পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও অস্ট্রিয়ায় বাংলাদেশ মিশনকে সতর্কতা

নিজস্ব প্রতিবেদক:ইউক্রেনে সংঘটিত যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণে সে দেশে আটকে পড়া বাংলাদেশিদের সহায়তা করার জন্য পোল্যান্ড, রোমানিয়া ও অস্ট্রিয়া মিশনকে সতর্ক করা হয়েছে। গতকাল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

ওই তিন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাসকে দেয়া সরকারের নির্দেশনায় বলা হয়েছে, আটকে পড়া বাংলাদেশিরা পোল্যান্ড, রোমানিয়া, স্লোভাকিয়া, হাঙ্গেরি ও মলদোভা যেখান দিয়ে সুবিধা সেখান দিয়ে বের হওয়ার চেষ্টা করছেন। ইউক্রেন থেকে আসা বাংলাদেশিদের সব ধরনের কনস্যুলার ও অন্যান্য ধরনের সহায়তা দেয়ার নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ফেসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ বা অন্য কোনো সামাজিক মাধ্যমের সহায়তায় বাংলাদেশিদের এ বিষয়ে জানানোর জন্যও বলা হয়েছে।

রুশ বাহিনীর আক্রমণের পর ইউক্রেনজুড়ে এখন যুদ্ধ চলছে। এমন যুদ্ধ পরিস্থিতিতে ইউক্রেনের বিভিন্ন শহর থেকে বাসিন্দারা নিরাপদ আশ্রয়ে পালাচ্ছেন। একইভাবে সেখানে থাকা বাংলাদেশিরা ইউক্রেন ছাড়ার চেষ্টা করছেন।

তাদের একজন চিকিৎসক খালেদা নাসরিন। ইউক্রেনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভ। এই শহরটি রুশ সীমান্ত থেকে মাত্র ৪০ মাইল দূরে। ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর প্রথম দিন গত বৃহস্পতিবার তিনি গভীর রাতে দুই ছেলেকে নিয়ে ওই শহর থেকে রওনা হয়েছেন এক হাজার মাইল দূরে পশ্চিম ইউক্রেনের শহর লাভবে। লাভবে তিনি যাচ্ছেন কারণ শহরটি পোল্যান্ড সীমান্তের কাছে। বেশি বিপদ দেখলে পোল্যান্ডে ঢুকে যেতে পারবেন তিনি। তার ব্যবসায়ী স্বামী আপাতত খারকিভেই রয়ে গেছেন।

বিবিসি বাংলার প্রতিবেদনে বলা হয়, ১৯৮৬ সাল থেকে পরিবার নিয়ে খারকিভে বসবাস করছেন খালেদা নাসরিন। ছুটি পাননি বলে চাকরি ছেড়ে যেতে হচ্ছে। গতকাল দুপুরের দিকে তার সঙ্গে যখন কথা হচ্ছিল, তখন তার ট্রেন সবেমাত্র রাজধানী কিয়েভের রেলস্টেশনে ঢুকছে।

খালেদা নাসরিন বলেন, তিনি খুবই মানসিক চাপে রয়েছেন। কারণ সকালে টেলিফোনে তার স্বামী জানিয়েছেন, খারকিভে একাধিক বিস্ফোরণ হয়েছে এবং শহরে প্রচণ্ড আতঙ্ক। ঘরবাড়ি ছেড়ে আসার কারণে এবং কবে ফিরতে পারবেন, কী পারবেন না, তা নিয়ে তার দুই ছেলেও মানসিকভাবে মুষড়ে পড়েছে।

তিনি বলেন, ‘বন্ধু ও স্কুল ছেড়ে যেতে হচ্ছে বলে আমার ১২ বছরের ছোটো ছেলের মন খুবই খারাপ।’ 

বৃহস্পতিবার রাতে ট্রেনে ওঠার সময় পর্যন্ত জানতেন না, যুদ্ধ আদৌ লাগবে কি না। লেগে যাওয়ার পর এখন স্বামীকে নিয়ে বাড়তি উৎকণ্ঠায় পড়ে গেছেন খালেদা নাসরিন। এই চিকিৎসকের মতো অনেক বাংলাদেশি এখন ইউক্রেন ছেড়ে পালাচ্ছেন। এরই মধ্যে ইউক্রেন থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে পোল্যান্ড পৌঁছেছেন সাত প্রবাসী বাংলাদেশি। পোল্যান্ডের বাংলাদেশ দূতাবাসের একটি সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।

ওই সূত্রটি জানায়, শুক্রবার সকাল থেকেই ইউক্রেনের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে প্রবাসী বাংলাদেশিরা পোল্যান্ড সীমান্তের দিকে রওনা দেন। এরই মধ্যে সাত বাংলাদেশি নাগরিক সীমান্ত অতিক্রম করে পোল্যান্ড পৌঁছেছেন। তাদের পোল্যান্ড দূতাবাসের কর্মকর্তারা গ্রহণ করেছেন।

সীমান্ত অতিক্রম করা বাংলাদেশি নাগরিকরা সাময়িকভাবে পোল্যান্ডে থাকবেন। পরে তাদের দেশে ফেরত আনা হবে।

প্রসঙ্গত, ইউক্রেনে বাংলাদেশের কোনো দূতাবাস নেই। পোল্যান্ডের ওয়ারসতে বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে ইউক্রেনে বাংলাদেশিদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হচ্ছে।

পোল্যান্ডে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত সুলতানা লায়লা বিবিসিকে বলেন, ইউক্রেনে হাজার দেড়েক বাংলাদেশি রয়েছেন, যাদের মধ্যে শ’পাঁচেকের সঙ্গে তারা যোগাযোগ রাখছেন।

তিনি বলেন, বাংলাদেশিদের ট্রানজিট ভিসায় পোল্যান্ডে এনে দেশে পাঠানোর চেষ্টা শুরু করেছেন তারা।

জানা গেছে, পোল্যান্ড সরকার ইউক্রেনে বসবাসরত বিদেশি নাগরিকদের ১৫ দিনের জন্য ট্রানজিট ভিসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যাতে তারা দেশে আসতে পারেন।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০