নিজস্ব প্রতিবেদক: নদনদীসহ সব ধরনের দূষণের জন্য দায়ী শিল্পের নির্গত বর্জ্য। এতে সৃষ্ট পরিবেশ দূষণে জলবায়ু পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। তৈরি পোশাক ও বস্ত্র খাতের পণ্য উৎপাদন করলে পরিবেশ দূষণ হবে। এজন্য পরিবেশবান্ধব বা সবুজ শিল্পায়নে যেতে পারলে দূষণ কমবে। আর তা করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, অর্থ, বাণিজ্য, পরিবেশ ও শ্রম মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আন্তঃমন্ত্রণালয় সমন্বিত বা যৌথ উদ্যোগ নিতে হবে।
সবুজ শিল্পায়নের জন্য অর্থায়ন করতে নীতিমালার সংশোধন প্রয়োজন। শুধু তৈরি পোশাক নয়, অভ্যন্তরীণ শিল্পের সব খাতে সবুজায়নের ওপর গুরুত্ব দেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দেশি-বিদেশি বিশেষজ্ঞরা। ‘বাংলাদেশের বস্ত্রশিল্প এবং তৈরি পোশাক খাতের সবুজ রূপান্তর’ শীর্ষক কর্মসূচির উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি)। এতে সহযোগিতা করে ঢাকাস্থ সুইডেন দূতাবাস। প্রধান অতিথি ছিলেন সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় সুইডেন দূতাবাসের উপপ্রধান ও সুইডেন উন্নয়ন সহযোগিতার প্রধান ক্রিস্টিন জোহানসন।
সাবের হোসেন বলেন, বিদেশি ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাকে ন্যায্যদাম দেয় না বলে যে অভিযোগ রয়েছে, তা আলোচনার মাধ্যমে অগ্রসর হতে হবে। বর্তমানে ই-কমার্স জনপ্রিয়। মধ্যস্বত্বভোগীদের বাদ দিয়ে তৈরি পোশাক কীভাবে সরাসরি ক্রেতার কাছে পৌঁছানো যায়, তা নিয়ে খাতসংশ্লিষ্টরা ভেবে দেখতে পারেন। কারণ হিসেবে যুক্তি দিয়ে তিনি বলেন, পৃথিবীতে একটা বড় পরিবর্তন হচ্ছে। বর্তমানে ই-কমার্সের বার্ষিক লেনদেন প্রায় পাঁচ লাখ কোটি (পাঁচ ট্রিলিয়ন) ডলারের কাছাকাছি। ই-কমার্সের সুবিধা হচ্ছে, যারা মধ্যস্বত্বভোগী আছে, তাদের অনেককে কিন্তু আমরা বাইপাস করতে পারি। আমরা বাংলাদেশে যে সবুজায়নের স্বপ্ন দেখি, সেটা শুধু পোশাক শিল্প নয়; দেশের সব শিল্প খাতকে আমরা সবুজায়ন, অর্থাৎ পরিবেশবান্ধব করতে চাই।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্যে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ড. ফাহমিদা খাতুন বলেন, স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে বের হয়ে যাওয়ার পর আমাদের রপ্তানি বাজারে আমাদের শিল্পায়ন পরিবেশবান্ধব হবে কি না, এটা আলোচনায় চলে আসবে। তখন আমাদের সুযোগ-সুবিধা নির্ভর করবে আমরা কতটুকু পরিবেশবান্ধব বা কতটুকু সবুজ শিল্পায়ন করতে পেরেছি তার ওপর।
সুইডিশ দূতাবাসের সহযোগিতায় সিপিডি ‘বাংলাদেশের বস্ত্র ও তৈরি পোশাক খাতে সবুজ শিল্পায়ন’ নামে একটি কর্মসূচি হাতে নিয়েছে সিপিডি। এ কর্মসূচির মাধ্যমে সবুজ শিল্পায়নের পথে বাধা বিশ্লেষণ করা, বিদ্যমান আর্থিক কৌশল পর্যালোচনা করা, সবুজ শিল্পায়নের জন্য উপযুক্ত সর্বোত্তম কর্মপন্থাগুলো চিহ্নিত করা এবং কীভাবে এই শিল্পে সবুজায়নের মধ্য দিয়ে কারখানা, শ্রমিক, অর্থনীতি ও সমাজকে লাভবান ও নতুন কর্মসংস্থান তৈরি করা যায়, তা তুলে ধরবে সিপিডি।
সুইডেন দূতাবাসের উপপ্রধান ক্রিস্টিন জোহানসন বলেন, সুইডিশ সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিক, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এসব সম্পর্কের উন্নয়নে বিভিন্ন দিক আলোচনায় চলে আসে। আমরাও চাই সবুজ শিল্পায়নের মাদ্যমে পরিবেশকে বাসযোগ্য করে রাখা। এজন্য সুইডিশ সরকার সব ধরনের উদ্যোগকে স্বাগত জানায়। আমাদের যৌথভাবে কাজ করা প্রয়োজন।
আলোচনায় অংশ নিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, বাংলাদেশে এখন ১৫৭টি প্লাটিনাম ও গোল্ড ক্যাটেগরির পরিবেশবান্ধব কারখানা রয়েছে। নকশা, পরিবেশ রক্ষা ও শ্রমিকদের নিরাপত্তাসহ সব দিক বিবেচনায় রেখে এসব কারখানা নির্মাণ করায় যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক মান নির্ণয়ন প্রতিষ্ঠান এই সার্টিফিকেট দিচ্ছে। কিন্তু তারপরও ক্রেতোদের কাছ থেকে ন্যায্যদাম মিলছে না।
বিকেএমইএর নির্বাহী সভাপতি মো. হাতেম বলেন, ক্রেতারা আমাদের কাছ থেকে পণ্য নিয়ে খুচরা যে মূল্যে বিক্রি করছে, তার মাত্র ১৫ শতাংশ আমাদের দিচ্ছে। অর্থাৎ ১০০ ডলারে বিক্রি হওয়া পোশাকটির মধ্যে মাত্র ১৫ ডলার মজুরি হিসেবে পাচ্ছি। পণ্যের বিবেচনায় কোনো টিশার্ট যদি ১০ ডলারে বিক্রি হয়, তাহলে আমরা মজুরি বাবদ মাত্র দেড় ডলার পাচ্ছি। তিনি সুপারিশ করে বলেন, এখানে উৎপাদক হিসেবে বাংলাদেশের ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ থাকা উচিত।
সিপিডির গবেষণা পরিচালক ড. খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, তৈরি পোশাক খাতের সঙ্গে বাণিজ্য ও অর্থ মন্ত্রণালয় জড়িত ছিল। এখন শ্রম মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরিবেশ মন্ত্রণালয়ও যোগ হয়েছে। এজন্য মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বিত উদ্যোগ নেয়ার সময় হয়েছে, যাতে সবুজ শিল্পায়নের অগ্রগতি হয়।
রাজধানীর মহাখালিতে ব্র্যাক ইন সেন্টারে আয়োজিত আলোচনায় অংশ নেন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি মো. ফজলুল হক ও শ্রমিক সংগঠন আওয়াজ ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক নাজমা আক্তার। অনুষ্ঠানে সিপিডি জানায়, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪১ লাখ মানুষ নিয়োজিত। বছরে এখান থেকে প্রায় ৩২ বিলিয়ন ডলার আয় করে বাংলাদেশ, যা মোট রপ্তানির ৮৪ শতাংশের বেশি। তাই খাতটির ওপর বিশেষ নজর দিতে হবে।