চট্টগ্রামে আধুনিক কসাইখানা স্থাপন

প্রকল্প অনুমোদনের এক বছরেও কাজের অগ্রগতি নেই

মোহাম্মদ আলী, চট্টগ্রাম: প্রকল্প পাসের এক বছর অতিবাহিত হলেও চট্টগ্রামে ‘আধুনিক কসাইখানা স্থাপন’-এর কাজে অগ্রগতি নেই। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভায় প্রকল্প পাসের এক বছর পরও শুরু হয়নি কসাইখানা স্থাপনের কাজ। এখন পর্যন্ত প্রকল্প শুরুই করতে পারেনি সংশ্লিষ্ট অধিদপ্তর, যদিও ঢাকা ও খুলনার আগেই কসাইখানা স্থাপনের জন্য জায়গা পাওয়া গিয়েছিল চট্টগ্রামে। এখন পর্যন্ত প্রাপ্ত জায়গা কসাইখানা স্থাপনের জন্য উপযোগী কি না, তার সম্ভাব্যতাও যাচাই শেষ হয়নি। সম্পন্ন হয়নি ড্রয়িং ও ডিজাইনের কাজও। তবে প্রশিক্ষণসহ প্রকল্পের অন্যান্য কাজ চলছে বলে সংশ্লিষ্টরা জানান। পাশাপাশি চলছে জমি ব্যবহারের সম্ভাব্যতা যাচাই। গত বছরের ২৫ এপ্রিল গণভবনে এক অনুষ্ঠানে চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (চউক) চেয়ারম্যান জহিরুল আলম দোভাষের কাছে এ বিষয়ে অগ্রগতি জানতে চেয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২০১৮ সালের প্রথম দিকে আধুনিক ‘কসাইখানা’ নির্মাণে জায়গা নির্ধারণের জন্য চট্টগ্রাম জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসারকে চিঠি দিয়েছিলেন প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক। এরপর জায়গা চেয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন (চসিক) বরাবর চিঠি দেন জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার। এ বিষয়ে ২০১৮ সালের ৩ জুন নগর ভবনে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে বৈঠক করেন জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ডা. মোহাম্মদ রেয়াজুল হক। প্রকল্প বাস্তবায়নে জায়গা প্রদানে চসিকের আগ্রহের কথা একই বছরের জুলাইয়ে চিঠি দিয়ে প্রকল্প পরিচালককে জানিয়েছিলেন চসিকের প্রধান নির্বাহী মো. সামদুদ্দোহা।

প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের উদ্যোগে ‘লাইভস্টক অ্যান্ড ডেইরি ডেভেলপমেন্ট প্রজেক্ট (এলডিডিপি)’ শীর্ষক একটি প্রকল্প ২০১৮ সালের ৭ নভেম্বর একনেকে পাস হয়। পাঁচ বছর মেয়াদি প্রকল্পের প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয় চার হাজার ২০০ কোটি টাকা। বিশ্বব্যাংক এ অর্থ জোগান দেবে। এ প্রকল্পের আওতায় দেশের ঢাকা, খুলনা ও চট্টগ্রামে আধুনিক কসাইখানা নির্মাণ করা হবে। চট্টগ্রামের কসাইখানার জন্য খরচ হবে ৮৩ কোটি টাকা। একনেকে পাসের এক বছর এক মাস পরও চট্টগ্রাম বিভাগীয় উন্নয়ন সমন্বয় কমিটির সভায় প্রকল্পের চট্টগ্রাম অংশের অগ্রগতি শূন্য দেখিয়েছে চট্টগ্রাম বিভাগীয় প্রাণিসম্পদ দপ্তর।

