ে উদাহরণ দিয়ে কথা বলেছেন তিনি। এর পরিপ্রেক্ষিতে এফবিসিসিআই সভাপতি সব পাইকারি বাজারে মূল্যতালিকা টাঙাতে নির্দেশ দিয়েছেন। পথে পথে চাঁদাবাজির জন্য ব্যবসায়ীরা দাম বাড়াতে বাধ্য হন এটি যেমন সত্য, তেমনি এও সত্য ব্যবসায়ীরা পণ্য মজুত করেন বেশি দামি বিক্রির জন্য। অভিযান শুরু হলে পণ্য ভাগাড়ে কিংবা সড়কে চুপিসারে ফেলে দেন। তাই নৈতিকতা মেনে ব্যবসা করতে হবে। ভোগ্যপণ্যে এস আলম, সিটি, মেঘনা, দেশবন্ধু, পারটেক্স টিকে, আব্দুল মোনেম প্রভৃতি বড় শিল্পগোষ্ঠীকে বাইরে রেখে কোনো সিন্ডিকেট হতে পারে না। তাই তাদের দায়িত্ব আছে বাজার স্থিতিশীল রাখার। নিত্যপণ্যের পর্যাপ্ত মজুত আছে; কিন্তু সরবরাহ ব্যবস্থায় ত্রুটির জন্য সুফল পাবে না, সাধারণ মানুষ; এটি দুঃখজনক। তাই সরবরাহ শৃঙ্খলের প্রতি ধাপে স্বচ্ছতা ও জাবাবদিহি প্রতিষ্ঠা করতে হবে।