প্রজাতন্ত্রের কর্মচারীর জুয়াড়ির মতো আচরণ গ্রহণযোগ্য নয়

শেয়ারবাজারের উত্থান-পতন স্বাভাবিক বিষয়। এটি সব দেশেই ঘটে থাকে, যুক্তরাষ্ট্রের মতো সমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশেও হয়ে থাকে। কিন্তু অন্য দেশগুলোর সঙ্গে আমাদের মৌলিক তফাত এইÑতারা সচেতন হয় এবং পতন রোধে ব্যবস্থা নেয়। আমাদের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিলেও তা তেমন সুফল বয়ে আনে না। নিয়ন্ত্রক সংস্থা কিছু গৎবাঁধা পরামর্শ দেয়। যেমনÑবুঝেশুনে বিনিয়োগ করবেন। গুজবে কান দেবেন না। এ ধরনের গতানুগতিক পরামর্শ যে কেউ দিতে পারে।

শেয়ারবাজারকে দীর্ঘ মেয়াদে চাঙা রাখতে জুয়াড়ি এবং বাজার খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে কঠোর হতে হবে। তাদের নিষ্ক্রিয় করা গেলে বাজার দীর্ঘমেয়াদে স্থিতিশীল রাখা সম্ভব। সাধারণ বিনিয়োগকারী সর্বোচ্চ সতর্ক থাকলেও তারা ক্ষতি থেকে রেহাই পাবে না। কেননা কোনোভাবেই বাজার-খেলোয়াড়দের সঙ্গে পেরে উঠবে না তারা।

গতকাল শেয়ারি বিজে প্রকাশিত ‘ক্যাডার কর্মকর্তা থেকে জুয়াড়ি সর্দার: হিরুর কারণে পথে বসেছে লাখো বিনিয়োগকারী’ শীর্ষক প্রতিবেদন বাজার অব্যবস্থাপনাকেই সামনে এনেছে।

সরকারি আমলা বা কর্মচারীর কাজ হচ্ছে প্রজাতন্ত্রের অর্পিত দায়িত্ব পালন করা। এ দায়িত্বের পাশাপাশি অনেকেই নামে-বেনামে অল্প পরিসরে গোপনে বিনিয়োগ করে থাকেন। এটা নিয়ে কখনও কেউ প্রশ্ন তুলেনি। কিন্তু প্রথম শ্রেণির সরকারি কর্মকর্তা আবুল খায়ের কোনো ধরনের রাখঢাক না করে সরাসরি বাজারে জুয়া খেলায় মেতেছেন। বিষয়টি ‘ওপেন সিক্রেট’ থাকলেও তিনি কোনো বাধার সম্মুখীন হননি। শর্ত ভেঙে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের নামে ফটকাবাজি করছেন। জুয়ার আসর বসিয়ে সর্দার সেজেছেন। শেয়ার বিজের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হিরুর কারণে বেশ কয়েকটি ব্যাংকসহ অনেক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর পোর্টফোলিও তলানিতে চলে গেছে। এসব প্রতিষ্ঠানের পোর্টফোলিও ম্যানেজ করা হতো হিরুর নির্দেশে। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কিছু কর্মকর্তার সঙ্গে আঁতাত করে দীর্ঘদিন ধরে তিনি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে চলেছেন বলেও প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে।

সাধারণ বিনিয়োগকারীদের ব্যর্থতা হলো, হিরুদের চিনতে পারেননি তারা। চিনবেনই বা কীভাবে? হিরু ‘হিরো’ হিসেবেই মর্যাদা পেয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে। নইলে কী করে এ জুয়াড়ি বিদেশে রোড শোতে অংশ নেন! নিয়ন্ত্রক সংস্থার সহযোগিতা ছাড়া কি কয়েকশ কোটি টাকার পোর্টফোলিও তার নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব? যিনি নিয়ন্ত্রক সংস্থার আনুকূল্য পেয়ে থাকেন, সাধারণ মানুষ তো তাকে প্রভাবশালী হিসেবেই গণ্য করবে। শেষ পর্যন্ত কী হলো? অনেক বিনিয়োগকারী পথে বসেছেন।

পুঁজিবাজারের প্রাণ সাধারণ বিনিয়োগকারী। তাদের সুরক্ষা এবং তাদের বাজারে ধরে রাখতে নিয়ন্ত্রক সংস্থার সীমাবদ্ধতা রয়েছে বলে অভিযোগ বিনিয়োগকারীদের। এখন ওই অভিযোগ সত্য বলেই প্রমাণ হলো।

বিনিয়োগকারীরা গুজবে কান দেবেন না। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে কেন প্রশ্রয় পায় কারসাজিকারীরা? সরকারি কর্মকর্তা বাজারে খেলবে এটি অগ্রহণযোগ্য। তার ‘সরল বিশ্বাসে’র শিকার হয়ে বিনিয়োগকারীরা প্রলুব্ধ হয়েছেন, এটি বলা যায় না। ভাগ্য জয়মাল্য তাদেরই পরায়, উত্থান-পতনে যারা টিকে থাকতে পারে। কিন্তু হিরুদের তো নিষ্ক্রিয় করতে হবে। এটি সরকার ও নিয়ন্ত্রক সংস্থার দায়িত্ব। পুঁজিবার স্থিতিশীল করতে শূন্য সহনশীলতায় বাজার-খেলোয়াড়দের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০