Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 9:59 pm

পেঁয়াজ আমদানির খবরে কমছে দাম

শেয়ার বিজ ডেস্ক: সরকার পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দেয়ার খবরে দেশের পাইকারি বাজারে পেঁয়াজের দাম দ্রুত কমছে। ঢাকার শ্যামবাজার ও কারওয়ান বাজার এবং চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গতকাল সোমবার খোঁজ নিয়ে জানা যায়, দেশি পেঁয়াজের কেজিপ্রতি দর ২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে।

কৃষি মন্ত্রণালয় গত রোববার জানায়, পেঁয়াজ আমদানি অনুমতি দেয়া শুরু করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উদ্ভিদ সঙ্গনিরোধ শাখা। এরপরই পাইকারি বাজারে দাম কমতে শুরু করে। ভারতীয় পেঁয়াজ এলে দাম আরও অনেকটা কমে যাবে বলে দাবি করছেন ব্যবসায়ীরা। কারণ, ভারতে পেঁয়াজের দাম অনেক কম।

পুরান ঢাকার মসলাজাতীয় পণ্যের পাইকারি ব্যবসাকেন্দ্র শ্যামবাজারের নবীন ট্রেডার্সের মালিক নারায়ণ চন্দ্র সাহা বলেন, আগের দিন যে পেঁয়াজ কেজিপ্রতি ৮৫ টাকা পর্যন্ত দরে বিক্রি হয়েছে, সেটা কমতে কমতে নেমেছে ৬৫ টাকায়।

শ্যামবাজারে পেঁয়াজের দামে সাধারণত দ্রুত ওঠানামা হয়। অন্য বাজারে প্রভাব পড়ে একটু দেরিতে। কারওয়ান বাজারের আড়তে ঘুরে গতকাল দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে দেখা যায়, কোনো কোনো দোকানে ৫ কেজি কেনার ক্ষেত্রে কেজিপ্রতি দর ৯২ টাকা, কোথাও ৮৬ টাকা, কোথাও ৮২ টাকা এবং কোথাও ৮০ টাকা চাইছেন বিক্রেতারা।

দামের এত হেরফের কেন, তা জানতে চাইলে একজন বিক্রেতা বলেন, বাজার যখন অস্থির হয়, তখন এই অবস্থা হয়। ভারত থেকে পেঁয়াজ আসবে বলে কেউ কেউ কম দামে ছেড়ে দিচ্ছেন।

কারওয়ান বাজার ঘুরে দেশি পেঁয়াজই দেখা গেল। বাছাই করা দেশি পেঁয়াজ বিক্রি করছিলেন সম্পদ আলী নামের এক বিক্রেতা। তিনি বলেন, সকালে দাম কেজিপ্রতি ৬ টাকা কমেছে। ভারতের পেঁয়াজ নাকি আসছে। এই খবরে বাজার পড়তি।

চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে গতকাল দিনের শুরুতেই প্রতিকেজি পেঁয়াজ ৭৫ টাকায় বিক্রি হয়। তবে দাম কমার পরও পেঁয়াজের ক্রেতা মিলছে না। মূলত ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানির খবরেই আড়তে দাম কমে গেছে। কিন্তু দাম আরও কমে যাবে এ শঙ্কায় খুচরা ব্যবসায়ীরা আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনতে চাইছেন না। এর ফলে যেই দাম দেয়াই হোক পাইকারি বাজারে ক্রেতা মিলছে না। কারণ আড়ত থেকে পেঁয়াজ কেনে মূলত খুচরা ব্যবসায়ীরা। গতকালও ৯০ থেকে ৯৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হয় খাতুনগঞ্জে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের চকবাজারের খুচরা ব্যবসায়ী  আবদুর রহমান বলেন, ‘এখনই আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনলে আমি খুচরা ক্রেতা হারাবো নিশ্চিত। কারণ এখন বাড়তি দামে কিনে বিক্রি করতে গেলে দাম বেশি পড়বে। চিন্তা করছি কয়েকদিন দেখেই আড়ত থেকে পেঁয়াজ কিনব।’ তিনি বলেন, ‘পেঁয়াজ ৪০ থেকে যখন ৯০ টাকায় পৌঁছল, এরপর থেকেই আড়ত থেকে বেশি পেঁয়াজ কিনে রাখার সুযোগ নেই। কারণ পেঁয়াজ পচনশীল পণ্য। সেগুলো জমিয়ে রাখলে আমাদেরই ক্ষতি। আর দাম বাড়ার পর পেঁয়াজ কিনতে বেশি পুঁজি খাটাতে হচ্ছে কিন্তু লাভ সীমিত।’

ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশে উৎপাদন ভালো হলে মোট চাহিদার ৭০ শতাংশ পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। বাকি ৩০ শতাংশ আমদানি করতে হয়। অবশ্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের হিসাবে, দেশের চাহিদার চেয়ে বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়। উৎপাদনের পরিমাণ ৩৫ লাখ টন।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাবে, পেঁয়াজের উৎপাদন আরও কম। সংস্থাটি বলছে, ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৫ লাখ টনের কিছু বেশি পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছে।

এদিকে ঘোষণার প্রথম দিনে ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি দিয়েছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। গতকাল সোমবার কৃষি মন্ত্রণালয় থেকে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

এতে বলা হয়, সোমবার সকাল থেকেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি আবেদন অনুমোদন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রথম দিনে এখন পর্যন্ত ২১০টি আইপি আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। এতে পেঁয়াজের পরিমাণ ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন।

গতকাল সোমবার সকাল থেকেই পেঁয়াজ আমদানির অনুমতি বা আইপি আবেদন অনুমোদন করছে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর। প্রথম দিনে এখন পর্যন্ত ২১০টি আইপি আবেদন অনুমোদন করা হয়েছে। এতে পেঁয়াজের পরিমাণ ২ লাখ ৮০ হাজার ৮০০ টন।