Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 1:15 pm

পেটের অসুখ আইবিএস কী

আইবিএস বা ইরিটেবল বাওয়েল সিনড্রোম পেটের একটি বিরক্তিকর সমস্যা। আক্রান্ত ব্যক্তিরা সাধারণত দীর্ঘদিন কষ্ট পান। আইবিএস পরিপাকতন্ত্রের একটি ফাংশনাল বা কার্যগত সমস্যা। যারা সব সময় উদ্বিগ্ন বা মানসিক চাপে থাকেন, তারা এতে বেশি ভোগেন। আইবিএসের সঠিক কারণ ভালোভাবে জানা যায়নি। পরিপাকনালির পেশির অস্বাভাবিক সংকোচন-প্রসারণ, স্নায়ুর সংকেতজনিত সমস্যা, উদ্বেগ ও মানসিক চাপ, পরিপাকতন্ত্রের সহজাত ও উপকারী ব্যাকটেরিয়ার পরিবর্তন প্রভৃতি কারণ শনাক্ত করা হয়েছে এর পেছনে। তবে অনেক খুঁজেও পরিপাকতন্ত্রে কোনো বড় সমস্যা পাওয়া যায় না বলে কারণ অনুসন্ধান করে কোনো লাভ হয় না।

পেটে ব্যথা অনুভব করা, অন্যটি হলো মলত্যাগের অভ্যাসে পরিবর্তন। পেটের ব্যথা সাধারণত মলত্যাগের পর চলে যায় বা কমে যায়। এতে ওজনহ্রাস, জ্বর, রক্তশূন্যতা বা মলের সঙ্গে রক্তপাত প্রভৃতি দেখা যায় না। সমস্যাটি খাদ্যাভ্যাসের সঙ্গে জড়িত। একেক জনের ক্ষেত্রে একেক রকম, কিন্তু দুধ ও দুধজাতীয় খাবার এবং শাকসবজি ও সালাদের মতো খাবারে সাধারণত বেশি বাড়ে। তবে ভালো বিষয় হলো যে এটা মারাত্মক কোনো রোগ নয়। এ থেকে বড় কোনো জটিলতা হওয়ার আশঙ্কা নেই।

পরিপাকতন্ত্র বিশেষজ্ঞরা আইবিএস নির্ণয় করতে কিছু নির্দিষ্ট লক্ষণ বা রোম ক্রাইটেরিয়া ব্যবহার করেন। এই রোগ দুই রকম হতে পারে, যেমন আইবিএস ডি, যেখানে পেটে ব্যথার সঙ্গে পাতলা বা নরম পায়খানা হয় এবং আইবিএস সি, যেখানে পেটে ব্যথার সঙ্গে কোষ্ঠকাঠিন্য থাকে। কারও কারও দুটিই থাকতে পারে। রোগের লক্ষণ ও ইতিহাস শুনে রোগ শনাক্ত করা হয়, তবে এর সঙ্গে অনেক সময় কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নিশ্চিত করতে হয় অন্য কোনো পরিপাকজনিত রোগ বা জটিলতা নেই। বেশিরভাগ পরীক্ষারই রিপোর্ট স্বাভাবিক পাওয়া যায়।

পরিত্রাণের উপায়: দুঃখজনক সত্য, এ সমস্যার পুরোপুরি কোনো সমাধান নেই। তবে এটি অনেকটাই নিয়ন্ত্রণযোগ্য। লক্ষণ অনুযায়ী খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা দরকার। রোজকার খাদ্যপঞ্জি মেনে চলার অভ্যাস থাকলে রোগী সহজেই বুঝতে পারবেন কবে কোন খাবারে সমস্যা হয়েছিল। উপসর্গ বুঝে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক কিছু ওষুধ দিতে পারেন। তবে আইবিএসের নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই রোগীর নিজের হাতে। স্বাস্থ্যকর ও শৃঙ্খলাপূর্ণ জীবন-যাপন করলে ভালো থাকবেন।

নিয়মিত ব্যায়াম বা হাঁটাহাঁটির চেষ্টা করুন। এতে পেটের গ্যাস বা ফাঁপা ভাব কমবে। একসঙ্গে অনেক না খেয়ে সারাদিন অল্প অল্প করে ভাগ করে খান। খাবারের টাইমটেবল বজায় রাখুন। মানসিক চাপ বা স্ট্রেস কমান। দরকার হলে বিশেষজ্ঞর পরামর্শ নিন।

ডা. মোহাম্মদ জাকির হোসেন

সহকারী অধ্যাপক, পরিপাকতন্ত্র ও লিভার রোগ বিভাগ

কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল