নাজমুল হুসাইন: পণ্য ও সেবা বিপণন ব্যবস্থায় সুস্থ প্রতিযোগিতা তৈরির লক্ষ্যে প্রণয়ন করা হয়েছে প্রতিযোগিতা আইন, যা পাঁচ বছর পূর্ণ করতে চলেছে। ওই আইনের বাস্তবায়নের লক্ষ্যে গঠিত প্রতিযোগিতা কমিশনের বয়স চার বছর। কিন্তু এখন পর্যন্ত সক্ষমতাশূন্য কমিশনটি। মাত্র মিলেছে কমিশন অফিস। ফলে এখনও শুধু নামেই রয়েছে ‘প্রতিযোগিতা কমিশন’, ভোক্তা পর্যায়ে যার সুফল অনেক দূর।
২০১৩ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে প্রতিযোগিতা কমিশনের কোনো স্থায়ী অফিসও ছিল না। রাজধানীর কারওয়ান বাজারে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের অফিসের দুটি কক্ষে অস্থায়ীভাবে কার্যক্রম চালিয়েছে এ কমিশন। সে সমস্যার সমাধান হয়েছে চলতি মাসে। পুরাতন এলিফ্যান্ট রোডে (ইস্কাটন, রমনা) প্রবাসী কল্যাণ ভবনের পাশে রেডক্রিসেন্ট বোরাক টাওয়ারে পাঁচতলায় কমিশনের অফিস চালু হয়েছে এ মাস থেকেই।
ব্যবসায়ীদের একটি সিন্ডিকেট বা অবৈধ চক্র সব সময়ই পণ্যের সরবরাহ ব্যবস্থা ব্যাহত করে। পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে তারাই কর্তৃত্বময় ভূমিকা পালন করে আসছে। কারণে-অকারণে পণ্যের অযৌক্তিক মূল্য বৃদ্ধির জন্য তারাই দায়ী। মাঝে মাঝেই বাজারে চোখে পড়ছে দাম বৃদ্ধির অসুস্থ প্রতিযোগিতা। যাতে সব সময় ঠকছেন ভোক্তারা। তাদের বিরুদ্ধে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ারও কোনো আইন ছিল না। এখন প্রতিযোগিতা আইন হওয়ায় তা সরকারের বড় হাতিয়ার হয়েছে। সে উপলব্ধি থেকেই পাঁচ বছর আগে তৈরি করা হয় ‘প্রতিযোগিতা আইন’।
কিন্তু আইনের আওতায় তা কার্যকর করার কর্তৃপক্ষ হলো ‘প্রতিযোগিতা কমিশন’Ñযা এখনও নিজেই প্রতিষ্ঠার প্রতিযোগিতায় লড়ছে। দীর্ঘ সময় পরও কমিশনের নেই সারা দেশে বিস্তৃতি বা কোনো জনবল। চার বছর পার হতে চললেও কমিশনের এমন পরিস্থিতি অনেকটা হতাশাজনক। প্রতিযোগিতার বাজারে এ কমিশন কতখানি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে, সে বিষয়েও সন্দিহান কেউ কেউ। তবে কমিশন চেয়ারম্যান বলছেন, ‘শিগগিরই সব ঠিক হয়ে যাবে।’
এখন কমিশনের কাজ দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে বলে দাবি কমিশন-সংশ্লিষ্টদের। বর্তমান কার্যক্রমের বর্ণনা দিয়ে প্রতিযোগিতা কমিশনের কর্মকর্তারা জানান, গত বছরের ১৯ এপ্রিল বাংলাদেশ ট্যারিফ কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ও ভারপ্রাপ্ত সচিব ইকবাল খান চৌধুরী প্রথম চেয়ারম্যান হিসেবে যোগ দিয়েছেন। এরপর গত ২২ মে নিয়োগ দেওয়া হয় উপসচিব পদমর্যাদার একজন ও সিনিয়র সহকারী সচিব পদমর্যাদার দুই কর্মকর্তাকে। চলতি বছর প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর বছরের মাঝামাঝি সময় থেকে প্রতিযোগিতা আইন কার্যকর করবে সরকার। এর পরপরই সারা দেশে কমিশনের কার্যক্রম শুরু হবে।
কমিশন চেয়ারম্যান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘প্রতিযোগিতা আইন বাস্তবায়নে আমরা পুরোদমে কাজ করছি। কিন্তু বাংলাদেশে এ ধারণা সম্পূর্ণ নতুন। যার জন্য প্রচুর অভিজ্ঞতা প্রয়োজন। দায়িত্ব নেওয়ার পর অল্প সময়ে নতুন অফিস চূড়ান্ত হয়েছে। এখন লোকবল নিয়োগের কাজকে গুরুত্ব দিচ্ছি।
তবে বৃহস্পতিবার সরেজমিনে কমিশনে গিয়ে দেখা যায়, লোকবল না থাকায় সুনসান প্রতিযোগিতা কমিশনের নতুন অফিস। এখনও অবকাঠামো উন্নয়ন ও ডেকোরেশনের কাজ চলছে। দু-একটি কক্ষে বর্তমানে কর্মরতরা বসেছেন। অধিকাংশই ফাঁকা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, প্রতিযোগিতা তহবিল নামে কমিশনের জন্য একটি তহবিল গঠনেরও কথা আইনে বলা হয়। সে উৎস থেকেই কমিশন অর্থ সংগ্রহ করবে। তবে সেখান থেকে সন্তোষজনক আর্থিক সংস্থান হচ্ছে না। এ অবস্থায় নতুনরা দায়িত্ব নিলেও কাজ করতে পারছেন না। এছাড়া এসব গুছিয়ে না ওঠায় প্রতিযোগিতা আইনের বিধিমালা তৈরি করা সম্ভব হয়নি। ফলে ব্যবসা-বাণিজ্যে প্রতিযোগিতামূলক পরিবেশ তৈরি করে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা যে মূল কার্যক্রমÑতা এখনও অনেক দূর ও সময়সাপেক্ষ। এ আইনের সুফল পেতে আরও অনেক সময় অপেক্ষা করতে হবে জনগণকে।
প্রতিযোগিতা আইনের দ্বিতীয় অধ্যায়ে বলা হয়েছে, এ আইনের উদ্দেশ্য পূরণকল্পে সরকার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতা কমিশন নামে একটি কমিশন গঠন করবে। কিন্তু আইন অনুযায়ী এখন পূর্ণাঙ্গরূপে কমিশন গঠন হয়নি। আর কত সময়ের মধ্যে এ ধরনের কমিশন গঠন হয় বা কার্যকারিতা শুরু করে, তার কোনো সুনির্দিষ্ট ব্যাখ্যা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, বাজারে বর্তমান পরিস্থিতি লক্ষ্য করলেই দেখা যাবে বাজারে মাংস নিয়ে যাচ্ছেতাই হচ্ছে। মুক্তবাজার অর্থনীতির নিয়ম অনুযায়ী পণ্যের দাম যেমন সরকার বেঁধে দিতে পারছে না, সেক্ষেত্রে সরকারকে পণ্যবাজারে প্রতিযোগিতা সৃষ্টি করা জরুরি। পণ্য ও সেবার এমন পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষকে সুফল দিতে হলে প্রতিযোগিতা আইন দ্রুত কার্যকর করতে হবে। তাহলেই সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। এত দিনে এ আইন বাস্তবায়ন না হওয়া দেশের মানুষের জন্য দুর্ভাগ্যজনক।
Add Comment