নিয়াজ মাহমুদ: ইউনাইটেড গ্রুপ পুঁজিবাজার থেকে সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক লিমিটেডের (এসআইবিএল) প্রায় ৫০০ কোটি টাকার শেয়ার কিনেছিল। ব্যাংকটির পরিচালনা পর্ষদে আধিপত্য বিস্তার করতেই গ্রুপটি এ বিনিয়োগ করেছিল। কিন্তু নানা কারণে তারা পর্ষদে স্থান করে নিতে পারেনি। তবে তাদের বিনিয়োগের মাধ্যমে তিন মাসের ব্যবধানে গ্রুপটি বাজার থেকে প্রায় ১৭৬ কোটি টাকার মুনাফা তুলে নিয়েছে।
জানা গেছে, মূল মার্কেট থেকে ২২ কোটি ১৫ লাখ শেয়ার কিনেছিল ইউনাইটেড গ্রুপ। প্রতিটি শেয়ার গড়ে ২২ টাকা দরে ইউনাইটেড গ্রুপের কয়েকটি কোম্পানির নামে কেনা হয়। এসব শেয়ারের মধ্যে কিছু ২৮ টাকা, বাকি শেয়ার ৩০ টাকা দরে এস আলম গ্রুপের কাছে ব্লক মার্কেটে বিক্রি করে ইউনাইটেড গ্রুপ। লেনদেন শেষে গ্রুপটি তাদের কেনা ৫০০ কোটি টাকার শেয়ারের মাধ্যমে প্রায় ১৭৬ কোটি টাকা মুনাফা তুলে নিতে সক্ষম হয়, যা মোট বিনিয়োগের ৩৫ শতাংশ।
জানা গেছে, গত মে মাসে ইউনাইটেড গ্রুপ এসআইবিএলের ১৭ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করে। পরে ধারাবাহিকভাবে দুই মাসে গ্রুপটি এসআইবিএলের মোট ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করে। এর ধারাবাহিকতায় তারা পরিচালনা পর্ষদে একাধিক পরিচালক নিয়োগের জন্য জোর তদবির শুরু করে। কিন্তু পর্ষদে ঢুকতে ব্যর্থ হয়ে তারা শেয়ার বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়।
এ বিষয়ে কথা হয় ইউনাইটেড গ্রুপের প্রধান অর্থ কর্মকর্তা (সিএফও) মো. এবাদাত হোসেন ভ‚ঁইয়ার সঙ্গে। এসআইবিএলের শেয়ার কিনে তা এস আলমের কাছে বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে তিনি শেয়ার বিজকে বলেন, ব্যাংকটির শেয়ার ক্রয়-বিক্রয়ের মাধ্যমে কিছু টাকা মুনাফা হলেও গ্রুপের পরিচালনা পর্ষদ ব্যাংকটির মালিকানা থেকে সরে আসার সিদ্ধান্ত নেয়।
এর আগে ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ারম্যান হাসান মাহমুদ রাজা এসআইবিএলের ক্রয় করা শেয়ার বিক্রির বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংক হওয়ায় শেয়ার ক্রয় করেছিলাম। পরিচালনা পর্ষদের সদস্য হয়ে ব্যাংকটিকে আরও সমৃদ্ধ করার ইচ্ছা ছিল। কিন্তু ব্যাংকটির উদ্যোক্তাদের একটি পক্ষ ও নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর সহযোগী না পাওয়ায় হাতে থাকা শেয়ার এখন বিক্রি করছি।
জানা যায়, ইউনাইটেড গ্রুপের বিভিন্ন সহযোগী কোম্পানি ও পরিচালকরা মিলে এসআইবিএলের ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশ শেয়ার ধারণ করেন। চলতি বছরের মে মাস পর্যন্ত গ্রুপটির হাতে ব্যাংকটির শেয়ার ছিল ১৭ দশমিক ২৭ শতাংশ। গ্রুপটির হাতে থাকা সাড়ে ১৭ শতাংশ শেয়ার থাকা নিয়ে শুরু হয় সমালোচনা। শেষ পর্যন্ত আদালতেও গড়ায় বিষয়টি। আদালত বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য রুল জারি করেন। একই সঙ্গে বিষয়টির সমাধান হওয়ার আগ পর্যন্ত শেয়ার ধারণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে ভোটাধিকার বা অন্য যে কোনো অধিকার না দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
এরপরেই বিষয়টি নিয়ে ২৯ মে, ২০১৭ তারিখে বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ দাখিল করে ব্যাংকটির একজন শেয়ারহোল্ডার। এরপরেও শিল্প গ্রুপটি ধীরে ধীরে ব্যাংকটির শেয়ার ধারণ করতে থাকে। চলতি বছরের ১৬ আগস্ট পর্যন্ত তা ৩০ দশমিক ৮৮ শতাংশে পৌঁছায়।
এদিকে ইউনাইটেড গ্রুপ এসআইবিএল ব্যাংকের শেয়ার ছেড়ে দিলেও তা কিনে নিয়েছে এস আলম গ্রুপ। তারা ইউনাইটেড গ্রুপের চেয়ে এক ধাপ এগিয়ে ব্যাংকটির ৩৯ শতাংশ শেয়ার ক্রয় করেছে বলে জানা গেছে। মাত্র দুটি ঠিকানা ব্যবহার করে এ গ্রুপের ১৯টি প্রতিষ্ঠান পুঁজিবাজার থেকে এসআইবিএলের ২৮ কোটি ৮০ লাখ শেয়ার কিনে নিয়েছে।