Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 10:02 pm

প্রণোদনার অর্থ ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে যাচ্ছে না: ড. মসিউর

নিজস্ব প্রতিবেদক: প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান বলেছেন, ‘আমরা প্রায়ই নালিশ পাই, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প যেগুলো, তারা যথেষ্ট পরিমাণে ঋণ পাচ্ছে না। ঘটনা সত্য। কিন্তু তারাই কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে বেশি, আমাদের যেখানে বেশি কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা দরকার। প্রণোদনা প্যাকেজ কিন্তু তাদের কাছে যথেষ্ট পরিমাণে যাচ্ছে না।’

গতকাল বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিস (বিআইআইএস) আয়োজিত এফডিআই এবং ম্যাক্রো ইকোনমিকস ইন বাংলাদেশ ডিউরিং কভিড-১৯ শীর্ষক ওয়েবিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ড. মসিউর রহমান এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, ব্যাংকের দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই। ব্যাংকের যে লোকগুলো আছে, তাদের হয়তো কিছুটা অনাগ্রহ আছে। সেগুলো দূর করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে। ঋণ না দেওয়ার কারণ হলো ছোট শিল্প উদ্যোক্তাকে ব্যাংক যথেষ্টভাবে চেনে না। ছোট একটি ঋণ দেওয়ার যে ব্যয় তার তুলনায় বড় ঋণ দেওয়ার ব্যয় অনেক কম। এগুলো জেনেই বড় ঋণটা আগে দিয়েছে। তার মধ্যে অনেক খেলাপিও আছে।

তিনি আরও বলেন, খেলাপিদের সুযোগ দেওয়ার ফলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে যদি আমি দীর্ঘদিন খেলাপি হয়ে টিকে থাকতে পারি, তাহলে বোধ হয় আমিও সুযোগ পাব। রং ইনসেনটিভ সবসময় বিভিন্ন রং দিক নেয়। পলিসি রেটটা কমানো, এটার যথেষ্ট যুক্তি আছে। সিআরআর কমানোরও যথেষ্ট যুক্তি আছে। কারণ টাকা নিয়ে যদি ঋণ না দেন তাহলে সুদ বেশি দিতে হবে। সবগুলোই ঠিক আছে। ছোট উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ যাচ্ছে না, কারণ ব্যাংকাররা তাদের চেনেনই না এবং ব্যাংকারদের সঙ্গে তাদের যোগাযোগ কম।

ড. মসিউর রহমান বলেন, এখানে বোধ হয় সরকারের একটা বড় দায়িত্ব আছে। সরকার বা এনজিও দায়িত্ব নিয়ে ব্যাংকারদের সঙ্গে ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সম্পর্ক সৃষ্টি করতে পারে। সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে, তা অত্যন্ত সময়োপযোগী ও প্রশংসনীয়। কিন্তু সেই উদ্যোগটা বাস্তবায়ন করার জন্য যে প্রাতিষ্ঠানিক ক্ষমতা দরকার, সেখানে কিছুটা গ্যাপ রয়েছে। গ্যাপটা হলো বড় উদ্যোক্তারা ব্যাংকের কাছে পরিচিত। সেজন্য ব্যাংক একটু কার্পণ্যের সঙ্গে ছোট উদ্যোক্তাদের কাছে যাচ্ছে। এই কারণটা আরও গভীরভাবে দেখা উচিত, যাতে আরও যথেষ্ট পরিমাণ টাকা ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের কাছে যায় এবং টাকা আছে।

তিনি আরও বলেন, অভ্যন্তরীণ প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে অভ্যন্তরীণ বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। তবে বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ খুব দ্রুত বাড়বে বলে মনে হয় না, কারণ আমাদের প্রধান শিল্প তৈরি পোশাক শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার ক্ষমতা নেই মালিকদের। মহামারির সময় শ্রমিকদের বেতন দেওয়ার জন্য সরকারকে টাকা দিতে হয়েছে।

মসিউর রহমান আরও বলেন, বিদেশে যারা চিকিৎসা নিতে যান, তাদের বিদেশে খরচের ওপর একটা ট্যাক্স ধরা উচিত। ভালো চিকিৎসার জন্য অনেকেই বিদেশে যাবেন, সেটা ঠিক। কিন্তু তারা দেশে চিকিৎসা নিলে যে ব্যয় করতেন তা দেশেই থাকত। এজন্য দেশের বেসরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থার ওপর আরও নজরদারি বাড়ানো দরকার। একটি কাঠামোর মধ্যে এনে মনিটরিং করার ব্যবস্থা করতে হবে।

প্রধানমন্ত্রীর অর্থনৈতিক উপদেষ্টা বলেন, এফডিআই যদি ঋণ করে নেওয়া হয়, তাহলে খেয়াল রাখতে হবে এই ঋণ পরিশোধের জন্য আমাদের বৈদেশিক (রেমিট্যান্স এবং এক্সপোর্ট) আয় যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে কি নাÑকোনো একটা বেঞ্চমার্ক থেকে আমাদের ঋণের পরিমাণ যেভাবে বাড়ছে, আমাদের বিদেশি আয় সে পরিমাণে বাড়ছে কি না। সেই বিদেশি আয় হিসাব করার সময় দেখতে হবে আমাদের ইমপোর্ট কী পরিমাণে হতো? সেটা নরমালাইজড করা উচিত। এজন্য একটা অপশন সেখানে রাখা দরকার।

তিনি আরও বলেন, এফডিআই বলতে আমি বুঝি বিদেশিরা আমাদের দেশে বিনিয়োগ করছে। বিনিয়োগের একটা ঝুঁকি নিচ্ছে। বিনিয়োগের যে লাভ তারও একটা অংশ সে পাবে। আর যদি আমি ঋণ নিয়ে করি, তাহলে বিনিয়োগ হিসেবে সরাসরি বিবেচনা করা ঠিক হবে না। কারণ সেখানে আমাদের ওপর একটা দায় এসে পড়ছে। কিন্তু সরাসরি যদি বিনিয়োগ করে সে দায় আসছে না। রেমিট্যান্স হেলায়-ফেলায় খরচ না করে সংরক্ষণ করা উচিত। কারণ সামনে কী হবে এখনও বলা যাচ্ছে না। শ্রমিকরা কি সবাই দেশে ফিরে আসবে। ভবিষ্যৎ কী হবে, তার ঠিক নেই। তাই রেমিট্যান্স হেলায়-ফেলায় খরচ না করাই ভালো।

বিআইআইএস চেয়ারম্যান রাষ্ট্রদূত মো. ফজলুল করিমের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য রাখেন সিপিডির সম্মানীয় ফেলো প্রফেসর ড. মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. সায়েমা হক বিদিশা, বায়রার সাধারণ সম্পাদক শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান, ইউজিসির সদস্য প্রফেসর দিল আফরোজ, টিএমএসএস নির্বাহী পরিচালক প্রফেসর হোসনে আরা প্রমুখ।

এফডিআই ও ম্যাক্রো ইকোনমিকস নিয়ে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিআইআইএস রিসার্চ ডিরেক্টর ড. মোহাম্মদ মাহফুজ কবির। সমাপনী বক্তব্য রাখেন বিআইআইএস মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. ইমদাদ উল বারী।