বাংলাদেশের সংশ্লিষ্ট এলাকার বৈশিষ্ট্য বিবেচনায় নিয়ে সে অনুযায়ী, উন্নয়ন পরিকল্পনা সাজানোর আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। রোববার প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এক সভায় তিনি বলেন, বর্ষাকালে পানির গতি এক রকম থাকে, শীতকালে আবার নদী শান্ত, সাগর শান্ত। সেগুলো মাথায় রেখেই কিন্তু আমাদের পরিকল্পনা নেয়া উচিত।
প্রধানমন্ত্রী কৃচ্ছ্রসাধনে পরিমিতিবোধের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। এর মধ্যে রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে অপ্রয়োজনীয় সফর বন্ধে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই আমরা মনে করি। ‘রাষ্ট্রীয় খরচে বিদেশে অপ্রয়োজনীয় সফরে গেলাম না, কিন্তু দায়িত্বহীনতায় দেশে থেকেও অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নিয়ে ব্যক্তি স্বার্থ হাসিল সম্ভব। তাই অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প যেমন নেয়া যাবে না, তেমনই প্রয়োজনীয় প্রকল্পের অপ্রয়োজনীয় ব্যয়ও কমাতে হবে। আসলে কোনো অপ্রয়োজনীয় প্রকল্প নেই। সেগুলোকে ‘প্রয়োজনীয়’ দেখিয়েই গ্রহণ করা হয়। এমনও দেখা গেছে, প্রকল্পের কাজের বড় শেষ করার পর তা ‘অপ্রয়োজনীয়’ প্রমাণ হওয়ার পুরো প্রকল্পই বাতিল করতে হয়েছে। একটি প্রকল্প নেয়ার আগে কত ধরনের সম্ভাব্য যাচাই, পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হয়। এরপরও প্রকল্প বাতিল করা হয়েছে। বোঝা যায়, কেবল স্বার্থান্বেষী ব্যক্তি বিশেষের কিংবা গোষ্ঠীর স্বার্থ হাসিলের জন্যই প্রকল্প নেয়া হয়েছে, এটি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রাষ্ট্রের অর্থ খরচে পরিমিতি রোধের গুরুত্ব অপরিসীম। একটু ভুলের জন্য দেশের বড় ক্ষতি হতে পারে, হাজার কোটি টাকা গচ্ছা যেতে পারে। যে দেশের উদাহরণ সামনে রেখে সবাই সতর্ক হচ্ছে, সেই শ্রীলঙ্কার কথাই আমরা ভাবতে পারি। একসময় শ্রীলঙ্কা এ অঞ্চলের মধ্যে সবচেয়ে ভালো অর্থনীতির দেশ ছিল। মাত্র ১০-১৫ বছর আগেও শিক্ষা- পর্যটনশিল্প দেশটি এই অঞ্চলে এগিয়ে ছিল। সবকিছু মিলিয়ে শ্রীলঙ্কার অবস্থা খুবই ভালো ছিল। শ্রীলঙ্কার বর্তমান পরিণতির পেছনে একটাই কারণ, সাধ্যের বাইরে গিয়ে সরকারের ব্যয় বৃদ্ধি করা। দেশ-বিদেশের অর্থনীতিবিদরা বলছেন, শ্রীলঙ্কার এ অবস্থার জন্য বর্তমান সরকারই কেবল দায়ী নয়, গত ১০ বছরের ধারাবাহিকতায়ই আজকের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এ পরিস্থিতি এক দিনে তৈরি হয়নি।
অতএব আমাদেরও সচেতন হতে হবে। সময়ের এক ফোঁড়, অসময়ের দশ ফোঁড়। সতর্ক হওয়ার জন্য আমরা কোনোভাবেই অসময়ের অপেক্ষা করব না। বিপদ এলে দেখা যাবে, এ কথা ভেবে উদাসীন থাকা চলবে না। বিবেচনা বোধ ছাড়া পরিকল্পনা নেয়া যাবে না। নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে প্রকল্প শেষ করতে না পারলে প্রকল্প ব্যয় বাড়ে। দেয়া যায়, যে প্রকল্পে যে বরাদ্দ ধরা রয়েছে, সেটির দ্বিগুণ বা তিন গুণ খরচ করতে হয়। অতিরিক্ত ব্যয় এড়াতে সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ সম্পন্ন করতে হবে।
অতিরিক্ত ব্যয়ের জন্য প্রায়ই বিভিন্ন প্রকল্প প্রস্তাবে আপত্তি জানায় পরিকল্পনা কমিশন। আপত্তির পরিপ্রেক্ষিতে ব্যয় প্রস্তাব বাতিলের একাধিক দৃষ্টান্তও আছে। নতুন করে যেন এমন অপচয়, অপব্যয় কিংবা দুর্নীতি না হয়, সে লক্ষ্যে কোনো প্রকল্পে অপ্রয়োজনীয় খাতে অর্থ বরাদ্দের আগে নিবিড় নিরীক্ষা ও মূল্যায়ন করতে হবে।