শেখ আবু তালেব: তৈরি পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে রফতানি আয়ে বড় ধরনের হোঁচট খেল বাংলাদেশ। চলতি (২০১৯-২০) অর্থবছর টানা দ্বিতীয় মাস অবধি এ ধারাবাহিকতা অব্যাহত রয়েছে। এতে চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) লক্ষ্যমাত্রা থেকে রফতানি কমেছে ১১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার। এ সময় দুই দশমিক ৯৪ শতাংশ ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) হালনাগাদ তথ্য থেকে পাওয়া গেছে এমন চিত্র।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রতিযোগী দেশগুলোতে সরকারি পর্যায় থেকে নীতি সহায়তা দেওয়ায় বাংলাদেশ পোশাকের ক্রয়াদেশ কম পাচ্ছে। তবে শিগগিরই পরিস্থিতি উন্নতির কোনো আশা দেখছে না বিজিএমইএ।
তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর তিন মাসে দেশের রফতানি আয় হয়েছে ৯৬৪ কোটি ৭৯ লাখ ডলার। গত অর্থবছরের এই সময়ে এর পরিমাণ ছিল ৯৯৪ কোটি ছয় লাখ ডলার। গত অর্থবছরের তুলনায় এবার রফতানি আয় কমেছে ২৯ কোটি ২৬ লাখ ডলার।
অপরদিকে চলতি অর্থবছরের এই প্রথম তিন মাসে রফতানি আয়ের কৌশলগত লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল এক হাজার ৮৪ কোটি ৭০ লাখ ডলারের। অর্থাৎ লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে প্রকৃত রফতানি কমেছে ১১৯ কোটি ৯০ লাখ ডলার বা ১১ দশমিক শূন্য পাঁচ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের প্রথম মাসে রফতানি আয়ে ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি হয়েছিল। কিন্তু দ্বিতীয় ও তৃতীয় মাসে সেই ধারাবাহিকতা রক্ষা হয়নি। ফলে সামগ্রিকভাবে কমেছে রফতানি আয়। তবে এটি উদ্বেগজনক বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, অনেক সময় রফতানি লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কিছুটা কম হয়। প্রবৃদ্ধিও ন্যূনতম পর্যায়ে পৌঁছায়। কিন্তু টানা দুই মাস রফতানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি খুব একটা দেখা যায় না।
ইপিবির তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, রফতানি আয়ে হোঁচট খাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি কমে যাওয়া। চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে তৈরি পোশাক খাতের রফতানি প্রবৃদ্ধিও ঋণাত্মক হয়েছে। গত অর্থবছরের তুলনায় এ খাতে রফতানিতে ঋণাত্মক প্রবৃদ্ধি হয়েছে এক দশমিক ৬৪ শতাংশ।
যদিও রফতানি পরিস্থিতি আরও অবনতির শঙ্কা রয়েছে বলে মনে করছে তৈরি পোশাক রফতানিকারক মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএ। সংগঠনটির সভাপতি রুবানা হক শেয়ার বিজকে জানান, পোশাক তৈরির ক্রয়াদেশ কমছে। আগামী দু-এক মাসও একই অবস্থায় যাবে। পোশাক খাতে টেকসই প্রবৃদ্ধি সহজ কাজ নয়। বর্তমানে ভিয়েতনাম, ভারত ও পাকিস্তান ক্রয়াদেশ বেশি পাচ্ছে। এই দেশগুলো তাদের তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য প্রণোদনা দিচ্ছে। আর বাংলাদেশে মজুরি বৃদ্ধিসহ পণ্য তৈরির খরচ বৃদ্ধি পেয়েছে, কিন্তু পণ্যের দাম বৃদ্ধি হয়নি। এতে অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সামনে আরও হতে পারে। আবার প্রতিযোগী দেশগুলো নিজস্ব মুদ্রার মান কমিয়েছে, আমরা কমাইনি।
বিজিএমইএর সভাপতি আরও বলেন, ‘চার বছর ধরে আমাদের বিনিয়োগের তুলনায় বার্ষিক রিটার্নে প্রবৃদ্ধির হার কমছে। আমরা সরকারের কাছ থেকে নীতি সহায়তা চাচ্ছি। এই শিল্পকে টিকিয়ে রাখতে নতুন করে ভাবতে হবে। আমদানি বাণিজ্যের সঙ্গে সংগতি রেখে কীভাবে মুদ্রার মান কমানো যায়, তা ভাবতে হবে। আমরা শুধু সরকারের কাছে আবেদন রাখতে পারি, কিন্তু সিদ্ধান্ত সরকারকে নিতে হবে। ভারত পণ্য রফতানির ওপর চার শতাংশ হারে নগদ সহায়তা দিচ্ছে। আর আমাদের এক শতাংশ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে।’
তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের প্রথম তিন মাসে পণ্য রফতানি বাবদ বাংলাদেশের আয় হয়েছে ৯৬৪ কোটি ৮০ লাখ ডলার। এর মধ্যে ৮০৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলারের জোগান দিয়েছে তৈরি পোশাক খাত, যা মোট রফতানি আয়ের প্রায় ৮৫ শতাংশ।
চলতি অর্থবছরের তিন মাসে তৈরি পোশাক খাত থেকে রফতানি আয় হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা র্নিধারণ করা হয়েছিল ৯১০ কোটি ৬৭ লাখ ডলার। এর বিপরীতে রফতানি হয়েছে ৮০৫ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে নিট পোশাক খাত থেকে এসেছে ৪১৭ কোটি ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে শূন্য দশমিক ৮৭ শতাংশ কম। আর ওভেন খাত থেকে ৩৮৮ কোটি ৭৩ লাখ ডলার আয় হয়েছে, যা গত বছরের এই সময়ের চেয়ে দুই দশমিক ৪৫ শতাংশ কম।
তৈরি পোশাক খাতেই লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে রফতানি আয় কমেছে ১০৪ কোটি ৯১ লাখ ডলার। আর গত বছরের তুলনায় কমেছে ১৩ কোটি ৪১ লাখ ডলার। তৈরি পোশাকের পাশাপাশি হিমায়িত ও জীবন্ত মাছ, কাঁকড়া, চিংড়ি, ফুল, স্টেইনলেস স্টিল, রড, সিমেন্ট, সব ধরনের প্লাস্টিক পণ্য, চামড়া, কাঠের আসবাব, টেরি টাওয়েল ও হোম টেক্সটাইল পণ্য রফতানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পারেনি।
যদিও এ সময়ে পাট ও পাটজাত পণ্য, তামাক, ওষুধ, হস্তশিল্প ও চা রফতানি কিছুটা বেড়েছে। গত ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশের রফতানি আয় ছিল চার হাজার ৫৩৫ কোটি ৮২ লাখ ডলার। এর মধ্যে তিন হাজার ৪১৩ কোটি ডলারই এসেছিল তৈরি পোশাক খাত থেকে। অপরদিকে চলতি রফতানি খাত থেকে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে চার হাজার ৫৫০ কোটি ডলার।

Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 3:48 am
পোশাক খাতে নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি রফতানি আয়ে বড় ধাক্কা
দিনের খবর,শেষ পাতা ♦ প্রকাশ: