নিজস্ব প্রতিবেদক: ভারত থেকে পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের এক মাস আগে বাংলাদেশকে নোটিস দেওয়ার অনুরোধ জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল সচিবালয়ে নবনিযুক্ত ভারতের হাইকমিশনার বিক্রম কুমার দোরাইস্বামীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে মন্ত্রী সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।
হাইকমিশনারের সঙ্গে আলোচনার বিষয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের একটাই উদ্দেশ্য, আগামী তিন বছরের মধ্যে যেন পেঁয়াজে স্বয়ংসম্পূর্ণ হই। ভারত তাদের লোককে না খাইয়ে আমাদের দেবে না। তারপরও ভারতের কাছে আমাদের যেটা দাবি, রপ্তানি বন্ধের নোটিস যদি আমরা এক মাস আগে পাই, তাহলে আমরা অন্যান্য দেশ থেকে আমদানি করার সুযোগটা পাব।’
মন্ত্রী বলেন, ‘হঠাৎ বন্ধ করে দেওয়াটা সমস্যা তৈরি করে। তাই আমি হাইকমিশনারের কাছে অনুরোধ জানাচ্ছি যে, রপ্তানি বন্ধের এক মাস আগে যেন আমাদের নোটিস দেওয়া হয়। ৩০ দিন আগে জানালে বিকল্প বাজার থেকে আনতে সুবিধা হয়।’
উল্লেখ্য, গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভারত পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধের ঘোষণা দেওয়ার পর থেকেই বাংলাদেশে চড়তে থাকে নিত্য প্রয়োজনীয় এই পণ্যটির দাম।
অভ্যন্তরীণ বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও মজুতে ঘাটতির কারণে গত বছর সেপ্টেম্বরে প্রথমে পেঁয়াজের রপ্তানি মূল্য বৃদ্ধি এবং পরে রপ্তানি বন্ধ করেছিল ভারত। এরপর বাংলাদেশের বাজারে হু-হু করে বাড়তে থাকে পেঁয়াজের দাম, ৫০-৬০ টাকা কেজি দামের পেঁয়াজ বিক্রি হয় ২৫০-৩০০ টাকায়।
পেঁয়াজের দাম কবে নাগাদ স্বাভাবিক হবেÑএমন প্রশ্নের জবাবে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের বছরে আট থেকে ৯ লাখ টন ঘাটতি থাকে, সেটা সেপ্টেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি মাসে আসে। ভারতের পেঁয়াজের বড় অংশ এ সময় আসে। ভারত থেকে বন্ধ, তাই তুরস্ক, ইরান, চীন ও মিয়ানমার থেকে আমদানি করতে হচ্ছে। আমদানি খরচ পড়ে ৪৫ টাকা কেজি, এরপর পাঁচ থেকে ছয় টাকা ভ্যাট রয়েছে। ফলে পাইকারিতে ৫০ টাকা পড়ে। তাই ৬০ থেকে ৬৫ টাকার নিচে আমদানি করা পেঁয়াজ বাজারজাত করা যাবে না।
তিনি বলেন, ‘আমরা খুব চেষ্টা করছি ৬০ টাকার নিচে রাখতে, যাতে মিনিমাম লাভ করা যায়। আমদানি হলে ৫৫ টাকার নিচে কোনো অবস্থাতেই খরচ ফেলা যাবে না আগামী বছর পর্যন্ত।’
দাম বৃদ্ধিতে দেশের কৃষকরা পেঁয়াজের দাম পাচ্ছে বলে দাবি করে মন্ত্রী বলেন, ‘দাম বৃদ্ধিতে মানুষের কষ্ট হচ্ছে এটা খারাপ দিক, তবে ভালো দিক হলো আমাদের উৎপাদকরা কিন্তু টাকা পাচ্ছে। তারা ৩০ থেকে ৩৫ টাকা পাচ্ছে, যাতে সামনে আরও বেশি করে উৎপাদন করতে উৎসাহী হবে। এতে করে আমরা আগামী তিন বছরের মধ্যে পেঁয়াজে স্বনির্ভরতা অর্জন করতে পারব।’
তিনি বলেন, ‘গ্রীষ্মকালীন পেঁয়াজ কীভাবে উৎপাদন করা যায়, সেটা নিয়ে কাজ করছে কৃষি মন্ত্রণালয়। আশা করছি, বছরের মাঝামাঝি যদি আমরা নতুন এই পেঁয়াজটা আনতে পারি, তাহলে আমাদের লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তেমন কোনো সমস্যা হবে না।” বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের শিক্ষা হয়েছে যে, ভারত যে কোনো সময় পেঁয়াজ রপ্তানি বন্ধ করে দিতে পারে যদি তাদের সংকট হয়। আমরা এটা শিখেছি যে, আমাদের স্বনির্ভর হতে হবে। আমাদের সব চেষ্টা গত বছর থেকে শুরু করেছি, যাতে ভারত বা কোনো দেশের ওপরে নিত্যপণ্যের জন্য নির্ভরশীল হতে না হয়।’