প্রকল্প শেষের আগেই ভেঙে পড়ছে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর

নিজস্ব প্রতিবেদক: বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কবর সংরক্ষণে নিন্মমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারসহ নামফলক মুছে যাওয়ায় ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছে সংসদীয় কমিটি। ঘটনা তদন্তে সংসদ সচিবালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে দুটি পৃথক তদন্ত কমিটি গঠনের পাশাপাশি এর সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করেছেন কমিটির সদস্যরা। গতকাল সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে এ সুপারিশ আসে।

এদিকে গুলিস্তানে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবন নিয়ে বেসরকারি নাগরিক টেলিভিশন ‘একপেশে’ সংবাদ পরিবেশন করেছে এমন অভিযোগ তুলে ওই টেলিভিশনের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়েছে।

জানা গেছে, বৈঠকে লালমনিরহাট জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়া ও নামফলক মুছে যাওয়ার ছবি কমিটির নজরে আসে। পরে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। কমিটির সভাপতি শাজাহান খান নিজেই বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। তিনি বৈঠকে বলেন, বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবিতকালে নানাভাবে অবহেলিত হয়েছেন। মৃত্যুর পরও তাদের এই অবহেলা করা হচ্ছে। এটা হতে দেয়া যায় না। আমরা হতে দিতে পারি না। পরে লালমনিরহাটের ওই ঘটনা তদন্তের পাশাপাশি দেশের অন্য কোথাও এ ধরনের ঘটনা রয়েছে কি না তা তদন্ত করার সুপারিশ আসে বৈঠক থেকে।

এ বিষয়ে শাজাহান খান বলেন, সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের কবর বাঁধাই করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেখানে নিন্মমানের ম্যাটেরিয়াল ব্যবহার করা হচ্ছে। নির্মাণের কিছুদিনের মধ্যে নামফলক মুছে যাচ্ছে। কোথাও কোথাও বাঁধাই করার পর কবর ভেঙে পড়ছে। আমরা বলেছি এটা চলবে না। উন্নতমানের ম্যাটেরিয়াল ও নামফলকে অমোচনীয় কালি ব্যবহার করতে হবে। আমরা এসব কবর সরেজমিনে দেখে প্রতিবেদন দিতে বলেছি। ঘটনার তদন্ত করতে বলেছি। আমি নিজেও কোথাও গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের কবর জিয়ারত করছি। কাজের মান যাচাই করি।

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, বৈঠকে লালমনিরহাট জেলায় বীর মুক্তিযোদ্ধা সমাধি প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই ভেঙে পড়া ও নামফলক মুছে যাওয়ার কারণ উদঘাটনে জাতীয় সংসদ সচিবালয় ও মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে পৃথক দুটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয় এবং দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হয়।

নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়ে কমিটির সভাপতি বলেন, গুলিস্তানের মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের ভবন নিয়ে অতীতে অনেক অনিয়ম ছিল। কিন্তু আমি কমিটির সভাপতি হওয়ার পর ঘটনা তদন্ত করে নিয়মের মধ্য নিয়ে এসেছি। নাগরিক টিভি ওই ভবন নিয়ে প্রতিবেদন করেছে। কিন্তু তারা প্রতিবেদনে মন্ত্রণালয়, কল্যাণ ট্রাস্ট বা সংসদীয় কমিটি কারওই বক্তব্য নেয়নি। বিষয়টি নিয়ে মন্ত্রণালয় তাদের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছে। আমি নিজেও ফোন দিয়ে আমাদের বক্তব্য শুনতে বলেছি। কিন্তু তারা সেটা করেনি। এজন্য কমিটি বৈঠকে উষ্মা প্রকাশ করেছে এবং নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে বলেছে।

এ বিষয়ে সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, বৈঠকে তথ্য অধিকার আইন অনুসরণ না করে কোনো তথ্যউপাত্ত প্রচার বা প্রকাশ না করা এবং নাগরিক টিভির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কমিটি সুপারিশ করেছে।

বৈঠকে অভিজ্ঞ আইনজীবীদের মাধ্যমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে জমি/সম্পত্তি সংক্রান্ত মামলাগুলো পরিচালনার জন্য কমিটি সুপারিশ করে। এছাড়া, মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গুলিস্তান কমপ্লেক্স ভবনে অবৈধভাবে দখলকৃত দোকান, চিলেকোঠা, সিঁড়ি ও নবম তলায় দাহ্য পদার্থের দোকান দ্রুততম সময়ের মধ্যে খালি করার জন্য সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের গচ্ছিত অর্থে তেজগাঁওয়ের জমিতে বহুতল ভবন নির্মাণের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয় বলে সূত্র জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সম্মতি সাপেক্ষে এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণের সুপারিশ আসে বৈঠক থেকে। এছাড়া মুক্তিযোদ্ধা কল্যাণ ট্রাস্টের সাবেক উপ-মহাব্যবস্থাপক মো. সিরাজুল ইসলামের দুর্নীতি সংক্রান্ত সব তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার যাবতীয় পেনশন ও অন্যান্য সুবিধাদি বন্ধ রাখার জন্য কমিটি সুপারিশ করে।

শাজাহান খানের সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক, এ বি তাজুল ইসলাম, ওয়ারেসাত হোসেন বেলাল এবং মোছলেম উদ্দিন আহমদ বৈঠকে অংশ নেন। 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০