Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 11:29 pm

প্রকল্প অনুমোদনের এক বছর পর দৈর্ঘ্য বেড়ে হচ্ছে দ্বিগুণ!

ইসমাইল আলী: রাজধানীর পূর্ব-পশ্চিমে সংযোগ বাড়াতে একটি মেট্রোরেল নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। এজন্য গত বছর অক্টোবরে হেমায়েতপুর থেকে ভাটারা পর্যন্ত এমআরটি লাইন-৫ (নর্দান রুট) শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন করা হয়েছে। এর এক বছর পর সম্প্রতি প্রকল্পটির রুট পরিবর্তনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। যদিও গত জুনে মেট্রোরেলটির বিস্তারিত নকশা প্রণয়ন ও নির্মাণকাজ তদারকিতে পরামর্শক নিয়োগ করা হয়ে।

তথ্যমতে, ঢাকায় তৃতীয় মেট্রোরেল হবে এমআরটি লাইন-৫-এর নর্দান রুট। এর দৈর্ঘ্য ধরা হয়েছে ১৯ দশমিক ৬০ কিলোমিটার। এর মধ্যে ১৩ দশমিক ৬০ কিলোমিটার মাটির নিচে ও বাকি ছয় কিলোমিটার উড়ালপথে হবে। মেট্রোরেলটি হেমায়েতপুর থেকে বালিয়াপুর, মধুমতী, আমিন বাজার, গাবতলী, দারুস সালাম, মিরপুর-১, মিরপুর-১০, কচুক্ষেত, বনানী, গুলশান-২ ও নতুন বাজার হয়ে ভাটারা যাবে। এ রুটে ১৪টি স্টেশন থাকবে, যার ৯টি মাটির নিচে ও পাঁচটি উড়ালপথে হবে। এমআরটি লাইন-৫-এর নর্দান রুটটির নির্মাণকাজ ২০২৭ সালের মধ্যে শেষ করার কথা রয়েছে।

হেমায়েতপুর-ভাটারা মেট্রোরেল নির্মাণে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪১ হাজার ২৩৮ কোটি ৫৫ লাখ টাকা। এর মধ্যে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থার (জাইকা) ঋণ দেওয়ার কথা রয়েছে ২৯ হাজার ১১৭ কোটি চার লাখ টাকা। বাকি ১২ হাজার ১২১ কোটি ৫১ লাখ টাকা সরকারের তহবিল থেকে সরবরাহ করা হবে।

যদিও মেট্রোরেলের রুটটি আরও ২২ কিলোমিটার সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এক্ষেত্রে হেমায়েতপুরের পরিবর্তে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত এবং ভাটারা থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জলসিঁড়ি আবাসন প্রকল্প পর্যন্ত বর্ধিত করা হবে মেট্রোরেলটি। এতে মেট্রোরেলের রুট বেড়ে দাঁড়াবে ৪১ দশমিক ছয় কিলোমিটার। ফলে মেট্রোরেলের নির্মাণব্যয়ও দ্বিগুণ আকার ধারণ করবে। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর শর্তের আলোকে মেট্রোরেলের রুটটি সম্প্রসারণ করতে হচ্ছে। সম্প্রতি এক বৈঠকে এ শর্ত দিয়েছে সেনাবাহিনী।

প্রসঙ্গত, হেমায়েতপুর-ভাটারা মেট্রোরেলটি ঢাকা সেনানিবাসের ভেতর দিয়ে যাবে। তাই এ প্রকল্প প্রসঙ্গে সেনাসদরের অনাপত্তি সংগ্রহের লক্ষ্যে সম্প্রতি একটি বৈঠকে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে ঢাকা সেনানিবাস অংশে এমআরটি লাইন-৫-এর অ্যালাইনমেন্টের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট সবার উপস্থিতিতে একটি প্রতিবেদন উপস্থাপন করে মিলিটারি ইনস্টিটিউট অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি (এমআইএসটি)। প্রকল্পটি বাস্তবায়নে পূর্ণ সহায়তার আশ্বাসও প্রদান করে সেনাবাহিনী। শিগগিরই এ-সংক্রান্ত  একটি সমঝোতা স্মারক সই করবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী ও ঢাকা ম্যাস র‌্যাপিড ট্রানজিট ডেভেলপমেন্ট কোম্পানি।

