নিয়াজ মাহমুদ: পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি প্যাসিফিক ডেনিমসের বিরুদ্ধে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে উত্তোলিত অর্থ ব্যবহারের অনিয়ম তদন্তে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান (অডিট ফার্ম) নিয়োগ দিয়েছে বাংলাদেশে সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। অভিযোগ তদন্তের দায়িত্ব পেয়েছে ‘ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্টস’। আর এ কাজের জন্য দেড় লাখ টাকা ফি দেওয়া হবে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠানকে।
নিয়োগকৃত নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান সূত্রে জানা যায়, বিএসইসির করপোরেট ফাইন্যান্স ডিপার্টমেন্টের (সিএফডি) উপ-পরিচালক মোল্লা মো. মিরাজ-উজ-সুন্নাহ স্বাক্ষরিত নিয়োগের চিঠিটি প্যাসিফিক ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালককেও পাঠানো হয়েছে। একইসঙ্গে চিঠিটি ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের চিফ রেগুলেটরি অফিসার (সিআরও) বরাবরও পাঠানো হয়েছে।
জানা গেছে, ‘সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অর্ডিন্যান্স, ১৯৬৯’-এর ২সিসি ক্ষমতাবলে ম্যাবস অ্যান্ড জে পার্টনার্স চার্টার্ড অ্যাকাউন্টসকে প্যাসিফিক ডেনিমসের বিশেষ নিরীক্ষার জন্য বিএসইসি নিয়োগ দিয়েছে। ২৭ সেপ্টেম্বর বিএসইসির দেওয়া নিয়োগপত্রে ৪৫ কার্যদিবসের মধ্যে নিরীক্ষা প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জানা গেছে, ব্যবসায়িক প্রয়োজনে একাধিক ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নিয়েছিল প্যাসিফিক ডেনিমস। এগুলোর মধ্যে রয়েছেÑঅগ্রণী ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, এনসিসি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, আইডিএলসি, আইআইডিএফসি ও ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেড। কথা ছিল, আইপিও’র মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তুলে ঋণ পরিশোধ করবে কোম্পানিটি। সেই মোতাবেক আইপিও ছাড়ার জন্য ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে অনাপত্তি (এনওসি) নিয়েছিল প্যাসিফিক ডেনিমস। কিন্তু পুঁজিবাজার থেকে অর্থ তোলার পর প্রতিশ্রæতি রাখেনি কোম্পানিটি। আর সে কারণে ঋণদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার শরণাপন্ন হয়। গত মাসে বিএসইসির ৬১১তম কমিশন সভায় কোম্পানিটির আইপিওর অর্থ ব্যবহার খতিয়ে দেখতে বিশেষ নিরীক্ষার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
ব্যবসা সম্প্রসারণ ও ঋণ পরিশোধের জন্য পুঁজিবাজারে আসে বস্ত্র খাতের এ কোম্পানি। কোম্পানিটি বাজার থেকে স্থির মূল্য পদ্ধতিতে ৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। উত্তোলিত অর্থের মধ্যে ২৫ কোটি টাকা ঋণ পরিশোধ করবে; যার মধ্যে অগ্রণী ব্যাংকে ১০ কোটি, এনসিসি ব্যাংকে ১২ কোটি, আইডিএলসি ফাইন্যান্সে এক কোটি, আইআইডিএফসিতে এক কোটি, ফাস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্টে এক কোটি টাকা।
ব্যবসা সম্প্রসারণে ব্যয় হবে ৪৭ কোটি ৯৩ লাখ ৮০ হাজার টাকা, যা মেশিনারিজ এবং ভবন নির্মাণে ব্যয় করা হবে। আর আইপিও বাবদ খরচ হবে দুই কোটি ছয় লাখ ২০ হাজার টাকা। এ ব্যাপারে কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজম মহসিন ও কোম্পানি সচিব মো. সোহরাব আলীর সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
এদিকে সম্প্রতি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যাসিফিক ডেনিমসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিউল আজম মহসিনের মন্দা শ্রেণিকৃত ঋণের দায় পরিশোধে বিএসইসির সহযোগিতা চেয়েছে সোনালী ব্যাংক। প্যাসিফিক ডেনিমসের শেয়ার বিক্রি করা অর্থ দিয়ে দায় পরিশোধের বিএসইসির চেয়ারম্যান বরাবর চিঠি দিয়েছে ব্যাংকটির কৃষিভিত্তিক প্রকল্প অর্থায়ন বিভাগ।
সোনালী ব্যাংকের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে বলা হয়, শফিউল আজম মহসিন প্যাসিফিক ডেনিমসের পাশাপাশি মেসার্স উইলসন কোল্ডস্টোরেজ লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক। এ প্রতিষ্ঠানটি সোনালী ব্যাংকের কৃষিভিত্তিক শিল্প ঋণ স্কিমের আওতায় অর্থায়িত একটি প্রকল্প। শফিউল আজম মহসিনের নামে এ কার্যালয়ে মন্দ শ্রেণিকৃত ঋণ দায়ের পরিমাণ ২৯৫১ দশমিক ৪৪ লাখ টাকা; যা হালনাগাদ সুদারোপ করলে বকেয়া আরও বৃদ্ধি পাবে বলে চিঠিতে উল্লেখ করা হয়।
চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়, চলতি বছরের শুরুর দিকে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত প্যাসিফিক ডেনিমসের শেয়ার বিক্রি বাবদ আনুমানিক ৭৫ কোটি টাকার শেয়ার বিক্রি করেন শফিউল আজম মহসিন। এ টাকা মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের দিলকুশা শাখায় আমানত হিসেবে জমা আছে। চিঠিতে শফিউল আজম মহসিনের জমাকৃত অর্থ থেকে সোনালী ব্যাংকের শ্রেণিকৃত ঋণের পাওনা আদায়ে বিএসইসির চেয়ারম্যানের হস্তক্ষেপের অনুরোধ করা হয়।
এ প্রসঙ্গে শফিউল আজম মহসিন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘আমি ও আমার কোম্পানি সোনালী ব্যাংকে লেনদেন করতাম। কখনও খেলাপি হয়নি। এখন ব্যাংক থেকে কেন বিএসইসির কাছে চিঠি পাঠিয়েছে, তা আমার বোধগম্য নয়। বিষয়টি নিয়ে শিগগিরই ব্যাংকের সঙ্গে বসব।’
বস্ত্র খাতের প্যাসিফিক ডেনিমস প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে সাত কোটি ৫০ লাখ সাধারণ শেয়ার ছেড়ে ৭৫ কোটি টাকা উত্তোলন করে। এর আগে গত ১ সেপ্টেম্বর বিএসইসির ৫৮২তম কমিশন সভায় প্যাসিফিক ডেনিমসের আইপিও অনুমোদন করা হয়। আইপিওর অর্থে ব্যবসা সম্প্র্রসারণ, যন্ত্রপাতি ক্রয়, অবকাঠামো উন্নয়ন, ঋণ পরিশোধ ও আইপিও খাতে ব্যয় করবে কোম্পানিটি।
শতভাগ রফতানিকারক প্যাসিফিক ডেনিমস প্রাইভেট লিমিটেড হিসেবে ২০০৩ সালে যাত্রা শুরু করে। এরপরে কোম্পানিটি ২০০৭ সালে বাণিজ্যিক উৎপাদন শুরু করে। এছাড়া ২০১১ সালে পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে রূপান্তর হয়।
Add Comment