দাম বাড়ছে ঘণ্টায় ঘণ্টায়

পেঁয়াজ নিয়ে আবারও কারসাজির চেষ্টা

আয়নাল হোসেন: পেঁয়াজ নিয়ে আবারও কারসাজির চেষ্টা করা হচ্ছে। গতকাল ঘণ্টায় ঘণ্টায় বেড়েছে পণ্যটির দাম। গতকাল সকাল থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত দেশি পেঁয়াজে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে সর্বোচ্চ ৯ টাকা। দাম বাড়ার কারণ হিসেবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি কম এবং সে দেশে মূল্য বৃদ্ধিকে দায়ী করছেন ব্যবসায়ীরা।

রাজধানীর শ্যামবাজারের আজমীরি ভাণ্ডারের বিক্রয় প্রতিনিধি গোলাপ হোসেন জানান, গতকাল সকালে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪২ থেকে ৪৩ টাকা। আর বিকালে তা বেড়ে হয়েছে ৫০ থেকে ৫২ টাকা। অর্থাৎ কয়েক ঘণ্টার ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে আট থেকে ৯ টাকা। এক সপ্তাহ আগে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৩০ থেকে ৩২ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ২০ টাকা।

এদিকে গতকাল সকালে ভারতীয় পেঁয়াজ প্রতি কেজির দাম ছিল ৩২ থেকে ৩৩ টাকা। বিকালে তা বিক্রি হয় ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা। অর্থাৎ ভারতীয় পেঁয়াজে দাম বাড়ে কেজিপ্রতি তিন টাকা। এক সপ্তাহ আগে এ পেঁয়াজের মূল্য ছিল ১৮ থেকে ১৯ টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ১৭ টাকা।

পেঁয়াজ উৎপাদনকারী, আমদানিকারক, পাইকার ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের কোনো সংকট নেই। পর্যাপ্ত পরিমাণে দেশি জাতের পেঁয়াজ বিভিন্ন স্থানে মজুত রয়েছে। অনেক মৌসুমি ব্যবসায়ীর কাছেও পেঁয়াজ মজুত রয়েছে। ভারত থেকে আমদানি কমে যাওয়া এবং সেখানে মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ার সুযোগ নিচ্ছেন দেশের ব্যবসায়ীরা। তবে এই মূল্য বেশি দিন স্থায়ী থাকবে না বলে তারা মনে করছেন।

করোনাভাইরাসের কারণে মানুষের আয়-রোজগার কমে যাওয়ায় ক্রয়ক্ষমতাও কমে গেছে। এ অবস্থায় পেঁয়াজ, চাল ও ভোজ্যতেলসহ বিভিন্ন পণ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় উদ্বেগ প্রকাশ করছে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজিউমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)। সংগঠনের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, করোনার কারণে সব শ্রেণি-পেশার মানুষের আয় কমে গেছে। অথচ এখন বিভিন্ন পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় মানুষের কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে। মানুষের ক্রয়ক্ষমতা যাতে বাড়ে সেদিকে সরকারের নজর দেওয়া উচিত বলে তিনি মনে করেন।   

রাষ্ট্রায়ত্ত বিপণন সংস্থা ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) হিসাব অনুযায়ী, এক মাস আগে প্রতিকেজি দেশি পেঁয়াজের দাম ছিল ৪০ থেকে ৪৫ টাকা। গতকাল বৃহস্পতিবার তা বিক্রি হয়েছে ৪৫ থেকে ৫৫ টাকা। এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি শতকরা দাম বেড়েছে ১৭ দশািমক ৬৫ শতাংশ। আর এক মাস আগে প্রতিকেজি বিদেশি পেঁঁয়াজের দাম ছিল ২৫ থেকে ৩০ টাকা। গতকাল তা বিক্রি হয়েছে ৪০ থেকে ৪৫ টাকায়। অর্থাৎ এক মাসের ব্যবধানে কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫৪ দশমিক ৫৫ শতাংশ।

