Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 8:48 pm

পেঁয়াজের বাজার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর ব্যবস্থা নিন

কোনো বিশেষ পণ্যের জন্য কোনো একক দেশের ওপর নির্ভরতায় দেশের ভোক্তাসাধারণ বড় বিড়ম্বনায় পড়েন। এমন ঘটনা বারবার ঘটার পরও আমরা বিশেষ দেশের ওপর নির্ভরতা থেকে বেরিয়ে আসতে পারিনি। গতকাল দেশের গণমাধ্যমের একটি সাধারণ খবর ছিল পেঁয়াজের দাম।

আগামী বছরের ৩১ মার্চ পর্যন্ত ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ রাখবে। আর এ ঘোষণার সঙ্গেই আমাদের দেশে পেঁয়াজের দাম বেড়ে গেছে। রাজধানীর কারওয়ান বাজারের পাইকারি দোকানগুলোয় গতকাল বেলা ২টায় প্রতি কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৮০ থেকে ৮৫ টাকায়। ভারত রপ্তানি বন্ধ করার খবরেই ভারতের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ১৩০ থেকে ১৪০ টাকায়। অনেকের মনে আছে, ভারতের বৈদেশিক বাণিজ্য অধিদপ্তর ২০১৯ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর পেঁয়াজের সর্বনি¤œ রপ্তানি মূল্য প্রতি টন ৮৫০ ডলার বেঁধে দিয়ে আদেশ জারি করার খবরে কম দামে আনা পেঁয়াজও চড়া দামে বিক্রি করতে শুরু করেন আমাদের ব্যবসায়ীরা। পরবর্তী সময়ে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেয় ভারত। এতে দাম বাড়ে আরেক দফা। দাম বৃদ্ধি ঠেকাতে ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বৈঠক করে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। এরপরও দাম কমেনি বরং এক দিনে তিনবার দাম বাড়ার দৃষ্টান্তও রয়েছে।

একদিকে পেঁয়াজের জন্য একক দেশের ওপর নির্ভরতা এবং অন্যদিকে সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণেও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে না পারায় আমাদের দেশের সাধারণ মানুষ বড় বিপাকে পড়ে। সমাজে সচ্ছল বলে পরিচিতরাও লাইনে দাঁড়িয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) ট্রাক থেকে পেঁয়াজ কিনতে হয়েছে। এরপর মিয়ানমারসহ কয়েকটি দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি শুরু হলে দাম কিছুটা কমলেও কেজি ৭০ টাকার নিচে নামেনি। পেঁয়াজের চড়া দামে সীমিত ও নিম্ন আয়ের সাধারণ মানুষ পণ্যটি খাওয়া কমিয়ে দেন। খোদ প্রধানমন্ত্রীও রাঁধুনিকে বলেছেন, তরকারিতে পেঁয়াজ কমিয়ে দিতে।

এবারও একই অবস্থা! দেশে নতুন মৌসুমের পেঁয়াজ উঠতে বাকি আরও কয়েক মাস। দাম কমার কোনো সম্ভাবনা নেই। এর আগে পেঁয়াজের চাহিদা মেটাতে বিকল্প উৎস থেকে আমদানি বাড়াতে হবে। কেউ মজুত করে নিত্যপণ্যের কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে কি না, সেটি খতিয়ে দেখা উচিত। প্রয়োজনে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করা যেতে পারে। এর আগেও আমরা দেখেছি, এমন অবস্থার সুযোগ নেয় একশ্রেণির ব্যবসায়ী। একসময় মজুত পেঁয়াজ পচেও যায়। সেই পেঁয়াজ চুপিসারে মহাসড়েকের পাশে ফেলে যেতে বাধ্য হয় মজুতদাররা। পেঁয়াজ, রসুন, মসুর ডাল, ছোলা সব ধরনের মসলা ও খাবার লবণ অত্যাবশ্যকীয় পণ্য। এসব পণ্যের আন্তর্জাতিক ও স্থানীয় মূল্য পর্যালোচনাপূর্বক ট্যারিফ কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা নিলে এসব পণ্যের বাজারে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলেই আমরা মনে করি। মজুতদারদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা ও তদারকির পাশাপাশি প্রশাসনকে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে। সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর সমন্বিত উদ্যোগে পেঁয়াজের বাজার অস্থিতিশীলতা মুক্ত রাখা সম্ভব।