রহমত রহমান
তহবিল সংকটের অজুহাতে ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক পরিশোধ করছে না বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা)। ফলে প্রতিনিয়ত অনাদায়ী রাজস্বের পরিমাণ বেড়েই চলেছে। রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানটির কাছে এনবিআরের বকেয়া ১৬ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়েছে। যদিও গ্রাহকের কাছ থেকে এ ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক আদায় করে এনবিআরকে তা পরিশোধ করছে না পেট্রোবাংলা।
এনবিআরের সর্বশেষ তথ্যানুযায়ী, পেট্রোবাংলার কাছে অনাদায়ী ভ্যাটের পরিমাণ ১৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা। পেট্রোবাংলার দাবি তহবিল সংকটের কারণে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করা সম্ভব হচ্ছে না। তাছাড়া আন্তর্জাতিক তেল কোম্পানি (আইওসি) থেকে উচ্চমূল্যে গ্যাস ক্রয় করে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করতে হয়। ফলে বাড়তি রাজস্ব আদায় করা সম্ভব হয়নি পেট্রোবাংলার। এ নিয়ে এনবিআর ও পেট্রোবাংলা দফায় দফায় বৈঠক করলেও কাজের কাজ কিছু হচ্ছে না। সর্বশেষ গত ১৫ অক্টোবর এনবিআর সদস্য (মূসক-নিরীক্ষা ও গোয়েন্দা) মো. মাসুদ সাদিকের সভাপতিত্বে বিশেষ সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পেট্রোবাংলাকে উদ্যোগ নিয়ে বকেয়া রাজস্ব পরিশোধের পরামর্শ দেওয়া হয়।
সভায় পেট্রোবাংলার মহাব্যবস্থাপক শঙ্কর মজুমদার জানান, সরবরাহ করা পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার এখতিয়ার তাদের নেই। পেট্রোবাংলা আইওসি থেকে উচ্চমূল্যে গ্যাস ক্রয় করে বিইআরসির নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করে থাকে। এক্ষেত্রে সাপোর্ট ফর শর্টফলের বকেয়ার বিষয়ে বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত মূল্যে সরবরাহ করায় সেখানে উদ্বৃত্ত রাজস্ব আদায় করা হয়নি। তাছাড়া বকেয়া পরিশোধের লক্ষ্যে ২০১৫ সালে গঠিত কমিটির সুপারিশ অনুযায়ী তারা জ্বালানি ও খনিজ মন্ত্রণালয়কে রাজস্ব পরিশোধ করার বিষয়ে জানিয়েছিলেন। তবে তাদের নিজস্ব কোনো তহবিল নেই। তাই অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ নিয়ে অথবা বুক অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে পাওনা পরিশোধ করতে হবে।
সভায় উপস্থিত বৃহৎ করদাতা ইউনিট (ভ্যাট) কমিশনার মো. মুবিনুল কবির বলেন, পেট্রোবাংলা গত অর্থবছরে প্রায় দুই হাজার আট কোটি টাকা বকেয়া রাজস্ব পরিশোধ করলেও এ অর্থবছরে কোনো বকেয়া পরিশোধ করেনি। এনবিআর চেয়ারম্যান ও পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যানের মধ্যে এ বিষয়ে সভা অনুষ্ঠিত হয়। ওই সভায় সাপোর্ট ফর শর্টফল বিষয়ে এনবিআরের সিদ্ধান্ত পেট্রোবাংলাকে অবহিত করা হয়। আগের বকেয়া আদায়ের বিষয়ে পেট্রোবাংলার সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ অব্যাহত রাখা হয়েছে।
সভায় সিদ্ধান্ত হয়, পেট্রোবাংলা নিজস্ব প্রচেষ্টায় উদ্যোগী হয়ে বিদ্যমান বকেয়া রাজস্বগুলো পরিশোধ করার কার্যক্রম গ্রহণ করবে। এছাড়া ২০১৫ সালে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের নেতৃত্বে গঠিত কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নিজস্ব তহবিল থেকে অথবা বুক অ্যাডজাস্টমেন্টের মাধ্যমে ১৬ হাজার ৭৭৪ কোটি ২৩ লাখ টাকা বকেয়া পরিশোধের উদ্যোগ গ্রহণ করবে। যদি তহবিল সংকট থাকে সেক্ষেত্রে অর্থ বিভাগ থেকে বরাদ্দ নেওয়ার কার্যক্রম গ্রহণ করবে।
সূত্র জানায়, এর আগে গত ৯ এপ্রিল এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেও দ্রুত বকেয়া পরিশোধের সিদ্ধান্ত হয়েছিল। যদিও এর আগে কয়েক দফা বৈঠক করে তেমন কোনো অগ্রগতি হয়নি। ওই বৈঠক সূত্রে জানা যায়, পেট্রোবাংলার কাছে এনবিআরের বকেয়ার মধ্যে বৃহৎ করদাতা ইউনিট চূড়ান্ত দাবিনামা জারি করলেও বকেয়া আদায়ের কোনো অগ্রগতি হয়নি।
চার বছর ধরেই পেট্রোবাংলার বকেয়া অর্থ আদায়ে অর্থ মন্ত্রণালয়, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর সঙ্গে বহু চিঠি চালাচালি ও বৈঠক হয়। এর মধ্যে কিছু অর্থ পরিশোধ করা হলেও বকেয়া রাজস্ব কাগজে-কলমে প্রাপ্তি (বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট) হিসেবে দেখানোর উদ্যোগ নেয় এনবিআর। অর্থাৎ ওই বকেয়া অর্থ এনবিআরের প্রাপ্তি হিসেবে দেখানোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানগুলোর ব্যয় হিসেবে দেখানো হবে। কিন্তু অডিট-সংক্রান্ত কিছু প্রক্রিয়াগত জটিলতায় তাও আটকে যায়। এ পরিস্থিতিতে এসব অর্থের সুরাহা করতে অর্থ সচিব এবং জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিবকে চিঠি পাঠায় এনবিআর, যেখানে এনবিআর চেয়ারম্যান বিশাল রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রার বিষয়টি উল্লেখ করে বকেয়া অর্থ পরিশোধের তাগিদ দিয়েছেন বারবার।