প্রতিদিন ২০০ মোবাইল ব্যাংকিং হিসাব জব্দ

রোহান রাজিব: একসময় হুন্ডির টাকা জোগান দেয়া হতো ‘ক্যাশে’। তবে হুন্ডির অর্থ দেশে আসার ধরনে এসেছে পরিবর্তন। এখন ডিজিটাল মাধ্যম ব্যবহার করে লেনদেন হচ্ছে এ অর্থ। ফলে দেশে ডিজিটাল হুন্ডির প্রবণতা দিন দিন বেড়ে চলছে। এর সবচেয়ে বড় প্ল্যাটফর্ম হচ্ছে মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস)। কিছু অসাধু এজেন্ট এ অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে। ফলে বৈধ পথে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে।

এর পরিপ্রেক্ষিতে হুন্ডির প্রবণতা ঠেকাতে কাজ করছে বাংলাদেশ ফিন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডিতে লেনদেন করায় দৈনিক ২০০ হিসাব জব্দ করছে সংস্থাটি। বিএফআইইউ সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

জানা যায়, বিদেশে শ্রমিক যাওয়া বাড়লেও হুন্ডির প্রবণতা বৃদ্ধির ফলে ব্যাংকিং চ্যানেলে প্রত্যাশিত রেমিট্যান্স আসছে না। এর অন্যতম কারণ হিসেবে হুন্ডি প্রবণতা বৃদ্ধিকে চিহ্নিত করা হয়েছে। হুন্ডি চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন এমএফএসের এজেন্টশিপ নিয়ে এ ব্যবসা পরিচালনা করছে। এসব এজেন্টশিপদের কাছে বিদেশ থেকে শুধু টাকার পরিমাণ ও নম্বর উল্লেখ করে নির্দেশনা আসে। সে আলোকে সুবিধাভোগীর নম্বরে দেশের বিভিন্ন স্থানে হুন্ডি চক্রের ব্যবসায়ী থেকে অর্থ পরিশোধ করা হয়। এর ফলে প্রবাসীদের অর্থ বৈদেশিক মুদ্রায় আসছে না, যার কারণে রেমিট্যান্স কমে যাচ্ছে।

বিএফআইইউ সূত্রে জানা যায়, এমএফএস ব্যবহার করে হুন্ডিতে টাকা আনার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর নিয়মিত সংস্থাটি তদারকি করছে। তদারকির শুরুর পর থেকে এখন পর্যন্ত মোট ১০ হাজার ২২৩ জন সুবিধাভোগীর হিসাব জব্দ করা হয়েছে। এদের মধ্যে বৈধপথে অর্থ পাঠাতে উদ্বুদ্ধ করে আবার চার হাজারের বেশি হিসাব সচল করা হয়েছে। আগামীতে যেন আর এ উপায়ে টাকা না আনে, সে প্রতিশ্রুতি নিয়ে হিসাব সচল করা হয়। সচল করে দেয়া হিসাবগুলোর মধ্য থেকে ২৭৫টি হিসাব এরই মধ্যে বৈধ পথে এক কোটি ১৬ লাখ টাকা পাঠিয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে এখন পর্যন্ত প্রায় ছয় হাজারের মতো এমএফএস এজেন্টের এজেন্টশিপ বাতিল করা হয়েছে।

জানা গেছে, এমএফএসের মাধ্যমে হুন্ডি লেনদেন ঠেকাতে গত ১০ মে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রোভাইডারদের সঙ্গে বৈঠক করে বিএফআইইউ। সেখানে এ প্রবণতা ঠেকাতে তাদের কিছু নির্দেশনা দেয়া হয়। এর মধ্যে মোবাইল ব্যাংকিং সার্ভিস প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানগুলোকে হুন্ডি প্রতিরোধে প্রো-অ্যাক্টিভভাবে কাজ করতে নির্দেশ দেয়া হয়। নির্দেশনা অনুযায়ী কাজ না করলে বিএফআইইউ কর্তৃক শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হবে। এছাড়া এখন থেকে বাতিলকৃত এজেন্টদের অর্থ আটকে থাকবে, প্রয়োজনে সিজ (জব্দ) করা হবে বলে জানানো হয়। 

