প্রজনন স্বাস্থ্য দরকার সচেতনতা

প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের ধারণা খুবই কম। প্রজনন স্বাস্থ্য বলতে শুধু রোগের উপস্থিতি কিংবা অক্ষমতাকে বোঝায় না; বরং দৈহিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই প্রজননতন্ত্রের সুস্থ অবস্থাকে বোঝায়। প্রজনন স্বাস্থ্যের অনুষঙ্গ হচ্ছে কৈশোরের প্রজনন স্বাস্থ্য, নিরাপদ মাতৃত্ব, পরিবার পরিকল্পনা, মায়ের পুষ্টিসহ প্রজননতন্ত্রের সংক্রমণ, যৌনবাহিত রোগ, এইচআইভি বা এইডস, বিপজ্জনক গর্ভপাত প্রতিরোধ ও প্রতিকার, বন্ধ্যাত্বের চিকিৎসা ও প্রতিরোধ প্রভৃতি। পাশাপাশি নবজাতকের যথাযথ যত্ন নেওয়াকেও বোঝায়।

প্রজনন স্বাস্থ্যের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় মেনোপজ। জেনে রাখা দরকার, মেনোপজ কোনো রোগ নয় বরং প্রকৃতিগত। তবে এ সময় অনেক সমস্যা হতে পারে। বিষয়টিকে বুঝতে হবে নারী ও সঙ্গী বা স্বামীকেও। এ সময় স্বামীর সহযোগিতা বেশি প্রয়োজন। তাছাড়া বেশি বয়সে গর্ভধারণ করলে সাবধান থাকা উচিত, ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে হবে। এ সময়ে ডাক্তারের পরামর্শ মেনে চলতে হবে।

কৈশোরে শুরু হয় প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়গুলো, যা ধাপে ধাপে চলতে থাকে। তবে ঝামেলা বাড়িয়ে তোলে কম বয়সে বিয়ের প্রবণতা। এজন্য প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয় স্কুল পর্যায়ের পাঠ্যসূচিতে অন্তর্ভুক্ত করা থাকলেও লজ্জা বা জড়তার কারণে তা এড়িয়ে যাওয়া হয়। বিভিন্ন তথ্যে জানা যায়, বাংলাদেশে প্রতি লাখ জীবিত শিশু জন্ম দানকালে ৩২০ জন মায়ের মৃত্যু হয়। অধিকাংশের বয়স ১২ থেকে ১৯ বছরের মধ্যে। এর মূল কারণ প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে অজ্ঞতা। বৃদ্ধ বয়সেও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে।

জনস্বাস্থ্য বিষয়ে জাতিসংঘ জনসংখ্যা তহবিলের (ইউএনএফপিএ) এক সমীক্ষায় দেখা যায়, বাংলাদেশে ৫০ শতাংশ নারী প্রজননতন্ত্রের রোগে ভোগেন। কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে অযত্ম, অজ্ঞতা, অপরিচ্ছন্নতা ও দারিদ্র্য। এছাড়া বাংলাদেশের ৭০ শতাংশ নারী অপুষ্টিজনিত সমস্যায় ভোগেন। গর্ভবতী মায়েদের ৭৪ শতাংশ রক্তশূন্যতা, ৪৭ শতাংশের আয়োডিন ঘাটতি ও ৬০ শতাংশের ভিটামিন ‘এ’ ঘাটতি রয়েছে। রিপোর্টে আরও বলা হয়, গর্ভাবস্থায় সঠিক পুষ্টির অভাবে কম ওজন নিয়ে জন্ম নেওয়া শিশুর হার ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ। আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী, দেশে ৯০ শতাংশ শিশুই অপুষ্টির শিকার। এর মধ্যে মেয়েশিশুর হার বেশি। পুষ্টি সমস্যার কারণে এদেশের মানুষ দিন দিন খর্বাকৃতি হয়ে যাচ্ছে বলেও রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়।

পরিবার পরিকল্পনাও প্রজনন স্বাস্থ্যের অন্যতম অনুষঙ্গ। এ কর্মসূচি প্রজনন স্বাস্থ্যে অনেক প্রভাব ফেলে। আমাদের দেশের জন্য সাত ধরনের পরিবার পরিকল্পনা বা জš§নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি রয়েছে। এর মধ্যে নারীর জন্য পাঁচটি ও পুরুষের দুটি পদ্ধতি রয়েছে। নারীদের ব্যবহƒত পদ্ধতি হলো ওরাল পিল, নরপ্লট, ইনজেকশন, বন্ধ্যাকরণ ও আইআইবি। পুরুষদের পদ্ধতিগুলো হলো কনডম ও ভ্যাসেকটমি। কিন্তু গবেষণায় দেখা গেছে, বাংলাদেশ বিশ্বের সর্বনিন্ম কনডম ব্যবহারকারী দেশ। অর্থাৎ এখানে জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতিগুলো নারীরাই ব্যবহার করে থাকে। এর মধ্যে সবচেয়ে ব্যবহৃত হয় ওরাল পিল। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারে পুরুষের নেতিবাচক মনোভাবের কারণে নারীরা নানা যৌনবাহিত রোগের শিকার হচ্ছে।

যৌনবাহিত রোগের মধ্যে এইডসের মতো ভয়াবহ রোগে নারীরা আক্রান্ত হচ্ছে পুরুষের মাধ্যমে। ফলে শুধু প্রজনন স্বাস্থ্য নয়, গর্ভস্থ সন্তানও এ রোগের বাহক হতে পারে। এজন্য পুরুষের কনডম ব্যবহার নিরাপদ।

কোথায় নিরাপদ গর্ভপাত সম্ভব, প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্যসেবা পাওয়া যাবেÑতা সবাইকে জানতে হবে। এছাড়া নিরাপদ মাতৃত্বের জন্য গর্ভে সন্তান এলে নিয়মিত না গেলেও কমপক্ষে তিনবার ডাক্তারের কাছে যাওয়া বাঞ্ছনীয়। সবার সচেতন হওয়া প্রয়োজন দাই নয়, হাসপাতাল বা স্বাস্থ্যসেবা ক্লিনিকে গিয়ে সন্তান জন্ম দান করা উচিত। আসলে এসব শুধু নারীর একান্ত বিষয় নয়। সমানভাবে এটা পরিবারের দায়িত্ব, সর্বোপরি স্বামীর দায়িত্ব। এজন্য পুরুষের প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া প্রয়োজন।

মায়ের পুষ্টি এবং নবজাতকের পরিচর্যার বিষয়টিও প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়। সন্তান জন্মের পর মায়ের শরীরে অনেক ঘাটতি দেখা দেয়। তাই সন্তান গর্ভে থাকাকালীন যেমন মাকে পুষ্টিকর খাবার দেওয়া প্রয়োজন, তেমনি সন্তান জন্মের পরে নিজের ঘাটতি ও সন্তানকে দুগ্ধপান করানোর জন্যও পুষ্টিকর খাবার প্রয়োজন। বিষয়টি শুধু মায়ের ওপর নিভর্র করে না। স্বামী ও পরিবারের সবার নজর থাকা প্রয়োজন। তাহলে শুধু মা নয়, ভবিষ্যৎ সন্তানও সুস্থ ও সুস্বাস্থ্যের অধিকারী হবে। (চলবে)

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০