নিজস্ব প্রতিবেদক: ফরিদপুরের গাজীরটেক ইউনিয়নের কৃষক রফিক উদ্দিন গত বছর পেঁয়াজে লাভবান হয়েছিলেন। তাই এ বছর আড়াই একর জমিতে আবাদ করেছেন পেঁয়াজ। এতে তার উৎপাদন খরচ হয়েছে প্রায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকা। একরপ্রতি ফলনও বাম্পার হয়েছিল। তারপরও বাজারে দাম না থাকায় মুনাফা করতে পারেননি তিনি। পেঁয়াজ বিক্রি করে কোনোভাবে উৎপাদন খরচ পুষিয়েছেন।
ফলন কিছুটা কম হওয়ায় একই গ্রামের কৃষক নিয়াজ আলী পেঁয়াজে এ বছর লোকসান গুনছেন। এক একর জমিতে পেঁয়াজ আবাদ করে তার লোকসান হয়েছে ১৮ হাজার টাকা। একরপ্রতি তার গড় উৎপাদনও ছিল চার হাজার কেজির কম।
বাজারে দাম না থাকায় এ বছর পেঁয়াজে লাভ করতে পারছে না কৃষক। আর ফলন কম হলে লোকসান গুনতে হচ্ছে। কারণ বাজারে পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে বিগত কয়েক মৌসুমের তুলনায় অনেক কম দামে। যাতে উৎপাদন খরচ তুলতে হিমশিম খাচ্ছেন কৃষক। এদিকে ভারত থেকে প্রচুর পেঁয়াজ আমদানি হওয়ায় দেশি পেঁয়াজের এ অবস্থা বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
পাইকারি বাজারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাজারে এখন ভারতের প্রচুর পেঁয়াজের সরবরাহ রয়েছে। প্রতি কেজি ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে যে কোনো সময়ের তুলনায় কম দামে। পাইকারি এখন প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম মাত্র ১৫ থেকে ১৬ টাকা। আর ভারতীয় পেঁয়াজের আধিক্যের প্রভাব পড়ছে দেশিগুলোর দামেও। পাইকারি বাজারে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ১৬ থেকে ১৮ টাকা দরে।
বিভিন্ন বাজারে হাতবদলের আগে প্রান্তিক কৃষকরা প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম পাচ্ছেন ১৩ থেকে ১৪ টাকা। এতে কৃষকের মুনাফা হবে নাÑএমন প্রমাণ মেলে বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) তথ্যেও। গত বছর বিবিএসের তিনটি ফসলের উৎপাদনশীলতা জরিপে পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ উঠে এসেছিল। সে অনুযায়ী ২০১৪ সালে দেশে প্রতি কেজি পেঁয়াজের উৎপাদন খরচ ছিল ১১ টাকা ৪৪ পয়সা। ২০১৪ সালে নেওয়া তথ্যে একরপ্রতি কৃষকের পেঁয়াজ উৎপাদনে খরচ হয় ৫৩ হাজার ৩৯৯ টাকা। আর এতে গড় উৎপাদন হয় চার হাজার ৬৬৮ কেজি। সে হিসেবে প্রতি কেজির উৎপাদন খরচ ছিল ১১ টাকা ৪৪ পয়সা। যা এ বছর আরও কিছুটা বাড়বে।
বিগত বছরগুলোয় দেশের কৃষক পেঁয়াজের কাক্সিক্ষত দাম পেয়েছিলেন। ফলে আগের সময়ের তুলনায় এখন ক্রমেই পেঁয়াজ চাষে আগ্রহী হচ্ছেন কৃষক। বিবিএসের সবশেষ হিসাবে, ২০১১-১২ অর্থবছরে যেখানে দেশে ১১ লাখ ৫৯ হাজার টন পেঁয়াজ উৎপাদিত হয়েছিল, ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১৭ লাখ চার হাজার টনে।
এদিকে লোকসান করা কৃষক নিয়াজ আলী বলেন, ‘রক্ত-ঘাম এক করেও পেঁয়াজের দাম পেলাম না। অন্যান্য বছর দাম পেয়ে এবারও আশা ছিল। সেখানে লোকসান হলো। ভারতীয় পেঁয়াজের কারণে বাজারে দাম পাবো না, এটা হতে পারে না। এভাবে চলতে থাকলে আবার পেঁয়াজ চাষে আগ্রহ কমে যাবে। সরকারের উচিত কৃষকের উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়ার ব্যবস্থা করা।’
এদিকে ভারতীয় পেঁয়াজের অধিক্যে দেশি পেঁয়াজের দাম না পাওয়ার সঙ্গে একমত ব্যবসায়ীরাও। তাদের তথ্যে গত কোরবানি ঈদের পর থেকেই বিভিন্ন স্থলবন্দর দিয়ে ভারতীয় পেঁয়াজের আমদানি বেড়েছে কয়েকগুণ। ভারতেও পেঁয়াজের দাম কম থাকায় পাইকারিতে এসব পেঁয়াজ আট থেকে ১০ টাকায় কেনা যাচ্ছে। ভারতের নাসিক, ভেলোর, ইন্দোর, রাজস্থান, পাটনা থেকে ছোট, মাঝারি ও বড় আকারের পেঁয়াজ আমদানি করা হয়েছে। দেশের গুদামগুলোও এখন পেঁয়াজে ঠাসা।
শ্যামবাজারের ইনসাফ বাণিজ্যালয়ের পরিচালক আবদুল মালেক বলেন, ‘দেশে প্রচুর পরিমাণে আমদানি করা পেঁয়াজ প্রবেশ করছে। মৌসুমে এভাবে অবাধে ভারত থেকে পেঁয়াজ এলে কৃষক কখনই ন্যায্য দাম পাবেন না। আর ন্যায্য দাম না পেলে পেঁয়াজ উৎপাদনও এগিয়ে যাবে না।’
ট্যারিফ কমিশনের তথ্য অনুযায়ী, দেশে উৎপাদন আর ভোগের মধ্যে পেঁয়াজের ঘাটতি তিন থেকে চার লাখ টন। প্রতি বছরই এ ঘাটতি পূরণে ভারত থেকে পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। কিন্তু ভোগের কারণে চাহিদা বাড়ায় প্রতি বছর স্বাভাবিকভাবেই আমদানি প্রবণতা বাড়ছে। গত বছর দেশে ভারত থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ লাখ ৫৪ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়। যেখানে ২০১১-১২ অর্থবছরে দেশে তিন লাখ ২৩ হাজার টন পেঁয়াজ আমদানি করা হয়।

Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 5:29 pm
পেঁয়াজে মুনাফা নেই কৃষকের
শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: