Print Date & Time : 23 June 2025 Monday 3:34 am

প্রতিদিন ১৬৩৭ কোটি টাকা মোবাইলভিত্তিক লেনদেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনাভাইরাসের সংকটময় সময়ে অর্থ লেনদেনের অন্যতম ভরসা মোবাইল ব্যাংকিং। সাধারণ মানুষ থেকে শুরু করে ব্যবসায়িক প্রয়োজন সব ক্ষেত্রেই বাড়ছে মোবাইলভিত্তিক লেনদেন। তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর কিংবা গ্রামে সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের জনপ্রিয়তা ক্রমেই বাড়ছে। যার কারণে প্রতিদিনই বাড়ছে গ্রাহক, রেকর্ড পরিমাণ লেনদেন হচ্ছে।

চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাসে মোবাইলের মাধ্যমে প্রতিদিন এক হাজার ৬৩৭ কোটি টাকা লেনদেন হয়েছে। এক মাস আগেও দৈনিক লেনদেন ছিল এক হাজার ৩৩৬ কোটি টাকা। বাংলাদেশ ব্যাংকের মোবাইল আর্থিক সেবার (এমএফএস) হালনাগাদ পরিসংখ্যান থেকে এ তথ্য জানা গেছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, তাৎক্ষণিকভাবে দ্রুত শহর কিংবা গ্রামে, গ্রাম থেকে শহর সর্বত্রই টাকা পাঠানোর সুবিধার কারণে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এসেছে। করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালীন সময়ে গ্রাহকের কাছে মোবাইলের লেনদেন আরও জনপ্রিয় করতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। করোনার সংক্রমণ ঠেকাতে মানুষ সরাসরি সাক্ষাতে নগদ লেনদেনের চেয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে ক্যাশলেস লেনদেন বেশি নিরাপদ ও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করছেন।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে মোট ১৫টি ব্যাংক মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সঙ্গে জড়িত আছে। ২০২০ সালের সেপ্টেম্বর মাস শেষে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে নিবন্ধিত গ্রাহক সংখ্যা দাঁড়ায় ৯ কোটি ৪৭ লাখ ৮৭ হাজারে; যা তার আগের মাস আগস্টের চেয়ে ২ শতাংশ বেশি। জানা গেছে, টানা তিন মাস একবারও লেনদেন করেনি এমন হিসাবকে নিষ্ক্রিয় হিসাব বলে গণ্য করে থাকে এমএফএস সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।

তথ্য বলছে, আলোচিত সময়ে এমএফএস সেবার লেনদেন ও গ্রাহকসংখ্যার সঙ্গে সেবায় সক্রিয় গ্রাহকসংখ্যাও বেড়েছে। জুলাই মাস শেষে এমএফএস সক্রিয় গ্রাহক এক মাসের ব্যবধানে ১ দশমিক ১ শতাংশ বেড়ে ৪ কোটি ১০ লাখ ৩৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। আর আলোচিত সময়ে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১০ লাখ ১৭ হাজার ৫৫ জনে। এমএফএসে গেল সেপ্টেম্বরে মোট ২৭ কোটি ৩০ লাখ ৮ হাজার ১২৬টি লেনদেনের মাধ্যমে ৪৯ হাজার ১২১ কোটি ২৫ লাখ টাকা লেনদেন হয়েছে। প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয়েছে এক হাজার ৬৩৭ কোটি ৩৭ হাজার টাকা।

মোবাইল ব্যাংকিংয়ে শুধু লেনদেন নয়, যুক্ত হচ্ছে অনেক নতুন নতুন সেবাও। বিদ্যুৎ, গ্যাস, পানির বিল অর্থাৎ সেবা মূল্য পরিশোধ, কেনাকাটার বিল পরিশোধ, বেতন-ভাতা প্রদান, বিদেশ থেকে টাকা পাঠানো অর্থাৎ রেমিট্যান্স প্রেরণসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের সেবা দেওয়া হচ্ছে। আলোচিত মাসজুড়ে মোবাইল ব্যাংকিং হিসাবগুলোয় টাকা জমা পড়েছে ১৪ হাজার ৭২৩ কোটি টাকা। এ সময়ে উত্তোলন করেছে ১৩ হাজার ৮৯০ কোটি টাকা।

প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সেপ্টেম্বর মাসে এমএফএসে রেমিট্যান্স সংগ্রহ ৫ শতাংশ বেড়েছে। এ সময় রেমিট্যান্স এসেছে ১১০ কোটি ১০ লাখ টাকা। ব্যক্তি হিসাব থেকে ব্যক্তি হিসাবে অর্থ স্থানান্তর হয়েছে ১৪ হাজার ৮৫৭ কোটি টাকা। বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের বেতন-ভাতা বিতরণ ৮৩ শতাংশ বেড়ে ১ হাজার ৯৫৫ কোটি টাকা দাঁড়িয়েছে। সেপ্টেম্বরে বিভিন্ন সেবার বিল পরিশোধ করা হয়েছে ৯৩৭ কোটি টাকা। কেনাকাটার বিল পরিশোধ করা হয়েছে এক হাজার ২৯২ কোটি টাকা।

জানা গেছে, ২০১০ সালে মোবাইল ব্যাংকিং কার্যক্রম চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১১ সালের ৩১ মার্চ বেসরকারি খাতের ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালুর মধ্য দিয়ে দেশে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেসের যাত্রা শুরু হয়। এর পরপরই ব্র্যাক ব্যাংকের সহযোগী প্রতিষ্ঠান হিসেবে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা চালু করে বিকাশ। বর্তমানে মোবাইল ব্যাংকিং সেবার বাজারের সিংহভাগই বিকাশের দখলে। এদিকে করোনাভাইরাসের এ দুর্যোগকালীন সময়ে গ্রাহকের কাছে মোবাইলের লেনদেন আরও জনপ্রিয় করতে বিশেষ ছাড় দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।