শেখ আবু তালেব: ব্যাংকের মূল ব্যবসা তথা আয়ের উৎস হচ্ছে ঋণ বিতরণ। কিন্তু সেই ঋণ বিতরণ ঝিমিয়ে পড়েছে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা পালন করতে ব্যাংকগুলো শুধু প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ বাস্তবায়ন করছে। এতেই কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে ঋণ বিতরণের হার। ভোক্তাসহ অন্যান্য ঋণ বিতরণে তেমন আগ্রহ নেই। বিশ্লেষকরা বলছেন, ঋণ চাহিদা তৈরি করতে হবে। ঋণ বিতরণের প্রধাগত পদ্ধতির দেয়াল ভেঙে নতুন উপায় বের করতে হবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল সূত্রে জানা গেছে, ব্যাংকগুলো নতুন করে তেমন ঋণ বিতরণ করছে না। শুধু সরকার ও বাংলাদেশ ব্যাংক ঘোষিত প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজই বাস্তবায়নের কাজ করছে। এতে ব্যাংকগুলোয় জমা পড়ছে অতিরিক্ত তারল্য। ঋণ বাড়াতে না পারলে চলতি বছরে সমস্যা না হলেও আগামী বছর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। ব্যাংকের উদ্যোগেই ভালো গ্রাহক খুঁজে বের করা প্রয়োজন।
জানা গেছে, ব্যাংক খাতে গত মার্চ শেষে ঋণ বিতরণের স্থিতি ছিল ১২ লাখ ৯১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। এই সময়ে আমানতের পরিমাণ ছিল ১১ লাখ ৩৬ হাজার ৪১৪ কোটি টাকা। আমানত ও ঋণ প্রবৃদ্ধির হার ছিল যথাক্রমে ১১ ও ১১ দশমিক ৪৬ শতাংশ। ঋণের মধ্যে আগামের পরিমাণ ছিল ১০ লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। বিেিনয়োগ ছিল দুই লাখ ১৯ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা।
গত আগস্ট শেষে আমানতের স্থিতি দাঁড়িয়েছে ১২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকা। অপরদিকে ঋণ স্থিতি হয়েছে ১৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা। এর মধ্যে আগামের পরিমাণ হচ্ছে ১০ লাখ ৮১ হাজার কোটি টাকা। বিনিয়োগের স্থিতি হচ্ছে দুই লাখ ৮০ হাজার কোটি টাকা।
ঋণ চাহিদা সৃষ্টির বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা অফিসের সাবেক লিড ইকোনমিস্ট ড. জাহিদ হোসেন শেয়ার বিজকে বলেন, ‘ব্যাংকের ঋণ চাহিদা আসে বিভিন্ন খাত থেকে। যেমন উদ্যোক্তাদের মূলধন জোগান, আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম, বিনিয়োগ ও ভোক্তা ঋণ বিতরণ। কভিড-১৯-এর কারণে এসব কার্যক্রমে বিশ্বব্যাপী অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। বিশ্ববাণিজ্য কবে স্থির হবে, তা এখনই বলা যাচ্ছে না। এজন্য স্থানীয় পর্যায়ে ঋণ চাহিদা তৈরি করতে হবে। কুটির, মাইক্রো, ক্ষুদ্র, মাঝারি (সিএমএসএমই) খাতের উদ্যোক্তাদের সহজ শর্তে ও বিশেষ সুদে ঋণ দিতে হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘এসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের ঋণ বা প্রণোদনা দেওয়া বিদ্যমান ব্যাংকিং নিয়মে সম্ভব নয়। ব্যাংকগুলোও দিতে পারবে না, কারণ অনেকেরই ব্যাংক হিসাব পর্যন্ত নেই। অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে স্থানীয় পর্যায়ে চাহিদা তৈরি তাদের জন্য বিশেষ নিয়ম করা প্রয়োজন, যাতে অর্থনীতিতে চাহিদা তৈরি হয়। আবার ক্রেতাদের ক্রয় সক্ষমতা বৃদ্ধিতেও প্রণোদনার ব্যবস্থা করতে হবে।’
জানা গেছে, করোনা মহামারিতে বিপর্যস্ত অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে সরকার সোয়া লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা ঋণ প্যাকেজ ঘোষণা করে। এর মধ্যে ৮৫ হাজার কোটি টাকা সরাসরি বাংলাদেশ ব্যাংক নিয়ন্ত্রণ করছে। প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পর গত মে মাস থেকেই ব্যাংকগুলো এটি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস্-উল-ইসলাম শেয়ার বিজকে বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে প্রণোদনা প্যাকেজ বাস্তবায়নই আপাতত যথেষ্ট। এটির বাস্তবায়িত হলে অর্থনীতি ও ব্যাংক খাত উপকৃত হবে। এজন্য আমরা প্রণোদান প্যাকেজ ঋণ বাস্তবায়নে সাপ্তাহিক বন্ধের দিনেও কাজ করে যাচ্ছি। ব্যাংকাররা চেষ্টা করে যাচ্ছেন।’
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেসরকারি খাতের এক ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক বলেন, ‘এখন প্রণোদনার ঋণ বাস্তবায়নই প্রধান কাজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ব্যাংকের ৯০ শতাংশ কার্যক্রম হচ্ছে প্রণোদনা ঘিরেই। আমানত সংগ্রহ ঋণ বিতরণ নিয়ে ব্যাংকগুলো তেমন আগ্রহী নয়। কারণ হচ্ছে, ব্যাংক খাতে পর্যাপ্ত তারল্য রয়েছে। আবার খেলাপির বিপরীতে নতুন করে প্রভিশন সংরক্ষণ এ বছর করার প্রয়োজন হবে না। তাই মুনাফা নিয়েও কেউ চিন্তিত নয়।’
তিনি বলেন, ‘এখন ব্যাংকগুলো ঋণ আবেদন আগের চেয়ে বেশি যাচাই-বাছাই করছে। ঋণ ফেরত আসার পুরো নিশ্চয়তা না পেলে আবেদন মঞ্জুর করছে না। এটিও সত্যি, পুরোনোরাই বেশি আবেদন করছেন। নতুন আবেদন একেবারেই কম বলে তিনি উল্লেখ করেন।’