হঠাৎ পেঁয়াজের দাম বৃদ্ধির কারণ জানতে চাইলে আমদানিকারকদের সহযোগী প্রতিষ্ঠান সি-বার্ড ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী রতন সাহা শেয়ার বিজকে বলেন, ভারতে অতি বৃষ্টির কারণে উত্তর প্রদেশ থেকে পেঁয়াজ আমদানি কম হচ্ছে। সেখানেই কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে সাত থেকে আট টাকা। বর্তমানে পেঁয়াজের বুকিং রয়েছে ২৫০ থেকে ২৬০ ডলার। ভারত থেকে ট্রাকে করে সীমান্তে পৌঁছানো, সীমান্ত থেকে গন্তব্যে পৌঁছানো কাস্টমস ডিউটি ও অন্যান্য খরচ হিসাব করলে কেজিপ্রতি ব্যয় হয় ১০ থেকে ১২ টাকা পর্যন্ত।

দেশে বর্তমানে পেঁয়াজের সংকট নেই বলে জানিয়েছেন পাবনার সুজানগর এলাকার কৃষক এসএম মামুন হোসাইন। তিনি জানান, গত বছর ভালো দাম পাওয়ায় অনেকেই পেঁয়াজ আবাদ করেছেন। তবে ভারতীয় পেঁয়াজ আমদানি কম হওয়ায় দেশে দাম বেড়েছে। এক সপ্তাহ আগে প্রতিমণ (৪০ কেজি) পেঁয়াজের দাম ছিল এক হাজার ২০০ থেকে এক হাজার ৩০০ টাকা। এ হিসেবে প্রতি কেজির দাম পড়ে ৩০ টাকা থেকে ৩২ টাকা ৫০ পয়সা। গতকাল তা এক হাজার ৯০০ থেকে দুই হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। এ হিসেবে প্রতিকেজির দাম পড়ে ৪৭ টাকা ৫০ পয়সা থেকে ৫০ টাকা।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, ভারতে বন্যা ও বৃষ্টির কারণে সেখানে দাম বেড়েছে, যার প্রভাব দেশের বাজারে পড়েছে। এ বিষয়টি তারা নিয়মিত তদারকি করছেন। এরই মধ্যে দেশের বিভিন্ন জেলায় প্রশাসন তদারকি চালাচ্ছে। তবে পেঁয়াজের দাম গত বছরের মতো হওয়ার সম্ভাবনা নেই। অচিরেই মূল্য কমে আসবে বলে জানান তিনি। 

উল্লেখ্য, গত বছরের ২৯ সেপ্টেম্বর ভারত সরকার হঠাৎ করে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দেয়। আর দেশের বাজারে দফায় দফায় বাড়তে থাকে দাম। এক দিনেই পেঁয়াজের দাম কেজিতে বাড়ে ৫০-৬০ টাকা। এভাবে দাম বাড়তে বাড়তে প্রতিকেজি পেঁয়াজের মূল্য ২৬০ টাকা পর্যন্ত ওঠে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় দেশের বিভিন্ন বাজারে অভিযান চালিয়ে ব্যবসায়ীদের জরিমানা করে। সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ভারত ছাড়াও পাকিস্তান, চীন, মিশর, মিয়ানমার, ভিয়েতনামসহ বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানির সুযোগ করে দেয়। পরে সরকারের অনুরোধে দেশের তিনটি বড় শিল্পপ্রতিষ্ঠানকে পেঁয়াজ আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়। পরে তারা কার্গো উড়োজাহাজে পেঁয়াজ আমদানি করে। এর পরও সরকার বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়। এদিকে দেশের কৃষক যাতে দাম ভালো পান সেজন্য বাজেটে পেঁয়াজ আমদানির ওপর পাঁচ শতাংশ ট্যাক্স ধার্য করে সরকার।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০