নিজস্ব প্রতিবেদক: শিল্পকারখানাগুলোয় গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংকট এবং ইউরোপে চাহিদা কমায় আগামী দুই মাসে পোশাক খাতে রপ্তানি ২০ শতাংশ কমবে বলে আশঙ্কা করছেন বাংলাদেশ পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি ফারুক হাসান।
গতকাল রোববার বিজিএমইএ’র প্রধান কার্যালয়ে ‘মেইড ইন বাংলাদেশ উইক এবং ৩৭তম আইএএফ ওয়ার্ল্ড ফ্যাশন কনভেনশন’ বিষয়ে মিট দ্য প্রেসে এ শঙ্কার কথা বলেন তিনি।
পোশাকশিল্পের সমসাময়িক নানা বিষয় নিয়ে আলোচনা করে ফারুক হাসান বলেন, ‘গত বছরের আগস্ট থেকে চলতি বছরের আগস্ট পর্যন্ত পোশাকশিল্পে টানা প্রবৃদ্ধি হয়েছে, যে কারণে গত অর্থবছরে এ শিল্প খাত থেকে রপ্তানি হয়েছে ৪২ দশমিক ৬ বিলিয়ন ডলার। কিন্তু গত দুই মাসে আমরা উদ্বেগের সাথে লক্ষ করছি, ক্রয়াদেশ ধাপে ধাপে কমছে। ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধ, বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক অস্থিরতা, মূল্যস্ফীতি এবং খুচরা বাজারে প্রভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানিসহ প্রধান বাজারগুলোয় প্রবৃদ্ধি কমছে।’
বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘বিশ্বজুড়ে জ্বালানি সংকট চলছে। স্থানীয় পর্যায়ে গ্যাস-বিদ্যুতের সংকটের প্রভাব আমদের পোশাকশিল্পেও পড়েছে। এতে করে শিল্পে ব্যয় বাড়ছে দুভাবে। বিদ্যুতের অপ্রতুলতার কারণে কারখানাগুলোয় ডিজেল দিয়ে জেনারেটর চালানো হচ্ছে। বেশি সময় জেনারেটর চালানোর কারণে সেগুলো ঘনঘন বিকল হচ্ছে। এতে শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বাড়ছে।’
শিল্পে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সরবরাহ রাখার দাবি তুলে ফারুক হাসান বলেন, ‘সরকারের কাছে আমাদের একান্ত অনুরোধÑরপ্তানিমুখী শিল্পকারখানাগুলোয় বিশেষ ব্যবস্থায় চাহিদা অনুযায়ী নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ করা হোক। অন্যথায় রপ্তানি আয় ক্রমাগত কমতে থাকবে। এতে নভেম্বর মাসেও রপ্তানি আয় হ্রাস পাওয়ার শঙ্কা থেকেই যাবে। সার কারখানায় গ্যাস সরবরাহ কমিয়ে এনে রপ্তানিমুখী শিল্পকারখানায় গ্যাস সরবরাহ বেশি দেয়া যায় কি না, সেটা নিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভাবার আহ্বান জানাচ্ছি।’
উৎসে কর নিয়ে বলেন, ‘উৎসে কর যা এ বছরে এক শতাংশ করা হয়েছে, সেটি পূর্ববর্তী বছরের মতো একই পর্যায়ে রাখা হোক।’
সংবাদ সম্মেলনের আগে বাংলাদেশের পোশাকশিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে বিজিএমইএ ভবনে ‘সেন্টার অব ইনোভেশন, এফিশিয়েন্স অ্যান্ড ওএসএইচ’ সেন্টারের উদ্বোধন করেন ফারুক হাসান।
সেন্টারটির গুরুত্ব তুলে ধরে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, ‘চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের অন্যতম চ্যালেঞ্জ হচ্ছে প্রযুক্তি ও অটোমেশন। আমরা এমনভাবে কাজ করতে চাই,
যাতে করে আগামী চতুর্থ শিল্পবিপ্লবের চ্যালেঞ্জগুলো সুযোগে পরিণত করতে পারি। এই চ্যালেঞ্জকে সুযোগে পরিণত করতে ইনোভেশন সেন্টার সুস্পষ্ট নির্দেশনা ও সহায়তা দেবে। আমরা যদি শিল্পের প্রতিযোগী সক্ষমতা বাড়াতে পারি, স্বচ্ছতা ও ট্রেসেবিলিটি বাড়াতে পারি এবং ক্রেতাদের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য, নির্ভরযোগ্য ও গ্রিন প্ল্যাটফর্ম হিসেবে নিজেদের উপস্থাপন করতে পারি, শিল্পকে টেকসই করতে পারি, তাহলে আমাদের রপ্তানি ১০০ বিলিয়ন ডলার ছাড়িয়ে যাবে।’
তিনি বলেন, ‘শিল্পটি প্রত্যক্ষভাবে আরও ১০ মিলিয়নের বেশি এবং পরোক্ষভাবে ব্যাকওয়ার্ড ও ফরওয়ার্ড লিংকেজ মিলে আরও ৪০ থেকে ৫০ লাখের বেশি কর্মসংস্থান তৈরি করতে সক্ষম হবে। ইনোভেশন সেন্টার এই বিষয়গুলোয় আমাদের সহায়তা করবে। একই সঙ্গে ২০৩০ সালের মধ্যে শিল্পের জন্য একটি পথনকশা তৈরি করবে।’