পেট তো চালাতে হবে বসে থাকলে চলবে না

প্রতিনিধি, খুলনা : ভোর থেকে ঘন কুয়াশা আর মেঘাচ্ছন্ন আকাশ। সকাল ৯টা বাজতেই গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি। থেমে থেমে বেলা ১১টা পর্যন্ত তিন দফায় বৃষ্টি হয়েছে। আর দুপুর গড়ালেও মেলেনি সূর্যের দেখা। প্রচণ্ড শীতে বেকায়দায় পড়েছেন খুলনার খেটে খাওয়া শ্রমজীবীরা।

নগরীর মৌলভীপাড়া টিবি বাউন্ডারি রোডে দাঁড়িয়ে থাকা রিকশাচালক মো. জাফর বলেন, এবার বেশ ভালো শীত পড়েছে। ভোরে প্রচণ্ড ঠাণ্ডা পড়ে। শীতে খুবই কষ্ট হয়, তবে আমাদের তো কাজ করে খেতে হবে।

খালিশপুর বঙ্গবাসী স্কুল রোডের কাঠের আসবাবপত্র তৈরির মিস্ত্রি মো. রাজু বলেন, কয়েকদিন ধরে খুব শীত। রোদ না ওঠায় কাঠ শুকানো যাচ্ছে না। এজন্য কাজও অনেকটা বন্ধ রয়েছে। আজ সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে এখন কাজ একেবারে বন্ধ। সকালে খুব শীত থাকে। তবুও কাজের জন্য বের হতে হয়, পেট তো চালাতে হবে।

আমতলা এলাকার রাজমিস্ত্রি জাহাঙ্গীর শেখ বলেন, ‘অতিরিক্ত ঠাণ্ডা পড়েছে। ঠাণ্ডার কারণে আমরা কোনো জায়গায় কাজও করতে পারছি না। কেউ কাজেও নেয় না। কেউ সাহায্যও করে না। গরিব মানুষ কী করে বাঁচব? কাজ করতে না পারলে কী খাব?’

তিনি বলেন, ‘আমার আয়ের ওপর সংসার চলে। বর্তমানে আমার আয় নেই, খাওয়া-দাওয়ায় খুব কষ্ট হয়। দিনমজুর মমতাজ বেগম বলেন, শীত অতিরিক্ত। ঠাণ্ডার পোশাক পরলেও মানছে না। ভোর ৬টার দিকে সাতরাস্তা মোড়ে আসি। কয়েকদিন কোনো কাজ নেই। কী খেয়ে বাঁচব? আমরা ইট, মাটি, রঙের কাজ, বাসাবাড়ির কাজ করি।’

প্রতিদিন খুব ভোরে কাজের সন্ধানে নগরীর সাতরাস্তা মোড়ে আসেন বটিয়াঘাটা উপজেলার বালিয়াডাঙ্গা এলাকার দিনমজুর মো. সিরাজুল ইসলাম ভুঁইয়া। তিনি বলেন, ‘আমি ভোর সাড়ে ৪টার দিকে বাড়ি থেকে বের হই। পথঘাট কুয়াশায় ঢাকা থাকে। আর অন্ধকারে কিছু দেখা যায় না। গাড়িতে করে আসতেও কষ্ট হয়। ভোরে আসছি, এখনও কোনো কাজের সন্ধান পাইনি।’

খুলনার আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের ইনচার্জ সিনিয়র আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ‘খুলনা, যশোরসহ বিভিন্ন স্থানে আজ সকাল থেকে গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হয়েছে। খুলনায় আজ সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আকাশ কিছুটা মেঘলা রয়েছে। ধীরে ধীরে মেঘ কেটে যাবে।’

তিনি জানান, ‘খুলনায় চলতি বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল বুধবার (১৬ জানুয়ারি)। ওইদিন সর্বনিম্ন ১১ দশমিক ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়। আজ আকাশ মেঘলা থাকলেও তাপমাত্রা কিছুটা বেড়েছে। আজ খুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১২ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। ২০ জানুয়ারির পর আবারও তাপমাত্রা কিছুটা কমতে পারে।’

খুলনা জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা মো. আব্দুল করিম বলেন, ‘খুলনা মহানগরী ও জেলার ৯টি উপজেলায় অসহায় ও ছিন্নমূল মানুষের জন্য প্রায় ৫৪ হাজার ৪০০ কম্বল বিধি অনুযায়ী বিতরণ করা হয়েছে। এর মধ্যে উপজেলায় দুই ধাপে ৩৬ হাজার ৪০০ কম্বল পাঠানো হয়েছে। এ ছাড়া খুলনা সিটিতে কেসিসির পক্ষ থেকে ১৮ হাজার কম্বল দেয়া হয়েছে।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০