নিজস্ব প্রতিবেদক: এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেন তৈরিতে ব্যয় বাড়ল ৪ হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা। সেই সঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে প্রায় সাড়ে তিন বছর। এ প্রকল্পটির সংশোধনী প্রস্তাবসহ ৩ প্রকল্প অনুমোদন দিয়েছে জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটি (একনেক)। এগুলো বাস্তবায়নে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৫ হাজার ১৮৯ কোটি ৬৯ লাখ টাকা। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে ২ হাজার ৮৫৫ কোটি টাকা, বাস্তবায়নকারী সংস্থা থেকে ৬৩ কোটি ৮৫ লাখ টাকা এবং বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২ হাজার ২৭০ কোটি ৭৬ লাখ টাকা ব্যয় করা হবে।
রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল অনুষ্ঠিত বৈঠকে এ অনুমোদন দেওয়া হয়। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন প্রধানমন্ত্রী ও একনেক চেয়ারপারসন শেখ হাসিনা। এ সময় পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব মো. আসাদুল ইসলাম গণভবনে উপস্থিত ছিলেন। একনেকের বাকি সদস্যরা ছিলেন রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে।
একনেক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফ করেন পরিকল্পনা বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম। তিনি জানান, প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় প্রয়োজনীয় কর্মকর্তাদের হঠাৎ করে বদলি হলে যাতে দ্রুত নতুন লোকদের প্রশিক্ষিত করা হয় সে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি (প্রধানমন্ত্রী) বলেছেন, কর্মকর্তাদের বদলিজনিত কারণে যাতে উন্নয়ন প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত না হয়। কর্মকর্তাদের অরিয়েন্টেশনের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। এছাড়া ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের একটি প্রকল্প অনুমোদন দিতে গিয়ে এটি বাস্তবায়নে প্রস্তাবিত সংস্থাটির নিজস্ব তহবিলের ৬৩ কোটি টাকা সরকারি তহবিল থেকে ব্যয়ের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। তবে এক্ষেত্রে তিনি বলেছেন, ভবিষ্যতে সিটি করপোরেশনগুলোকে অর্থনৈতিকভাবে স্বয়ংসম্পূর্ণ হতে হবে। যাতে প্রকল্প বাস্তবায়নে তারা বেশিরভাগ ব্যয়ই মেটাতে পারে।
আসাদুল ইসলাম আরও জানান, রাস্তা নির্মাণের ক্ষেত্রে যাতে পানি চলাচল বাধাগ্রস্ত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি বলেছেন, রাস্তা তৈরির সময় পর্যাপ্ত ব্রিজ, কালভার্ট রাখতে হবে এবং প্রয়োজনে হাওর-বাঁওড় অঞ্চলে রাস্তা এলিভেটেড করতে হবে। যাতে কারে প্রাকৃতিক
ভারসাম্য নষ্ট না হয়। এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন এটি একমাত্র চার লেন সড়ক হচ্ছে, যেখানে দুই পার্শ্বে ধীরগতির যানবাহন চলাচলের জন্য পৃথক লেন রাখা হয়েছে।প্রধানমন্ত্রী আরও বলেছেন, কোনো প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যদি মামলা হয় তাহলে সংশিষ্টদের দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। মামলার কারণে যাতে কোনোভাবেই প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত না হয়।
একনেকে অনুমোদিত প্রকল্পগুলো হচ্ছে, সোনাপুর-সোনাগাজী-জোরারগঞ্জ সড়ক উন্নয়ন প্রকল্প। সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প-২ এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ প্রকল্প এবং ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন এলাকার ট্রাফিক অবকাঠামো উন্নয়নসহ সড়ক নিরাপত্তা প্রকল্প।
ব্রিফিংয়ে জানানো হয়, ‘সাসেক সড়ক সংযোগ প্রকল্প: এলেঙ্গা-হাটিকামরুল-রংপুর মহাসড়ক চার লেনে উন্নীতকরণ’ প্রকল্পটি ৫ বছরে অগ্রগতি মাত্র ১১ শতাংশ। এ অবস্থায় ব্যয় বাড়ল চার হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা; যা মোট অনুমোদিত ব্যয়ের ৪০ শতাংশ। সেই সঙ্গে মেয়াদ বেড়েছে তিন বছর চার মাস। প্রকল্পটির মূল অনুমোদিত ব্যয় ছিল ১১ হাজার ৮৯৯ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ২ হাজার ৫৪৪ কোটি টাকা এবং এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি) থেকে ৯ হাজার ৩৫৪ কোটি ৯৬ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। গত আগস্ট মাস পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে তিন হাজার ১৪৫ কোটি ৭৫ লাখ টাকা; যা অনুমোদিত প্রকল্প ব্যয়ের ২৬ দশমিক ৪৪ শতাংশ। তবে প্রকল্পটির বাস্তব অগ্রগতি ১০ দশমিক ৭৬ শতাংশ। এখন প্রথম সংশোধনীর মাধ্যমে চার হাজার ৭৬৩ কোটি ৩৭ লাখ টাকা বাড়িয়ে প্রকল্পটির মোট ব্যয় দাঁড়াচ্ছে ১৬ হাজার ৬৬২ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে সরকারের তহবিল থেকে পাঁচ হাজার ৩৬ কোটি ৬৫ লাখ টাকা এবং এডিবির ঋণ থেকে ১১ হাজার ৬২৫ কোটি ৭২ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর।