পোলিও প্রতিরোধে টিকা থাকলেও এর কোনো চিকিৎসা নেই। এই ভাইরাস মোকাবিলার একমাত্র উপায় শিশুকে পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানো। অথচ আজও বহু শিশুর শৈশব হারিয়ে যায় এ অসুখে হাত-পা অসাড় হয়ে। এই রোগ প্রতিরোধের একমাত্র উপায় পাঁচ বছরের কম বয়সী শিশুকে পোলিও ভ্যাকসিন খাওয়ানো। এমনটা না করা হলে রোগটি মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে। কারণ পোলিও ভাইরাস ছয় থেকে আট সপ্তাহ পর্যন্ত রোগীর মলমূত্র দিয়ে বের হয়। অর্থাৎ মলত্যাগের পর হাত পরিষ্কারভাবে না ধোয়া হলে খাদ্য ও পানিতে সহজেই এই জীবাণুর সংক্রমণ ঘটে এবং অন্য শিশুরা এ রোগে সংক্রমিত হয়।
অসুখটি স্পাইনাল (স্নায়ুকোষ-সংক্রান্ত), বালবার (শ্বাসপ্রশ্বাস-সংক্রান্ত), স্পাইনো বালবার (স্নায়ু ও শ্বাসপ্রশ্বাস-সংক্রান্ত) ও এনকেফালাইটিস টাইপ (মস্তিষ্কসংক্রান্ত) হতে পারে। পোলিওতে প্রতি ২০০ জনের মধ্যে একজনের দেহ সারা জীবনের জন্য পঙ্গু হয়ে যায়। এছাড়া পাঁচ থেকে ১০ শতাংশ পোলিও রোগী মারা যায় শ্বাসপ্রশ্বাসজনিত সমস্যার কারণে।
বিশ্বে যদি একটিমাত্র শিশুর দেহেও এই ভাইরাস থেকে যায়, তবে তা অন্য সব শিশুর জন্য আতঙ্কের কারণ হতে পারে। কারণ শিশুদেহে এই ভাইরাস বছরের পর বছর বেঁচে থাকতে পারে এবং একটি শিশু থেকে দুই মিলিয়ন নতুন পোলিও আক্রান্ত শিশু দেখা দিতে পারে। আবার অসুখটি সেরে যাওয়ার পরও অনেক সময় তা ফিরে আসতে পারে, যাকে বলা হয় ‘পোস্ট-পোলিও সিনড্রোম’।
কেন পোলিও হয়
- ভাইরাসের মাধ্যমে পোলিও ছড়ায়। এই ভাইরাস শুধু মানুষের শরীরে বেঁচে থাকতে পারে
- ভাইরাস পায়ুপথে অথবা মুখের সাহায্যে শরীরে প্রবেশ করে
- অপরিচ্ছন্ন ও নোংরা স্থানে এই ভাইরাস দেখা যায়
4.পোলিওতে আক্রান্ত ব্যক্তির মলমূত্র থেকে ভাইরাসটি ছড়ায়
5. পোলিও ভাইরাস আছে এমন খাবার, যেমন পানি প্রভৃতি খাওয়ার ফলে এই ভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে।
ঝুঁকিপূর্ণ কিছু বিষয়
- কোনো স্থানে পোলিও ব্যাপক হারে দেখা দিলে সেসব স্থানে যাওয়া যাবে না
- পোলিও ভাইরাসে আক্রান্ত শিশুর সঙ্গে বসবাস করলে
- অন্য কোনো রোগের কারণে রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গেলে
- টনসিল অপারেশন করে কেটে ফেললে
- প্রচণ্ড কাজের চাপ অথবা অতিরিক্ত মানসিক চাপে থাকলে।
লক্ষণ
- প্রথম এক থেকে দুদিন শিশুর সর্দি,কাশি ও সামান্য জ্বর হয়। এরপর ভালো হয়ে যায়
- দুই থেকে ছয় দিন শিশুর মাথাব্যথা, শিশুর হাত অথবা পা অবশ হয়ে যায়; ঘাড় শক্ত হয়ে যায়; জ্বর আসে; শিশু ঠিকমতো দাঁড়াতে চায় না, আবার দাঁড় করাতে চাইলে কান্নাকাটি করে; ঠিকমতো নাড়াচড়া করতে পারে না; আক্রান্ত অঙ্গ ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে প্রভৃতি
- স্পাইনাল টাইপ পোলিওতে শিশুর হাত-পা অবশ হয়ে যায়, শিশু দাঁড়াতে চায় না। অধিকাংশ ক্ষেত্রে দুই পা, কখনও দুই হাত, আবার কখনও কখনও এক হাত কিংবা এক পা অবশ হয়ে যেতে পারে। এক্ষেত্রে ভাইরাস দ্রুত বাড়তে থাকে। মোটর নিউরন বা স্নায়ুকোষের সন্ধিগুলোয় ভাইরাস প্রবেশ করে, যা মাংসপেশির সঞ্চালন নিয়ন্ত্রণ করে
- বালবার টাইপ পোলিওতে স্নায়ুতন্ত্রের সেসব কেন্দ্র আক্রান্ত হয়, যেসব কেন্দ্র শ্বাসপ্রশ্বাস, হৃৎস্পন্দন ইত্যাদি নিয়ন্ত্রণ করে। ফলে শিশুর শ্বাসকষ্ট হয়, রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে থাকে না এবং খেতে অসুবিধা হয়
- স্পাইনো বালবার টাইপ পোলিওতে স্পাইনো ও বালবার দুই ধরনের লক্ষণ একত্রে দেখা যেতে পারে। আবার কখনও কখনও বিভিন্ন নার্ভ আক্রান্ত হওয়ায় ভিন্ন ভিন্ন লক্ষণ প্রকাশ পায়। যেমন গলার স্বর বসে যাওয়া, পানি খেতে গেলে তা নাক দিয়ে বের হয়ে আসা প্রভৃতি
- এনকেফালাইটিস টাইপ পোলিওতে শিশুর মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয় ও শিশুর মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে
- পোলিও আক্রান্ত শিশুর মধ্যে শতকরা মাত্র এক থেকে দুই ভাগ স্পাইনো, স্পাইনো বালবার, এনকেফালাইটিস প্রভৃতি মারাত্মক স্নায়ুতন্ত্রের সমস্যায় আক্রান্ত হয়। বেশিরভাগ সময় সাধারণ জ্বর, বমি কিংবা পায়খানা প্রভৃতি উপসর্গের পর এমনিতেই সুস্থ হয়ে যায়।
চিকিৎসা
পোলিও রোগের নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। মস্তিষ্ক আক্রান্ত হয়ে কোনো শিশু অজ্ঞান হয়ে গেলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করিয়ে চিকিৎসা দিতে হবে। শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে মুখের ফেনা পরিষ্কার করতে হবে। সাকশান দিয়ে অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন হতে পারে। রোগীর রক্তচাপ ও হৃৎস্পন্দন সবসময় নজরে রাখতে হবে। কয়েক সপ্তাহ পরে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী অবশ হয়ে যাওয়া হাত, পা ও অন্য অঙ্গগুলোর ব্যায়াম করাতে হবে অথবা ফিজিওথেরাপি দিতে হবে