সম্প্রতি মোবাইল ব্যাংকিংয়ের পর এজেন্ট ব্যাংকিং হিসাব ব্যবহার করে হুন্ডির টাকা লেনদেনের তথ্য পেয়েছে বিএফআইইউ। পরীক্ষামূলকভাবে সন্দেহজনক চারটি হিসাব যাচাই করে তিনটিতেই হুন্ডির প্রমাণ পেয়েছে। এ পরিপ্রেক্ষিতে এজেন্ট ব্যাংকিং ব্যবহার করে সারাদেশে কী পরিমাণ হুন্ডি হচ্ছে, তা যাচাইয়ের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএফআইইউ। সতর্ক এবং কর্মপন্থা ঠিক করতে এরই মধ্যে এজেন্ট ব্যাংকিংয়ের শীর্ষে থাকা ১০টি ব্যাংকের সঙ্গে বৈঠক করেছে বাংলাদেশ ব্যাংকের তত্ত্বাবধানে মানি লন্ডারিং প্রতিরোধের দায়িত্বে থাকা বিশেষায়িত এ ইউনিট।

অপরদিকে অবৈধ ফরেক্স, বেটিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট লেনদেন প্রতিরোধেও কাজ করছে বিএফআইইউ। অবৈধ ফরেক্স, বেটিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট লেনদেনে জড়িত থাকায় ১৯টি সন্দেহজনক লেনদেন পর্যালোচনায় রয়েছে সংস্থাটির কাছে। এ-সংক্রান্ত পাঁচটি কেস আইনপ্রয়োগকারী সংস্থায় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য পাঠানো হয়েছে। এছাড়া  অবৈধ ফরেক্স, বেটিং ও ক্রিপ্টোকারেন্সি সংশ্লিষ্ট লেনদেনে নতুনভাবে জড়িত ৫৭টি ওয়বসাইট, ১১টি সোস্যাল মিডিয়া পেজ ও একটি অ্যাপ পর্যালোচনাপূর্বক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও বিটিআরসিতে পাঠানো হয়েছে বলে সূত্রে জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএফআইইউর এক কর্মকর্তা বলেন, সম্প্রতি হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেন বেড়েছে। সেই কারণেই রেমিট্যান্স প্রবাহ উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে। রেমিট্যান্স প্রবাহ বাড়াতে হুন্ডি কার্যক্রমের ওপর নজদারি বাড়ানো হয়েছে। এমএফএসের পাশাপাশি এখন এজেন্ট ব্যাংকিংও নজরদাড়িতে আনা হয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ২০০ এমএফএস হিসাব জব্দ করা হচ্ছে। তবে বৈধ চ্যানেলে রেমিট্যান্স পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিলে আমরা হিসাবগুলো আবার চালু করে দিই। হুন্ডির মাধ্যমে লেনদেনের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থাও নেয়া হচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, এখন বৈধপথে মানুষ টাকা পাঠাতে পারে। কারণ বৈধ ও হুন্ডির মাধ্যমে ডলারের বেশি পার্থক্য নেই। তাই রিস্ক নিয়ে হুন্ডিতে টাকা না পাঠানোর জন্য  বাণিজ্যিক ব্যাংক ও এমএফএস অপারেটদের মাধ্যমে লিফলেট ও সোশ্যাল মিডিয়া পেজের মাধ্যমে প্রচারণা চালানো অব্যাহত রাখা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র ও নির্বাহী পরিচালক মো. মেজবাউল হক শেয়ার বিজকে বলেন, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে বা এমএফএসে সন্দেহজনক লেনদেন হলে তা বন্ধ রাখা হয়। বিএফআইইউ বিধিবহির্ভূত লেনদেনের বিষয়ে সন্দেহ করলে অধিকতর তদন্ত ও আইনগত ব্যবস্থা নিতে সিআইডিকে। সিআইডি বা দুদক থেকে কোনো সুপারিশ করা হলে তা পর্যালোচনা করা হয়। এর মধ্যে যেগুলো বাস্তবায়নযোগ্য, সেগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।

তিনি আরও বলেন, হুন্ডিতে যাতে টাকা না পাঠায়, সেজন্য আমাদের প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে। বৈধপথে টাকা পাঠাতে জনগণকে উৎসাহী করতে সরকার আড়াই শতাংশ প্রণোদনাও ঘোষণা করেছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০