জানা যায়, পশু জবাই ব্যবস্থাপনা ও পরিবেশ রক্ষায় আধুনিক কসাইখানা নির্মাণে নগরীর পুরোনো চান্দগাঁও থানা এলাকায় ৮৮ শতক জায়গা দেবে চসিক। প্রকল্পের আওতায় পাঁচতলাবিশিষ্ট একটি ভবন ছাড়াও থাকবে পশুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা, আইসোলেশন, স্মার্ট স্টকিং স্পেস সুবিধা, প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা ও রক্ত ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট শৃঙ্খলা। ম্যানুয়েল পদ্ধতিতে, অর্থাৎ হালালভাবে পশু জবাই, প্রয়োজনে জবাই করা পশুর মাংস ফ্র্রিজিং করা, পশুর রক্তকে পোলট্রি ফিডে রূপান্তর করা এবং অন্যান্য বর্জ্য শতভাগ রিসাইক্লিং ও ইটিপি করা হবে। এখানে এক দিনেই জবাই করা যাবে অন্তত ১০০ পশু। অপেক্ষায় রাখা যাবে আরও ৩০০ পশু। পশুর নাড়িভুঁড়ি, শিংসহ যেগুলো ফেলে দেওয়া হয়, এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সেগুলোও বিদেশে রপ্তানি করা যাবে। এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে নগরবাসী মানসম্পন্ন ও হালাল মাংস পাবে, পরিবেশ স্মার্ট থাকবে এবং ক্ষুরারোগসহ গবাদিপশুর নানা সংক্রামক রোগ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হবে। স্থাপনের পর কসাইখানাটি নিজে বা ইজারা দিয়ে পরিচালনা করবে চসিক।

জানা যায়, ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে চসিক কার্যালয়ে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে এই প্রকল্পের পরিচালক এবং মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব কাজী ওয়াছি উদ্দিন প্রকল্পটি নিয়ে মতবিনিময় করেন। সর্বশেষ প্রকল্প বিষয়ে গত ২৪ ডিসেম্বর মেয়র আজম নাছির উদ্দীনের সঙ্গে তিন সদস্যের বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিদল সাক্ষাৎ করে। পরে বিশ্বব্যাংক প্রতিনিধিরা ‘সøটার হাউস’ স্থাপনের স্থান পরির্দশন করেন।

প্রকল্পের অগ্রগতি নেই কেন জানতে চাইলে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রেয়াজুল হক বলেন, ‘প্রকল্পের কাজে মোটেও ধীরগতি নেই। মেগা প্রকল্প স্টেপ বাই স্টেপ করতে হয়। নিয়ম-কানুন আছে। সামাজিক, অর্থনৈতিক ও পরিবেশগত ইস্যু দেখতে হয়। বিভিন্ন পক্ষ থেকে বাধাও আসে। বর্তমানে জমি ব্যবহারের ফিজিবিলিটি টেস্ট ও ডিজিটাল সার্ভে চলছে। এরপর আলাপ-আলোচনা করে চসিকের সঙ্গে সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হবে। প্রকল্প বাস্তবায়নে আন্তর্জাতিক মানের প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দিতে হবে। ধীরেসুস্থে কাজ করলে ভালো।’

একই বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্পের উপপরিচালক পার্থ প্রদীপ সরকার শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রকল্প এখনও নেওয়াই হয়নি, শূন্য দেখানোর সুযোগ নেই। কসাইখানা নামে কোনো প্রকল্প নেই। এটা হচ্ছে অন্য একটা প্রকল্পের ছোট একটা কমপোনেন্ট। তিনটি সিটি করপোরেশনে এ প্রকল্পের কাজ করার সুযোগ আছে। কোথাও এখনও শুরু হয়নি। চট্টগ্রামে সম্প্রতি আমরা জায়গা পরিদর্শন করেছি। এটার ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে। জায়গা যেহেতু ঠিক হয়নি, তাই এখনও ডিজাইনও আমরা ফাইনাল করতে পারিনি। জায়গার পরিবেশগত দিকটা নিশ্চিত হলে আগামী ফেব্রুয়ারি নাগাদ কাজ শুরু হতে পারে। ক্যাপাসিটি বিল্ডিং নির্মাণ, প্রশিক্ষণসহ প্রকল্পের অন্যান্য কাজ চলছে। সøটার হাউসের কোনো কাজই এখনও শুরু হয়নি।’

এ ব্যপারে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা বলেন, ‘প্রকল্পের মেয়াদকাল কত, কেন শুরু হয়নি, তা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলতে পারবে। আমাদের দিক থেকে কোনো সমস্যা নেই। তারা যেভাবে চাইবে, আমরাও সেভাবে করে দেব।’

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০