নিজস্ব প্রতিবেদক: ঋণ প্রদানে বিদ্যমান প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে কভিড-১৯ পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকার ঘোষিত প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে এসএমই উদ্যোক্তারা এখনও প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা পাননি। এজন্য বর্তমান পরিস্থিতিতে ঋণ প্রক্রিয়া দ্রুত সহজীকরণ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
গতকাল ঢাকা চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (ডিসিসিআই) আয়োজিত ‘কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের অর্থায়ন ও বর্তমান পরিস্থিতিতে উত্তরণ’ শীর্ষক ওয়েবিনারে আলোচকরা এসব কথা বলেন। এছাড়া প্রান্তিক পর্যায়ের উদ্যোক্তাদের কাছে ঋণ সহায়তার আওতায় নিয়ে আসার জন্য বিসিক, এসএমই ফাউন্ডেশন ও পিকেএসএফ প্রভৃতির মতো প্রতিষ্ঠানগুলোকে ঋণ সহায়তা প্রদানের কার্যক্রমে অন্তর্ভুক্তিকরণেরও দাবি জানানো হয় সভায়।
ওয়েবিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো. নাসের। সেমনিারে বিভিন্ন ব্যাংকের এসএমই শাখার প্রধানরা বিদ্যমান ঋণ পরিস্থিতির ওপর মতবিনিময় করেন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক আবু ফারাহ মো. নাসের বলেন, কভিড পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি এবং ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ড অব্যাহত রাখার জন্যই মূলত প্রণোদনার প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়েছে। তিনি জানান, ২০১৯ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলো ২ লাখ ১৯ হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে এবং প্যাকেজের আওতায় উদ্যোক্তাদের ঋণ সহায়তা প্রদানে ফিন্যান্সিয়াল লিটারেসি কোনো প্রতিবন্ধকতা নয়।
তিনি বলেন, উদ্যোক্তাদের সমস্যা সমাধানে দেশের বাণিজ্য সংগঠনগুলো বেশ এগিয়ে এসেছে এবং এ ব্যাপারে ব্যাংকগুলোকে সহযোগিতার মনোভাব নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। তিনি এ পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের ঋণ নেওয়া এবং তাদের ঋণ ব্যবহারের সক্ষমতা খতিয়ে দেখার জন্য ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানান। পাশাপাশি উদ্যোক্তাকে নিজেদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাতকরণে সাপ্লাইচেইন ব্যবস্থাপনার ওপর আরও বেশি মনোযোগী হওয়ার ওপর জোরারোপ করেন। তিনি প্রণোদনা প্যাকেজের ঋণ সহায়তাটি ‘ওয়ার্কিং লোন’-এর ন্যায় ‘টার্ম লোন’ হিসেবে বিবেচনা করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে বলে আশ্বাস দেন।
স্বাগত বক্তব্যে ঢাকা চেম্বারের সভাপতি শামস মাহমুদ বলেন, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধি অর্জনে কটেজ, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। তিনি বলেন, এ খাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ১৩ মিলিয়ন, যারা দেশের মোট কর্মসংস্থানের ৩৫.৪৯ শতাংশের জোগান দিচ্ছে।
তিনি বলেন, কভিড-১৯ মহামারির কারণে দেশের অন্যান্য খাতের মতো ‘কুটির, অতি ক্ষুদ্র, ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তারা মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন এবং এ অবস্থা উত্তরণে সরকার ইতোমধ্যে ২০ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে, তবে উদ্যোক্তারা ব্যাংক থেকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ সহায়তা ও প্রয়োজনীয় তথ্য পেতে বেশ চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন।
তিনি জানান, ঢাকা চেম্বার ইতোমধ্যে বিভিন্ন খাতের উদ্যোক্তাদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছে এবং উদ্যোক্তারা বেশিরভাগই, প্রণোদনা প্যাকেজ হতে প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা না পাওয়ার বিষয়টিকে বর্তমান পরিস্থিতিতে অন্যতম কারণ হিসেবে চিহ্নিত করেছেন। তিনি বলেন, কভিড পরিস্থিতি মোকাবিলায় বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ঋণ সহায়তা পাওয়া দ্রুততর করার জন্য ঋণ প্রদানের প্রক্রিয়া আরও সহজীকরণের আহ্বান জানান।
ডিসিসিআই’র ঊর্ধ্বতন সহ-সভাপতি এনকেএ মবিন বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে উদ্যোক্তাদের সহায়তার লক্ষ্যে ঢাকা চেম্বার সম্প্রতি ‘এসএমই ডেভেলপমেন্ট বিভাগ’ চালু করে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপিতে এসএমই খাতের অবদান ২৫% এবং এ খাতে মোট কর্মসংস্থানের প্রায় ৩৫.৫% লোক জড়িত, যারা মোট রপ্তানিতে প্রায় ৭৫-৮০% অবদান রাখছে। তিনি বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে এ খাতের উদ্যোক্তাদের বিক্রি প্রায় ৩৫% কমে গেছে এবং উদ্যোক্তাদের প্রায় ৬২.৪% কর্মচারীদের বেতন-ভাতাসহ ট্যাক্স, ভ্যাট প্রদানে সক্ষমতা হারিয়েছে।
তিনি বলেন, ব্যাংক থেকে ঋণ সহায়তা পেতে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুতকরণে উদ্যোক্তারা নানা ধরনের চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হচ্ছেন এবং ডিসিসিআই পরিচালিত জরিপে দেখা যায়, ৫৯% ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তা মনে করেন। ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে ঋণ সহায়তা পাওয়ার প্রক্রিয়া বেশ জটিলতর। উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় তিনি ঋণ প্রদানের পদ্ধতি সহজতর করা এবং প্রণোদনার প্যাকেজ হতে ঋণ প্রদানের গতি আরও বেগবান করার আহ্বান জানান।
নির্ধারিত আলোচনায় বাংলাদেশ ক্ষুদ ও কুটির শিল্প করপোরেশনের (বিসিক) মহাব্যবস্থাপক আখিল রঞ্জন তরফদার, এসএমই ফাউন্ডেশনের মহাব্যবস্থাপক মো. নাজিম হাসান সাত্তার এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব ফেরদৌসি বেগম অংশগ্রহণ করেন।