বিশেষ প্রতিনিধি: বিদ্যুৎ খাতে বিশেষত জ্বালানি তেল ও কয়লা আমদানিতে প্রয়োজনীয় ডলার বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে না। এতে পায়রা বিদ্যুৎকেন্দ্র গত মাসে বন্ধ হয়। রামপালও কয়লা সংকটে ৩০ জুলাই তৃতীয় দফা বন্ধ হয়ে গেছে। একই কারণে ধুঁকছে বরিশাল কয়লা বিদ্যুৎকেন্দ্রটি। ৩৪টি ফার্নেস অয়েলচালিত বিদ্যুৎকেন্দ্রও আংশিক বা পুরোপুরি বন্ধ। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধেও জটিলতা তৈরি করছে ডলার সংকট।
বর্তমান অবস্থায় লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত জরুরি ভিত্তিতে দরকার ৩৭৬ কোটি ডলার। তা না হলে লোডশেডিং থেকে মুক্তি নেই বলে মনে করছেন বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) কর্মকর্তারা। পাশাপাশি ছয় মাসে পিডিবির ঋণ পরিশোধেও ১১ কোটি ডলারের বরাদ্দ লাগবে। এজন্য প্রতিদিন গড়ে কমপক্ষে দেড় কোটি (১৫ মিলিয়ন) ডলার দরকার। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রতিদিন গড়ে এক কোটি বা ১০ মিলিয়ন ডলার ছাড় করছে।
পিডিবির এক প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। এতে লোডশেডিং থেকে মুক্তি পেতে প্রয়োজন অনুপাতে ডলার বরাদ্দ দেয়ার অনুরোধ করা হয়। এতে বলা হয়েছে, গত বছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে প্রকৃত ব্যয়িত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ ২৬৮ দশমিক ৩ কোটি ডলার। তবে বিদায়ী অর্থবছরের জুন পর্যন্ত বকেয়া বিলের পরিমাণ ৯৭ দশমিক ৭ কোটি ডলার।
বকেয়া বিল বাদ দিলেও চলতি অর্থবছর জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ২৮৯ দশমিক ১ কোটি ডলার পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা প্রয়োজন। অর্থাৎ বকেয়া বাদ দেয়ার পর চলতি অর্থবছরের প্রথম ছয় মাসের বৈদেশিক মুদ্রার চাহিদা গত অর্থবছরের একই সময়ের কাছাকাছি। বর্তমানে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন গড়ে ১০ মিলিয়ন ডলার বিদ্যুৎ খাতে প্রদান করছে। তবে ন্যূনতম ১৫ মিলিয়ন ডলার প্রদান করা হলে বৈদেশিক মুদ্রার অধিকাংশ বিল পরিশোধ করা সম্ভব হবে।
পিডিবির তথ্যমতে, কয়লা ও ফার্নেস অয়েল আমদানি এবং ভারতের বিদ্যুতের বিল পরিশোধে চলতি অর্থবছর জুলাইয়ে দরকার হবে ৪৯৪ মিলিয়ন ডলার, আগস্টে ৫১৩ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ৫০১ মিলিয়ন, অক্টোবরে ৪৯৩ মিলিয়ন, নভেম্বরে ৩৭৮ মিলিয়ন ও ডিসেম্বরে ৪০১ মিলিয়ন ডলার। এছাড়া গত অর্থবছরের বিল জুন পর্যন্ত বকেয়া রয়েছে ৯৭৭ মিলিয়ন ডলার।
চলতি অর্থবছর জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে ফার্নেস অয়েল আমদানিতে লাগবে ১১৭ কোটি ১০ লাখ ডলার, কয়লা আমদানিতে ১২৮ কোটি ১০ লাখ ডলার এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে লাগবে ১৩০ কোটি ৪০ লাখ ডলার। সব মিলিয়ে খরচ হবে ৩৭৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার। এর মধ্যে জুলাই মাসে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৪১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লা আমদানিতে ৯৭ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার। আগস্টে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৪১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার।
একইভাবে সেপ্টেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২৩৩ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১২ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার। অক্টোবরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ২২১ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১৬ মিলিয়ন ডলার। আর ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধে অক্টোবরে লাগবে ১৫৬ মিলিয়ন ডলার।
অন্যদিকে নভেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ১১৬ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১১২ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধে অক্টোবরে লাগবে ১৫০ মিলিয়ন ডলার। একইভাবে ডিসেম্বরে ফার্নেস অয়েল আমদানির বিল বাবদ লাগবে ১২০ মিলিয়ন ডলার ও কয়লার বিল ১৩৫ মিলিয়ন ডলার। ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল পরিশোধে লাগবে ১৪৬ মিলিয়ন ডলার।
এর বাইরে জুন পর্যন্ত কয়লা আমদানির বিল বকেয়া রয়েছে ৫৯৩ মিলিয়ন ডলার এবং ভারত থেকে বিদ্যুৎ আমদানির বিল বকেয়া ৩৮৪ মিলিয়ন ডলার। এগুলো পরিশোধ না করায় বিদ্যুৎ খাতে বোঝা যুক্ত হয়েছে। এছাড়া বিদেশি ঋণের কিস্তি দিতেও বাড়তি ডলার লাগবে। এর মধ্যে জুলাইয়ে পিডিবির ইসিএ (এক্সপোর্ট ক্রেডিট এজেন্সি) ঋণের কিস্তি রয়েছে ২৪ মিলিয়ন ডলার, আগস্টে ১২ মিলিয়ন, সেপ্টেম্বরে ১৭ মিলিয়ন, অক্টোবরে ২২ মিলিয়ন, নভেম্বরে সাত মিলিয়ন ও ডিসেম্বরে ৩০ মিলিয়ন ডলার। সব মিলিয়ে ঋণের কিস্তি লাগবে ১১২ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ডিসেম্বর পর্যন্ত বিদ্যুৎ খাতে মোট বৈদেশিক মুদ্রা লাগবে ৩৮৬ দশমিক ৮ কোটি ডলার।