প্রকৃত দোষীদের আড়াল করতে লোকদেখানো অভিযান: টিআইবি

নিজস্ব প্রতিবেদক: রাজধানীর বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজ ভবনে আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর সরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন রেস্তোরাঁ ও ভবনে অভিযান চালাচ্ছে। এসব ‘লোকদেখানো’ অভিযান চালিয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানো ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা করছে বলে মনে করছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)।

গত ২৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বেইলি রোডে আগুনের ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল বৃহস্পতিবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা বলেছে টিআইবি। সংস্থাটির মতে, অভিযানে এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে, যাদের দুর্ঘটনার মূল কারণের সঙ্গে সম্পৃক্ততা নেই। অন্যদিকে প্রকৃত অপরাধীমহল বিচারহীনতা ভোগ করছে।

বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন সময়ে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধে আদালত বেশ কিছু নির্দেশনা দিয়েছেন। নানা সময়ে গঠিত তদন্ত কমিটি ও টাস্কফোর্স বেশ কিছু সুপারিশও প্রস্তাব করেছে। কিন্তু নিয়ন্ত্রণ ও তদারকি-সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর নিষ্ক্রিয়তা, দায়িত্বহীনতা, সমন্বয়হীনতা, পরিকল্পনার অভাব, অনিয়ম-দুর্নীতি এবং কর্মকর্তাদের জবাবদিহির ঘাটতির কারণে সুপারিশের বেশিরভাগ বাস্তবায়ন হয়নি।

বিজ্ঞপ্তিতে নিয়মিত বিরতিতে অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির ঘটনায় সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের দায় এড়িয়ে যাওয়ার সংস্কৃতিতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে টিআইবি। মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ডের পুনরাবৃত্তির কারণ রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব, দায়িত্বপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের নিষ্ক্রিয়তা, সমন্বয়হীনতা, দুর্নীতি, জবাবদিহির অনুপস্থিতি ও বিচারহীনতা বলে বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়। দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের আহ্বান জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক), সিটি করপোরেশন, ফায়ার সার্ভিসসহ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভিন্ন সংস্থা দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর বরাবরের মতো সমস্যার মূল কারণকে গুরুত্ব না দিয়ে লোকদেখানো অভিযান পরিচালনা করছে। অভিযানে এমন ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার করছে, যাদের নির্ধারিত দায়িত্বের সঙ্গে দুর্ঘটনার মূল কারণের কোনো সম্পৃক্ততা নেই। ফলে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নিজেদের দায় এড়ানোর ও প্রকৃত দোষী ব্যক্তিদের আড়াল করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ধারাবাহিক এই অগ্নিকাণ্ড ও প্রাণহানির পেছনে মূল কারণ ভবন নির্মাণে সংশ্লিষ্ট আইন অনুসরণ না করা এবং মালিক কর্তৃক ভবনে অনুমোদনবহির্ভূত কার্যক্রম পরিচালনা। এসব বিষয় তদারকির দায়িত্বে থাকা কর্তৃপক্ষ হিসেবে রাজউক, সিটি করপোরেশন ও ফায়ার সার্ভিস অনিয়মের বিষয়ে অবহিত। এসব প্রতিষ্ঠানের কিছু কর্মকর্তা-কর্মচারী অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে ত্রুটিপূর্ণ ভবনের অনুমোদন ও যথাযথভাবে তদারকি করছেন না। যোগসাজশের মাধ্যমে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যবসায়িক কার্যক্রম পরিচালনা করতে সহায়তা করে আসছেন তারা।

পুরান ঢাকায় একাধিকবার সংঘটিত ভয়াবহ অগ্নিদুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবি ২০২০ সালে ‘নিমতলী, চুড়িহাট্টা এবং অতঃপর পুরান ঢাকার অগ্নিনিরাপত্তা নিশ্চিতে সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক গবেষণা পরিচালনা করেছিল। ওই গবেষণায় দেখা যায়, বারবার মর্মান্তিক অগ্নিকাণ্ড সংঘটিত হওয়ার পরও রাজনৈতিক সদিচ্ছার ঘাটতি, ব্যবসায়ী, ভবনমালিক, জনপ্রতিনিধি ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যোগসাজশ এবং অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে আবাসিক এলাকায় অবৈধভাবে রাসায়নিক পদার্থের গুদাম ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নির্মাণ করা হয়।

গবেষণাটি পুরান ঢাকায় দাহ্য পদার্থ থেকে সংঘটিত অগ্নিকাণ্ডকে বিবেচনায় নিয়ে করা হয়। তবে প্রাপ্ত অভিজ্ঞতা ও ফল ঢাকা শহরের অন্যান্য অগ্নিদুর্ঘটনার ক্ষেত্রেও প্রাসঙ্গিক উল্লেখ করে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক বলেন, অগ্নিকাণ্ডের কার্যকর প্রতিরোধের লক্ষ্যে স্বল্প, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন নিশ্চিত করতে হবে। অবিলম্বে আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক ভবন এবং ঝুঁকিপূর্ণ বাণিজ্যিক কার্যক্রম নিয়ন্ত্রণে তদারকি ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে।

ইফতেখারুজ্জামান বলেন, অগ্নিকাণ্ডের জন্য প্রকৃত দায়ী ব্যক্তিদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে না পারায় নির্মম প্রাণহানির ঘটনা স্বাভাবিকতায় রূপ নিয়েছে। বিষয়টি সরকারসহ সংশ্লিষ্টদের কাছে সাধারণ মানুষের জীবনের মূল্য না থাকার দুঃখজনক উদাহরণ। নিরপরাধ ব্যক্তিদের হয়রানি না করে দায়িত্বে অবহেলা ও অনিয়ম-দুর্নীতির সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার বিরুদ্ধে জবাবদিহি ও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।

অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে পর্যাপ্ত ক্ষতিপূরণ দেয়া ও পুনর্বাসনের ব্যবস্থা করার দাবি জানিয়েছে টিআইবি।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০