Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 9:31 pm

প্রজনন স্বাস্থ্যে থাইরয়েড হরমোনের প্রভাব

থাইরয়েড হরমোন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিপাকীয় হরমোন; যা আমাদের গলার ঠিক সামনে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থি থেকে নিঃসৃত হয়। মানুষের বিপাক, ওজন নিয়ন্ত্রণ, দৈহিক ও মস্তিষ্কের বিকাশ, শ্বাসকার্য, দেহের তাপমাত্রা, হƒৎস্পন্দন ও শরীরের অন্যান্য মুখ্য কাজ নিয়ন্ত্রণ করে এই হরমোন। তাই গর্ভাবস্থায় থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা নিরীক্ষণ করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি ভ্রুণের বিকাশ ও শিশুর স্নায়বিক পরিপক্বতার জন্য জরুরি। যদি প্রয়োজনের তুলনায় কখনও এই হরমোন খুব বেশি অথবা খুব কম পরিমাণে নিঃসৃত হয়, তখনই নানা সমস্যার সৃষ্টি হয়। তবে চিকিৎসা নিলে হরমোনের মাত্রা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব।

পুরুষের তুলনায় নারীর থাইরয়েড হরমোন ঘাটতির ঝুঁকি প্রায় আট গুণ বেশি। এই সমস্যার সবচেয়ে বেশি ঝুঁকি দেখা দেয় প্রজননক্ষম বয়সে। থাইরয়েড সমস্যাজনিত বন্ধ্যত্ব, বারবার গর্ভপাত, গর্ভে সন্তানের মৃত্যু, গর্ভস্থ শিশুর বৃদ্ধি ও বিকাশে সমস্যা, সময়ের আগেই সন্তান প্রসব, গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ, প্রি-একলাম্পশিয়া, একলাম্পশিয়া ইত্যাদি নানা জটিলতা নারীর জীবনকে জটিল করে তোলে।

কেবল প্রজনন নয়, নারীদের থাইরয়েড হরমোনের ঘাটতি যথাযথভাবে ও যথাসময়ে চিকিৎসা করা না হলে আরও নানা জটিলতা দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে ওজন বৃদ্ধি ও রক্তে চর্বি বাড়ার কারণে পরবর্তী সময়ে হৃদ্রোগের ঝুঁকি বাড়া, কোষ্ঠকাঠিন্য, ক্লান্তিবোধ, অবসন্নতা, বিষণœতা, ঘুম ঘুম ভাব বা অনিদ্রা প্রভৃতি। এ ধরনের কোনো লক্ষণ বা ইতিহাস যদি থাকে বা ঝুঁকি থাকে, তাহলে দ্রুত একজন অভিজ্ঞ হরমোন বিশেষজ্ঞ বা এন্ড্রোক্রাইনোলজিস্টের পরামর্শ নিন।

কারা ঝুঁকিতে: পরিবারে কারও থাইরয়েডজনিত সমস্যার ইতিহাস থাকলে।

অতীতে যারা থাইরয়েডের জন্য চিকিৎসা নিয়েছেন। আগে গর্ভকালীন থাইরয়েড সমস্যা ছিল। যাদের বারবার গর্ভপাত, বন্ধ্যত্ব, গর্ভকালীন শিশুমৃত্যু, জন্মগত ত্রুটিসম্পন্ন শিশু জন্মদানের ইতিহাস আছে। তাই যেসব নারী সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করছেন, তারা অবশ্যই থাইরয়েড হরমোনের মাত্রা ঠিক আছে কি না, জেনে নিন। এছাড়া যারা দীর্ঘদিন ধরে থাইরয়েডের ওষুধ খাচ্ছেন, তারাও সন্তান নেয়ার পরিকল্পনা করলে একজন হরমোন বিশেষজ্ঞের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধের মাত্রা ঠিক করে নেবেন। শুধু তা-ই নয়, গর্ভকালীন নিয়মিত ফলোআপে থাকবেন।

অনেকের ধারণা, থাইরয়েডের সমস্যা থাকলে সন্তান নেয়া অনুচিতÑএটি ভুল। চিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে থাকলে ও নিয়মিত পরামর্শ নিয়ে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে সুস্থ শিশুর জন্মদান সম্ভব।

ডা. মারুফা মুস্তারী

সহকারী অধ্যাপক, এন্ডোক্রাইনোলজি ও মেটাবলিজম বিভাগ

বিএসএমএমইউ