ধীরাশ্রম আইসিডির সহযোগী প্রকল্প

প্রকল্প অনুমোদনের আগেই ব্যয় বেড়ে গেছে ২১%

ইসমাইল আলী: গাজীপুরের ধীরাশ্রমে অভ্যন্তরীণ কনটেইনার ডিপো (আইসিডি) নির্মাণ করতে চায় রেলওয়ে। চীনের ঋণে জিটুজি ভিত্তিতে এটি নির্মাণ করা হবে। এজন্য আইসিডির জন্য জমি অধিগ্রহণ ও সংযোগ রেলপথ নির্মাণে পৃথক প্রকল্প নিতে যাচ্ছে রেলওয়ে। তবে প্রকল্পটি অনুমোদনের আগেই ব্যয় বেড়ে গেছে প্রায় ২১ শতাংশ। এছাড়া প্রকল্পটির ডিপিপিতে (উন্নয়ন প্রকল্প প্রস্তাব) বেশকিছু অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও রয়েছে।

সূত্রমতে, ধীরাশ্রমে আইসিডি নির্মাণ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই আলোচনা হচ্ছে। আমদানি-রপ্তানির পরিমাণ বাড়ায় কমলাপুর আইসিডির সম্প্রসারণ জরুরি হয়ে পড়েছে। তবে সেখানে পর্যাপ্ত জায়গা না থাকায় ও বিদ্যমান আইসিডি ভেঙে সেখানে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার অদূরে গাজীপুরের ধীরাশ্রমে আইসিডি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়। এজন্য সম্ভাব্যতা যাচাই সম্পন্ন হয়েছে।

প্রাথমিকভাবে জাপানের বেসরকারি খাতের বিনিয়োগে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারিত্বের (পিপিপি) মাধ্যমে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছিল। তবে চীনের একাধিক কোম্পানি প্রকল্পটি নিয়ে আগ্রহ দেখানোয় পরবর্তী সময়ে জাপানের পিপিপি পরিকল্পনা বাতিল করা হয়। বর্তমানে চীনের অর্থায়নে জিটুজি ভিত্তিতে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে।

সম্প্রতি ‘ধীরাশ্রম আইসিডির জমি অধিগ্রহণ ও পুবাইল-ধীরাশ্রম রেল লিংক নির্মাণ’ শীর্ষক প্রকল্পটির ডিপিপি চূড়ান্ত করা হয়েছে। গত ২৩ মে এ-সংক্রান্ত বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। এতে প্রকল্পটির বেশকিছু অপ্রয়োজনীয় ব্যয় নিয়েও আপত্তি তোলা হয়।

সূত্র জানায়, প্রাথমিকভাবে ধীরাশ্রম আইসিডির জমি অধিগ্রহণ ও পুবাইল-ধীরাশ্রম রেল লিংক নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৮৭৭ কোটি ৫১ লাখ টাকা। এর বিভিন্ন অংশের ব্যয় যাচাই-বাছাই করে তা কমানোর প্রস্তাব করেছিল প্রকল্প যাচাই কমিটি। তবে এ ব্যয় না কমিয়ে উল্টো বেড়ে গেছে। বর্তমানে তা দাঁড়িয়েছে তিন হাজার ৪৭৩ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। এ হিসাবে ব্যয় বেড়ে গেছে ৫৯৫ কোটি ৯৪ লাখ টাকা বা ২০ দশমিক ৭১ শতাংশ।

আইসিডি নির্মাণে ২২২ দশমিক ৬৪ একর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। এজন্য প্রাথমিকভাবে ব্যয় ধরা হয়েছিল দুই হাজার ৩৬৭ কোটি ১৩ লাখ টাকা। তবে বর্তমানে এ ব্যয় বাড়িয়ে দুই হাজার ৫৭৯ কোটি ১৫ লাখ ধরা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে সম্পন্ন করা হয়। তাই জমি অধিগ্রহণে কোনো ধরনের পরামর্শক দরকার হয় না। তবে প্রকল্পটির আওতায় জমি অধিগ্রহণের পরামর্শক ব্যয় ধরা হয়েছে ৪০ লাখ টাকা। এ ব্যয় নিয়ে প্রকল্প যাচাই কমিটিতে আপত্তি জানানো হয়েছে।

প্রকল্পটির আওতায় আইসিডির সঙ্গে ছয় কিলোমিটার সংযোগ রেলপথ নির্মাণ করা হবে। এজন্য রেলপথ নির্মাণ ও সিগন্যালিং মিলিয়ে প্রাথমিকভাবে ৩৬৫ কোটি ৬৩ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। তবে নতুন হিসাবে এ ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৬১ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। পাশাপাশি অন্যান্য খাতেও ব্যয় বেড়ে গেছে।

এদিকে প্রাথমিকভাবে প্রকল্পটিতে একটি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনার জন্য এক কোটি টাকা ব্যয় ধরা হয়েছিল। যদিও প্রকল্প বাছাই কমিটির আপত্তিতে তা বাতিল করা হয়েছে। তবে ক্রয়কৃত গাড়ির নিবন্ধনে পাঁচ লাখ টাকা, বিমা বাবদ পাঁচ লাখ টাকা ও জ্বালানি খাতে ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এ ব্যয় নিয়েও বৈঠকে আপত্তি তোলা হয়।

এসব বিষয়ে জানতে রেলওয়ের মহাপরিচালক ধীরেন্দ্র নাথ মজুমদারের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, রেলপথে কনটেইনার পরিবহন বাড়ছে। আগামীতে এ চাহিদা আরও বাড়বে। তবে কমলাপুর ডিপো সম্প্রসারণে প্রয়োজনীয় জায়গা নেই। এছাড়া কমলাপুর আইসিডির স্থলে মাল্টিমোডাল হাব নির্মাণ করা হবে। এজন্য ধীরাশ্রমে আইসিডি নির্মাণের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। প্রকল্পটির ব্যয় যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। ব্যয় নিয়ে কোনো অসংগতি পাওয়া গেলে তা খতিয়ে দেখে বাতিল করা হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০