নিজস্ব প্রতিবেদক: পেঁয়াজ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হোন, প্রয়োজনের অতিরিক্ত পেঁয়াজ কিনবেন না। আগামী ১০ দিন ভোক্তা পেঁয়াজ কেনা বন্ধ রাখলে এমনিতেই দাম কমে আসবে। বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি গতকাল বাংলাদেশ সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কনফারেন্স রুমে পেঁয়াজের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে সাংবাদিকদের ব্রিফিং করার সময় এসব কথা বলেন।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, দেশে বর্তমানে প্রায় ছয় লাখ টন পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন দেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মাধ্যমে বিপুল পরিমাণ পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। ভারত থেকে এলসির মাধ্যমে ক্রয়কৃত পেঁয়াজ যেগুলো সীমান্ত পার হওয়ার অপেক্ষায় আছে, সেগুলো দু’একদিনের মধ্যে বাংলাদেশে প্রবেশ করবে বলে জানা গেছে। তুরস্ক ও মিসর থেকে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানি করা হচ্ছে। অল্পদিনের মধ্যে এগুলো দেশে পৌঁছাবে। টিসিবি এবার বড় ধরনের পেঁয়াজের মজুত গড়ে তোলার পরিকল্পনা হাতে নিয়েছে। ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের আগেই আন্তর্জাতিক টেন্ডারের মাধ্যমে এগুলো ক্রয় করা হয়েছিল। ই-কমার্সের মাধ্যমে পেঁয়াজ বিক্রয়ের উদ্যোগ নিয়েছে টিসিবি। আগামী এক মাসের মধ্যে পেঁয়াজের বাজার স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসবে। ভোক্তারা পেঁয়াজ ব্যবহারে একটু সাশ্রয়ী হলে কোনো সমস্যা হবে না।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও বলেন, গত বছরের তুলনায় দেশে এবার প্রায় এক লাখ টন পেঁয়াজ দেশে বেশি উৎপাদিত হয়েছে। আগে থেকেই পেঁয়াজের আন্তর্জাতিক বাজারের প্রতি নজর রাখা হচ্ছিল। সে কারণে টিসিবির মাধ্যমে পেঁয়াজ আমদানির ব্যবস্থা করা হয়। বাজারে দাম বেড়ে যাওয়ায় গত ১৩ সেপ্টেম্বর থেকে প্রতি কেজি ৩০ টাকা মূল্যে দেশব্যাপী খোলা বাজারে বিক্রয় শুরু করা হয়। তা আগামী বছর মার্চ পর্যন্ত অব্যাহত থাকবে।
পেঁয়াজের চাহিদা পূরণে এবং দাম নিয়ন্ত্রণে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা টিসিবিতে দরপত্র ছাড়াই দ্রুত সময়ের মধ্যে সরাসরি আমদানির নির্দেশ দিয়েছেন। এজন্য টিসিবি এক লাখ টন পেঁয়াজ আমদানির প্রক্রিয়া শুরু করেছে। এছাড়া মিসর, মিয়ানমার, চীন, তুরস্ক ও পাকিস্তান থেকে পেঁয়াজ আমদানি প্রক্রিয়া চলছে বলে জানান তিনি।
টিপু মুনশি বলেন, পেঁয়াজের মজুত, সরবরাহ ও মূল্য স্বাভাবিক রাখতে সরকার সব ধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের পাশাপাশি জেলা প্রশাসন বাজার মনিটরিং জোরদার করেছে। পেঁয়াজ রপ্তানির ওপর আরোপিত নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের বিষয়ে ভারত সরকারের সঙ্গে কূটনৈতিক মাধ্যমে জরুরি ভিত্তিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। গত বছরের মতো অন্যান্য দেশ থেকে বাংলাদেশের সিটি, মেঘনা ও এস আলম গ্রুপ এবারও প্রয়োজনীয় পেঁয়াজ আমদানি করবে। পেঁয়াজ সরবরাহে কোনো ঘাটতি হবে না। পেঁয়াজ নিয়ে অস্থির হওয়াব কোনো কারণ নেই।
এ সময় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. মো. জাফর উদ্দীন, অতিরিক্ত সচিব শরিফা খান, অতিরিক্ত সচিব (রপ্তানি) মো. ওবায়দুল আজম, জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক বাবলু কুমার সাহা, ট্রেডিং করপোরেশন অফ বাংলাদেশের (টিসিবি) চেয়ারম্যান ব্রি. জে. মো. আরিফুল হাসান উপস্থিত ছিলেন।
গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয় ভারত। আর এতে দেশে পণ্যটির মূল্য অস্বাভাবিক বেড়ে যায়। খুচরা বাজারের ৬০ থেকে ৭০ টাকার পেঁয়াজ ৯০ থেকে ১১০ টাকা ওঠে যায়। আর ভোক্তারাও অস্বাভাবিক পরিমাণ পেঁয়াজ কেনা শুরু করেন।
বাণিজ্য মন্ত্রণালয় জানায়, কৃষি বিভাগের তথ্য অনুযায়ী দেশে বছরে পেঁয়াজের চাহিদা রয়েছে ২৫ লাখ টন। দেশে উৎপাদন হয় ২৫ লাখ ৫৭ হাজার টন। পেঁয়াজ পচনশীল হওয়ায় ২৫ শতাংশ নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ছলতি মৌসুমে পেঁয়াজের প্রকৃত উৎপাদন ছিল ১৯ লাখ ১১ হাজার টন। গত বছর পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল চার লাখ ৯৫ হাজার টন। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে দেশে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছিল ১০ লাখ ৯১ হাজার টন। গত জুলাই ও আগস্টে পেঁয়াজ আমদানি হয়েছে এক লাখ ৮৪ হাজার ৫৬২ টন।