Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 2:56 am

‘প্রকাশনা রাজধানীকেন্দ্রিক হতে হবে, তা নয়’

শুধু সিলেট নয়, দেশের প্রকাশনা জগতে ‘চৈতন্য’ এখন পরিচিত নাম। প্রকাশনা অভিজ্ঞতা ও লেখক-পাঠকদের সাহিত্যভাবনা নিয়ে ‘চৈতন্য প্রকাশনী’র স্বত্বাধিকারী রাজীব চৌধুরী কথা বলেছেন শেয়ার বিজের সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন হাসান আদিল

শেয়ার বিজ: ‘চৈতন্য’র প্রতিষ্ঠাকালের

কথা বলুন…

রাজীব চৌধুরী: সৃষ্টিশীল সাহিত্যকে পৃষ্ঠপোষকতা করার স্বপ্ন নিয়ে ২০১৩ সালে ‘চৈতন্য’র যাত্রা শুরু। পথপরিক্রমা বিবেচনায় ‘চৈতন্য’ সঠিক পথ ধরেই এগিয়ে যাচ্ছে।

শেয়ার বিজ: ‘চৈতন্য’ থেকে এবারের বইমেলায় প্রকাশিত নতুন বই সম্পর্কে কিছু বলুন। এখন পর্যন্ত আপনার প্রকাশনা থেকে প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা কত?

রাজীব চৌধুরী: এবারের বইমেলায় প্রায় ৮০টি নতুন বই প্রকাশ করেছি। এর মধ্যে কবিতার বই ৩০টির মতো। এবার প্রকাশ হওয়া বইগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্যÑমোহাম্মদ সাদিকের ‘শফাত শাহের লাঠি’, শাহাদুজ্জামানের ‘কথা চলচ্চিত্রের’, মোস্তাক আহমাদ দীনের ‘মাটির রসে ভেজা গান’, সরকার আমিনের ‘প্রথম রাতের উপাসনা’। এছাড়া রয়েছে শহীদ ইকবালের ‘সাহিত্যের সমাজ-চশমা’ ও সাইয়েদ জামিলের ‘একজন ভূগোলবিদ’। মাসুদা ভাট্টির দুটি বই প্রকাশ করেছি আমরাÑ‘বাংলাদেশ উন্নয়ন গণতন্ত্র ও রাজনীতির সমীকরণ’ ও ‘আমাদের একটি দেশ আছে’। পাপড়ি রহমানের নির্বাচিত গল্প পাওয়া যাবে আমাদের প্রকাশনীতে। মুহম্মদ ইমদাদের দুটি বই ‘আধুনিক কবিতা বিষাদবৃক্ষের ফুল ও অন্যান্য প্রবন্ধ’; ‘অন্ধ পৃথিবীর জানালাগুলি’ও পাওয়া যাবে। পাশাপাশি মাসুদ খানের ‘প্রজাপতি ও জংলি ফুলের উপাখ্যান’, মুজিব ইরম প্রণীত ‘শ্রীহট্টকীর্তন’, জুয়েল মোস্তাফিজের ‘মেরাতুন্নেছা মনমহাজনের কথা’ ও ইমতিয়াজ মাহমুদের ‘পেন্টাকল’ প্রকাশ করেছি। অনুবাদগ্রন্থও বের করছি এবারের মেলায়। সালেহ ফুয়াদ অনূদিত ‘সালমান রুশদি ও মিছিলের রাজনীতি’ পাওয়া যাবে আমাদের ৬৩৪ ও ৬৩৫ নম্বর স্টলে। সারওয়ার চৌধুরী ভাষান্তর করেছেন ‘হারুকি মুরাকামির গল্প ও বচনামৃত’। ইয়াসুনারি কাওয়াবাতার গল্প ‘হাতের পাতায় গল্পগুলো’ শিরোনামে ভাষান্তর করেছেন কল্যাণী রমা।

‘চৈতন্য’র শুরু থেকে বর্তমান পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা প্রায় ৩০০ ছাড়িয়ে গেছে।

শেয়ার বিজ: ‘চৈতন্য’ কাদের লেখায় গুরুত্ব দেয় বেশি? প্রতিষ্ঠিত লেখকের, নাকি মানসম্মত লেখার?

