সাইফুল আলম, চট্টগ্রাম: দেশে গ্যাস সংকটের চাহিদা পূরণে বিদেশ থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি করা হয়। এসব গ্যাসের অধিকাংশ আমদানি করে পেট্রোবাংলা। কিন্তু আমদানির বিপরীতে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস গত তিন বছর কোনো ধরনের শুল্ককর পায় না। এ পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে বকেয়া শুল্ককর ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার বেশি। এই শুল্ককর পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলাকে চিঠি দিলেও সাড়া পায়নি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস সূত্রে জানা যায়, দেশে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানি শুরু হওয়ার পর থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত বিপুল পরিমাণ এলএনজি আমদানি করা হয়েছে। অর্থাৎ ২০২১ সালের জুলাই মাস থেকে চলতি মাস পর্যন্ত পেট্রোবাংলার কাছে বকেয়া পাওনার হিসাব দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। বিল অব এন্ট্রি এবং আমদানিকারকের স্থানীয় প্রতিনিধির সঙ্গে আলোচনা করে বকেয়া পাওনার হিসাব করা হয়েছে। তাতে সব মিলিয়ে ১৪ হাজার ৭১৩ কোটি ৫১ লাখ টাকার শুল্ককর বকেয়া পড়েছে। বর্তমানে এলএনজি আমদানিতে সব মিলিয়ে শুল্ককর ভার ২২ শতাংশ। আমদানিকারককে ভ্যাট, অগ্রিম কর, আগাম ভ্যাট দিতে হয়। এসব বকেয়া শুল্ককর পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলা চেয়ারম্যানকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। কিন্তু বকেয়া শুল্ককর পরিশোধের কোনো ধরনের অগ্রগতি নেই। এটি কোনো একক প্রতিষ্ঠানের কাছে সর্ববৃহৎ বকেয়া শুল্ককর পাওনার ঘটনা।
চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কয়েক কর্মকর্তা জানান, কমিশনার বরাবর বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে আমদানি করা পণ্যের শুল্কায়ন সম্পন্ন করতে হয়। আইন অনুযায়ী, পণ্যের ওপর শুল্ককর পরিশোধেরও বাধ্যবাধকতা আছে। কিন্তু পেট্রোবাংলা তিন বছরে এলএনজি আমদানির পর তাৎক্ষণিকভাবে বিল অব এন্ট্রি দাখিল এবং শুল্কায়ন ও শুল্ককর পরিশোধ না করেই জাহাজ থেকে সরাসরি পাইপের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে এলএনজি সরবরাহ করেছে সরকারি সংস্থাটি। আর জাতীয় গ্রিডে দিলেও শুল্ককর পরিশোধ করেনি পেট্রোবাংলা। এটিই যে কোনো একক প্রতিষ্ঠানের কাছে এনবিআরের সর্বোচ্চ পাওনা।তারা আরও বলেন, আমদানিকৃত এলএনজি বিশেষ বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন। ফলে এটি কনটেইনারের করে আনা হয় না; যা বন্দর রাখা হবে। তাই গ্যাস পরিবহনকারী ফ্লোটিং স্ট্রাকচার রিগ্যাসিফিকেশন ইউনিট (এফএসআরইউ) থেকে সরাসরি পাইপলাইনের মাধ্যমে জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়। আবার সরকারি সংস্থা ও জাতীয় স্বার্থসংশ্লিষ্ট হওয়ায় আইন প্রয়োগও করা যাচ্ছে না।
এ বিষয়ে জানার জন্য চট্টগ্রাম কাস্টমস হাউসের কমিশনার ফাইজুর রহমানের ব্যবহƒত মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরে আবার যোগাযোগ করা হলে সংযোগটি ব্যস্ত পাওয়া যায়। পরে কামস্টস হাউসের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমরা বকেয়া পরিশোধের জন্য পেট্রোবাংলাকে একাধিকবার চিঠি দিয়েছি। জাতীয় স্বার্থে অনেক সময় শুল্ককর বকেয়া রেখেই বিভিন্ন সময় চালান ছেড়ে দিতে হয়। পরে শুল্ককরের যথাযথ আইনি প্রক্রিয়া মেনে দাবি করা হয়। এভাবে প্রতিষ্ঠানটির কাছে বিপুল পরিমাণ অর্থ বকেয়া পড়েছে।
জ্বালানি বিভাগের একজন কর্মকর্তা শেয়ার বিজেকে বলেন, গত মে মাসে রাজস্ব ভবনের সম্মেলন কক্ষে এনবিআর চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে জ্বালানি খাতের বকেয়া কর আদায়ে উপায় নির্ধারণ সংক্রান্ত একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় জটিলতা নিরসন আগামী বাজেটে ‘বুক অ্যাডজাস্টমেন্ট’ পদ্ধতিতে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে এসব করখেলাপি প্রতিষ্ঠানের বিপরীতে দেয়া বরাদ্দ থেকে সরাসরি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডে কর্তনের মাধ্যমে শুল্ক কর আদায়ের নীতগত সিদ্ধান্ত হয়। তবে এ বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত পাওয়া যায়নি।