যশোর শিক্ষা বোর্ডে চেক জালিয়াতি

পে-অর্ডার ও চিঠি পাঠিয়ে হিসাব সহকারীর দায় স্বীকার

মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর: যশোর শিক্ষা বোর্ডের আড়াই কোটি টাকা আত্মসাতের ঘটনায় নিজেকে মূল অভিযুক্ত দাবি করে গত রোববার সন্ধ্যার পর হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম স্ত্রীকে দিয়ে ১৫ লাখ টাকার পে-অর্ডার ও একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি অর্থ জালিয়াতির গোটা ঘটনার সঙ্গে নিজেকেই ‘একমাত্র দায়ী’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন। মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড যশোরের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

শিক্ষা বোর্ড চেয়ারম্যান জানিয়েছেন, রোববার সন্ধ্যায় গেটে থাকা একজন নিরাপত্তা কর্মীর কাছে স্ত্রীর মাধ্যমে ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা পে অর্ডারের সঙ্গে একটি চিঠি পাঠান পলাতক হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম। চিঠিতে আব্দুস সালাম লিখেছেন ‘অফিসের চেক জালিয়াতির ঘটনার জন্যে আমি ব্যক্তিগতভাবে দায়ী। শিক্ষা বোর্ডে কর্মরত অন্য কেউ বা ভেনাস প্রিন্টিং ও প্যাকেজিং এবং শাহীলাল স্টোরের কেউ চেক জালিয়াতি কাজের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট নয়। পূর্ব পরিচিতির সূত্রে বর্ণিত দুটি প্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্ট ব্যবহার করে আমি উক্ত টাকা গ্রহণ করেছি এবং আমার নিজ প্রয়োজনে খরচ করে ফেলেছি। আজ ১৫ লাখ ৪২ হাজার টাকা ফেরত দিলাম। বাকি টাকাও পর্যায়ক্রমে আমি ফেরত দেয়ার অঙ্গীকার করছি। এজন্য আপনার কাছে ক্ষমা ও টাকা পরিশোধের সময় প্রার্থনা করছি।’

এ ঘটনার মাধ্যমে আব্দুস সালাম জালিয়াতির সঙ্গে জড়িতদের আড়াল কিংবা রক্ষা করার চেষ্টা করছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছর যশোর মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড সরকারি কোষাগারে জমার জন্য আয়কর ও ভ্যাট বাবদ ১০ হাজার ৩৬ টাকার ৯টি চেক ইস্যু করে। এ ৯টি চেক জালিয়াতি করে ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের নামে এক কোটি ৮৯ লাখ ১২ হাজার ১০টাকা ও শাহীলাল স্টোরের নামে ৬১ লাখ ৩২ হাজার টাকা উত্তোলন করে আত্মসাৎ করা হয়েছে। সরকারি ছুটি থাকায় ঘটনা প্রকাশ্যে আসার দু’দিন পর রোববার বোর্ডের সচিব এএমএইচ আলী আর রেজা দুদক কার্যালয়ে গিয়ে টাকা আত্মসাতের ঘটনায় অভিযোগ দাখিল করেন। এরপর একইদিন দুপুর ১২টার দিকে দুদক কর্মকর্তারা বোর্ডে গিয়ে তদন্ত ও কাগজপত্র সংগ্রহ করেন।

এদিকে গত বৃহস্পতিবার (৭ অক্টোবর) দুর্নীতির বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পর পালিয়ে যান হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম।

ঘটনা জানাজানি হয়ে পড়লে অর্থ আত্মসাতের সঙ্গে জড়িত নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান ভেনাস প্রিন্টিং অ্যান্ড প্যাকেজিংয়ের স্বত্বাধিকারী শরিফুল ইসলাম বাবু টাকা ফেরত দিতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। কিন্তু এখন কর্মচারী আব্দুস সালাম গোটা জালিয়াতির দায় একাই নিলেন। এর পেছনে অন্য কোনো রহস্য আছে কি নাÑতা অবশ্য নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

এ ব্যাপারে যশোর শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মোল্লা আমীর হোসেন বলেন, ঘটনা জানাজানির পর থেকে হিসাব সহকারী আব্দুস সালাম অফিসে অনুপস্থিত। স্ত্রীর মাধ্যমে একটি পে অর্ডার ও একটি চিঠি তিনি পাঠিয়েছেন।

টাকা ফেরত ও চিঠিতে নিজের একক সম্পৃক্ততায় অন্যদের রক্ষা করা হচ্ছে কি নাÑএমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘যেহেতু এই ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে এবং বোর্ড একটি তদন্ত কমিটিও কাজ করছেÑসে কারণে এ বিষয়ে মন্তব্য করা সমীচীন হবে না।’

এ ব্যাপারে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মো. নাজমুচ্ছায়াদাত বলেন, ‘আব্দুস সালাম রোববার সন্ধ্যায় বোর্ডে একটি পে-অর্ডার ও একটি চিঠি পাঠিয়েছেন বলে শুনেছি। কিন্তু এতে অন্যদের রক্ষা করা যাবে না। আমরা কাগজপত্র দেখছি; সেখানে কার কার সিগনেচার রয়েছে- বিহাইন্ড দি সিন যারাই জড়িত থাকুক, তাদের বিরুদ্ধে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেব।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০