Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:27 am

প্রণোদনা প্যাকেজ থেকে ছয় ব্যাংকের কৃষিঋণ বিতরণ শূন্য

জয়নাল আবেদিন: প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণার পাঁচ মাস পার হয়ে গেলেও কৃষি খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি ছয় ব্যাংক। আর নামসর্বস্ব বিতরণ করে আরও ১২ ব্যাংক শূন্যের খাতা থেকে নাম কাটিয়েছে। বাকিরা এই ঋণ বিতরণ করলেও শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি কেউই।

আগস্ট শেষে সরকার ঘোষিত কৃষি প্যাকেজ থেকে বিতরণ করা হয়েছে মোট এক হাজার ১১৪ কোটি ১৬ লাখ টাকা, যা ৪৩ ব্যাংকের মোট নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ২৫ শতাংশ। ঋণগুলো ৪৬ হাজার ৮১৫ কৃষকের মাঝে বিতরণ করা হয়েছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ইচ্ছাকৃতভাবেই কৃষি খাতে ঋণ দিতে চায় না ব্যাংকগুলো। পরিচালনা ব্যয় বেশি হওয়ার কারণেই এই অনীহা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, জনতা ব্যাংক, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, সীমান্ত ব্যাংক এবং ইউনিয়ন ব্যাংক এ খাতে কোনো ঋণ বিতরণ করেনি। এর মধ্যে জনতা ব্যাংকের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১২০ কোটি টাকা, কমার্স ব্যাংকের লক্ষ্য ছিল সাত কোটি, মধুমতি ব্যাংকের দুই কোটি, ওয়ান ব্যাংকের ৬২ কোটি, সীমান্ত ব্যাংকের এক কোটি ও ইউনিয়ন ব্যাংকের ২২ কোটি টাকা।

আলোচ্য সময়ে নামসর্বস্ব কৃষিঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, আইএফআইসি ব্যাংক, যমুনা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, এনআরবি ব্যাংক, এনআরবি গ্লোবাল, প্রাইম ব্যাংক, সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক, সাউথ বাংলা এগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স ব্যাংক, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক ও ট্রাস্ট ব্যাংক। তবে এগুলোর বিতরণ এক কোটি টাকার নিচে।

প্রসঙ্গত, গত মার্চে দেশে মহামারি করোনার প্রকোপ শুরুর পর স্থবির হয়ে পড়া অর্থনীতিতে বড় সংকটের মুখে পড়ে কৃষি খাত। কৃষি বাঁচাতে সরকার এ খাতে পাঁচ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা ঘোষণা দেয়। এর অংশ হিসেবে ৪৩ ব্যাংককে চার হাজার ৪০৩ কোটি টাকা ঋণ বিতরণের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে দেয় কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সেই নির্দেশনা মেনে ব্যাংকগুলো ২৫ দশমিক ৩০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।

প্রণোদনার এই ঋণ বিতরণে সবচেয়ে এগিয়ে রয়েছে বিশেষায়িত ব্যাংকগুলো। আগস্ট শেষে ৬২০ কোটি টাকার প্রণোদনা কৃষিঋণ বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। অন্যদিকে রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক বিতরণ করেছে ১৩৮ কোটি টাকা। সরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে এগিয়ে আছে রূপালী ব্যাংক লিমিটেড। আলোচ্য সময়ে ব্যাংকটি বিতরণ করেছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা, যা তাদের নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার ৫৭ দশমিক ৬৭ শতাংশ। বেসরকারি ব্যাংকগুলোর মধ্যে সবচেয়ে বেশি বিতরণ করেছে এক্সিম ব্যাংক। ৭৬ কোটি টাকা বিতরণের মাধ্যমে ব্যাংকটি ৬০ শতাংশ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করেছে।

এ বিষয়ে বিশ্বব্যাংকের ঢাকা কার্যালয়ের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন, করোনা ও বন্যায় কৃষকরা বিপদে আছেন। তাদের পাশে দাঁড়ানো উচিত। কৃষকের জন্য ঘোষিত প্রণোদনার টাকা সব ব্যাংক দিতে পারলে উল্লিখিত ছয় ব্যাংক কেন এক টাকাও দিতে পারল না, এর ব্যাখ্যা তলব করতে পারে বাংলাদেশ ব্যাংক। এখানে তারল্যের সমস্যা হওয়ার কথা নয়। কারণ তারল্যের জোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই। তাহলে মূল সমস্যা কোথায় তা খতিয়ে দেখা উচিত।