এমওইউ’র কয়েকটি উল্লেখ্যযোগ্য শর্তের মধ্যে রয়েছে ১. এমআরটি লাইন-৫ প্রকল্প কর্তৃপক্ষ সেনানিবাস কর্তৃপক্ষের কাছে প্রকল্পের সব পর্যায়ের তথ্য সরবরাহ করবে। এর মধ্যে রয়েছে মাটি পরীক্ষা, নকশা প্রণয়ন, টানেল নির্মাণকালে ভূমি ও নির্মাণ-সংক্রান্ত তথ্য এবং প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট যে কোনো অস্বাভাবিক পরিস্থিতি-সংক্রান্ত তথ্য। ২. প্রকল্প বাস্তবায়নের ফলে সেনানিবাস এলাকার পরিবেশগত কোনো ক্ষতি যাতে না হয়, সে ব্যাপারে প্রকল্প কর্তৃপক্ষ যথাযথ প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করবে। ৩. বিস্তারিত নকশা, চূড়ান্ত সম্পাদিত অ্যালাইনমেন্ট যথাযথ জিওরেফারেন্সিংসহ ও জরিপ অধিদপ্তর কর্তৃক যাচাইপূর্বক সেনানিবাস কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করবে। এছাড়া চূড়ান্ত অ্যালাইনমেন্ট ভূমি ওপরে যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে হবে। ৪. ঢাকা শহরের সম্ভাব্য যানজট নিরসনকল্পে প্রথম পর্যায়ে পরিকল্পিত এমআরটি লাইন-৫ প্রকল্প হেমায়েতপুর থেকে ১৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধ এবং ভাটারা থেকে ছয় কিলোমিটার দূরে অবস্থিত জলসিঁড়ি আবাসন পর্যন্ত বর্ধিত করার বিষয়ে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ যথাযথ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে সমন্বয়পূর্বক পদক্ষেপ গ্রহণ করবে। এমওইউ সইয়ের আগে উল্লিখিত চারটি শর্ত নিষ্পত্তি করা আবশ্যক বলে মনে করছেন সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগসংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে জানতে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলামকে একাধিকবার কল করলেও তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। ফলে তার বক্তব্যও জানা যায়নি।

সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রসঙ্গে বলেন, হেমায়েতপুর-ভাটারা মেট্রোরেলটি যেহেতু সেনানিবাসের ভেতর দিয়ে অতিক্রম করবে, তাই তাদের অনাপত্তি লাগবে। এজন্য তারা কয়েকটি শর্ত দিয়েছে। তবে প্রকল্প অনুমোদনের আগেই বিষয়গুলো সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। তবে প্রকল্প অনুমোদনে তাড়া থাকায় সে সময় এ অনাপত্তি নেওয়া হয়নি।

তিনি আরও বলেন, মেট্রোরেলের দৈর্ঘ্য আরও ২২ কিলোমিটার বাড়লে এর নির্মাণব্যয়ও প্রায় দ্বিগুণ আকার ধারণ করবে। এক্ষেত্রে জাইকার মতামত নিতে হবে। তারা বর্ধিত অর্থ দিতে সম্মত না হলে বিকল্প অর্থায়নের উৎস খুঁজতে হবে। এজন্য অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। বিষয়টি খুবই জটিল প্রক্রিয়া ধারণ করতে পারে।

উল্লেখ্য, হেমায়েতপুর-ভাটারা মেট্রোরেলের পরামর্শক হিসেবে কাজ করছে জাপানের নিপ্পন কোয়েই কোম্পানি লিমিটেড এবং ওরিয়েন্টাল কনসালটেন্টস গ্লোবাল কোম্পানি লিমিটেড। এজন্য ব্যয় হচ্ছে প্রায় এক হাজার ৬০০ কোটি টাকা।