রাজীব চৌধুরী: কবিতা, গল্প, উপন্যাস, প্রবন্ধ, অনূদিত বই, শিশুসাহিত্যের পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক বই প্রকাশে ‘চৈতন্য’ অত্যন্ত আন্তরিক। আমাদের সব সময়ের চাওয়া হচ্ছে ভালো মানের বইগুলো প্রকাশ করা। আমরা অনেক বই ইতোমধ্যে প্রকাশ করেছি, বিশেষ করে তরুণদের বই। এ কারণে ব্যবসায়িকভাবে যে খুব ভালো অবস্থানে আছি তা কিন্তু নয়। তবুও আমরা ভালো বইয়ের প্রকাশক হতে চাই। বই প্রকাশের ব্যাপারে অনেকে যোগাযোগ করছেন, তবে পাণ্ডুলিপি দেখার পরই তা প্রকাশের সিদ্ধান্ত নিচ্ছি। এ বিষয়টি আগামী দিনগুলোতেও অব্যাহত থাকবে। ২০১৫ বইমেলায় আমরা শতাধিক বই বের করেছিলাম। তার মধ্যে বেশিরভাগ বই-ই ছিল তরুণ লেখকদের। বাংলাদেশের তরুণ কবি-লেখকদের পৃষ্ঠপোষকতাই আমাদের স্বপ্ন। তারাই একদিন বড় লেখক হবেন। চৈতন্য সবার, আপনিও সহযোগিতা করতে পারেন।

শেয়ার বিজ: সাহিত্যাঙ্গনে পরিচিত এমন লেখকদের বই বের করেছেন?

রাজীব চৌধুরী: নবীন কবি ও লেখকদের বই প্রকাশের মাধ্যমে যাত্রা শুরু ‘চৈতন্য’র। প্রবীণ লেখকদের বইও প্রকাশ করেছি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য লেখক হচ্ছেনÑকবি মোহাম্মদ রফিক, মোহাম্মদ সাদিক, মাসুদ খান, মজনু শাহ, মোস্তাক আহমাদ দীন, আবু সাইদ ওবায়দুল্লাহ ও কামরুল হাসান।

শেয়ার বিজ: ‘চৈতন্য’ ঢাকার বাইরের প্রকাশনা হয়েও এ জগতে ভালো একটি অবস্থা তৈরি করে নিয়েছে। এর পেছনের গল্পটা বলুন…

রাজীব চৌধুরী: প্রকাশনা রাজধানীকেন্দ্রিক হতে হবে, তা কিন্তু নয়। এখন বিভাগীয় শহরগুলোয়ও প্রকাশনাশিল্প ভালো করছে। কারণ বই প্রকাশের সুযোগ-সুবিধাগুলো ঢাকার বাইরেও রয়েছে। সিলেট থেকে আমরা মূলধারার প্রকাশনীগুলোর মানের বই প্রকাশ করছি। ভালো লেখা, প্রডাকশন সবকিছুতেই দৃষ্টি কাড়ছে ‘চৈতন্য’। এটা সিলেটকেন্দ্রিক হলেও দেশের নবীন ও প্রবীণ লেখকদের মনোযোগ কাড়তে পেরেছে।

শেয়ার বিজ: এই যে বছরে মাত্র একবার বইমেলার আয়োজন হয়, এতে সাহিত্যের বিমূর্ত উপকারের দিকে না গিয়ে প্রকাশক হিসেবে যদি বলেনÑ‘এটা কী আদৌ ব্যবসাবান্ধব’?

রাজীব চৌধুরী: আমার মতে, প্রকাশকরা শুধু মেলায় বিক্রির জন্যই বই করেন না। তবে সারা বছর বিপণনের মাধ্যমে মোটামুটি ব্যবসা হয়। বইমেলার মূল আবেদনটা হলো: লেখক-পাঠকদের জন্য এটি একটি মিলনমেলা। নানা চিন্তা আর রুচির পাঠকের সমাগম ঘটে বলে বইমেলা আলাদা গুরুত্ব বহন করে সব সময়।