প্রতিনিধি, গাজীপুর: গাজীপুরের টঙ্গী বিসিক এলাকায় পোশাক কারখানা বন্ধের নোটিস দেখে পোশাককর্মীরা বিক্ষোভ মিছিল ও অবরোধ কর্মসূচি পালন করেছে। পরে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করতে পুলিশ ৩০ রাউন্ড শটগানের গুলি, ১০ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও ছয় রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে। গতকাল মঙ্গলবার সকাল ৮টা থেকে ১০টা পর্যন্ত দফায় দফায় পুলিশ-শ্রমিক সংঘর্ষে অন্তত ১০ শ্রমিকসহ পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন।
বিক্ষুব্ধ পোশাককর্মীরা বিসিক এলাকার চারটি পোশাক কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালায়। এমন পরিস্থিতিতে তিনটি পোশাক কারখানা ছুটি ঘোষণা করে। গাজীপুর দক্ষিণ মেট্রোপলিটন পুলিশের উপকমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
কারখানার পোশাককর্মী সানোয়ার হোসেন জানান, গত শনিবার টিভলি অ্যাপারেলস লিমিটেডের ফিনিশিং সেকশনের এক সহকারীকে লাঞ্ছিত করেন কারখানার পঞ্চম তলার উৎপাদন ব্যবস্থাপক লুৎফর রহমান। বিষয়টি কারখানার অন্য শ্রমিকদের মধ্যে জানাজানি হলে ওইদিনই বিচারের দাবিতে পোশাককর্মীরা কাজ বন্ধ করে কর্মবিরতি পালন করেন।
পরে পোশাককর্মীরা ১২টি দাবি উল্লেখ করে মালিকপক্ষের কাছে একটি দাবিনামা উপস্থাপন করেন। সোমবারও পোশাককর্মীরা কাজে যোগ না দিয়ে বাসায় চলে যান। পরে মালিকপক্ষ মঙ্গলবার সকাল থেকে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানাটি বন্ধ ঘোষণার নোটিস ফ্যাক্টরির সামনে টানিয়ে দেয়।
সকালে পোশাককর্মীরা কারখানার সামনে এসে বন্ধের নোটিস দেখে বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। এসময় বিক্ষুব্ধ শ্রমিকরা পাশের রেডিসন গার্মেন্টস লিমিটেড কারখানার সামনে এসে আন্দোলনে যোগ দেন এবং ইট-পাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এসময় পুলিশ বাধা দিলে বিক্ষুব্ধ পোশাককর্মীরা পুলিশের ওপরও ইটপাটকেল নিক্ষেপ শুরু করেন। এসময় পুলিশ গ্যাসগান ও শটগান চালিয়ে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়।
এরপর আবারও পোশাককর্মীরা সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবিএসআর ফ্যাশন লিমিটেড এবং বিসিক ফকির মার্কেটে জড়ো হয়ে পুলিশের ওপর ত্রিমুখী হামলা চালায়। পরে পুলিশ ৩০ রাউন্ড শটগানের গুলি, ১০ রাউন্ড সাউন্ড গ্রেনেড ও ছয় রাউন্ড টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে বিক্ষুব্ধ শ্রমিকদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এসময় পোশাককর্মীরা যাওয়ার পথে পেট্রিয়ট ইকো লিমিটেড কারখানায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে ভাঙচুর চালায়। এমন পরিস্থিতিতে সুমি অ্যাপারেলস লিমিটেড, আরবিএসআর ফ্যাশন লিমিটেড ও রেডিসন অ্যাপারেলস লিমিটেড কারখানা ছুটি ঘোষণা করে।
টিভলী অ্যাপারেলস লিমিটেডের মালিক মোশারফ হোসেন বলেন, শ্রমিকের সঙ্গে অসদাচরণের অভিযোগে ঘটনার দিনই উৎপাদন ব্যবস্থাপককে অপসারণ করা হয়েছে। কিন্তু শ্রমিকরা তা সত্ত্বেও কিছু অযৌক্তিক দাবি পেশ করেন, যা শ্রম আইনের পরিপন্থি।
উপ-কমিশনার মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ জানান, টিভলি অ্যাপারেলসের পোশাককর্মীরা উত্তেজিত হয়ে অন্যান্য কারখানায় হামলা চালিয়ে ভাঙচুর চালায়। এতে পুলিশ বাধা দিলে পুলিশের ওপরও ইটপাটকেল ছোড়ে। এ ঘটনায় পুলিশের পাঁচ সদস্য আহত হয়েছেন।