প্রতিযোগিতা সক্ষমতায় সাত ধাপ উন্নতি বাংলাদেশের

নিজস্ব প্রতিবেদক: বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা প্রতিবেদনে বাংলাদেশের অবস্থানে সাত ধাপ উন্নতি হয়েছে। ১৩৭টি দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান এবার ৯৯। সার্বিকভাবে বৈশ্বিক র‌্যাংকিংয়ে বাংলাদেশের অবস্থার উন্নতি হলেও দেশে ব্যবসা-বাণিজ্যে নানা সমস্যা বিদ্যমান রয়েছে। ব্যবসার ক্ষেত্রে দুর্নীতিকে সবচেয়ে বড় বাধা বলে মনে করা হচ্ছে। এছাড়া আর্থিক খাত ব্যবস্থাপনার দিক থেকে ব্যাপকভাবে পিছিয়ে আছে বাংলাদেশ।

ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের ২০১৭ সালের বৈশ্বিক প্রতিযোগিতা সক্ষমতা সূচকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে। সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) পক্ষ থেকে রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে গতকাল এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। একই সঙ্গে সিপিডির পক্ষ থেকে বাংলাদেশের ব্যবসার পরিবেশ-সংক্রান্ত জরিপের প্রতিবেদন (২০১৭) প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০১৬ সালের চেয়ে ২০১৭ সালে বাংলাদেশ বেশ কিছু খাতে ভালো অগ্রগতি অর্জন করেছে। মূলত অবকাঠামো ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে এসব অগ্রগতি সাধিত হয়েছে। তবে প্রযুক্তিগত দক্ষতা-সংক্রান্ত সব সূচকে বাংলাদেশের অগ্রগতি অন্যান্য দেশের তুলনায় পিছিয়ে পড়েছে। সার্বিক সূচকে এক বছরে সাত ধাপ অগ্রগতি অর্জন করে ১০০ দেশের মধ্যে তালিকায় এলেও তা প্রতিবেশী নেপাল ও ভুটানের অগ্রগতির চেয়ে কম। নেপাল এ সময়ে ২০ ধাপ ও ভুটানে ১৫ ধাপ অগ্রগতি অর্জন করেছে। অবশ্য প্রতিবেশী ভারতের এক্ষেত্রে এক ধাপ অবনতি হয়েছে। দেশটি ৪০তম অবস্থান থেকে ৩৯তম অবস্থানে পৌঁছেছে। এছাড়া পাকিস্তানও সাত ধাপ অগ্রগতি অর্জন করে র‌্যাংকিংয়ে ১৩৭ দেশের মধ্যে ১১৫তম অবস্থান অর্জন করেছে। গত বছর দেশটির অবস্থান ছিল ১২২তম। শ্রীলঙ্কারও সাত ধাপ অবনতি হয়েছে এ সূচকে।

সিপিডির নির্বাহী পরিচালক ফাহমিদা খাতুনের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন সংস্থাটির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান ও গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম প্রমুখ। এতে বলা হয়, ওয়ার্ল্ড অর্থনৈতিক ফোরাম প্রতি বছর ১২টি স্তম্ভের পর্যালোচনা করে এ প্রতিবেদনটি তৈরি করে থাকে। গতকাল এ প্রতিবেদনটি প্রকাশ করা হয়। সংস্থাটির বাংলাদেশি অংশীদার হিসেবে সিপিডি এ প্রতিবেদনের বাংলাদেশ অংশের প্রতিবেদন প্রকাশ করে। দেশের ব্যবসায়ী ও উদ্যোক্তাদের বিভিন্ন বিষয়ের ওপর সুনির্দিষ্ট প্রশ্নের ভিত্তিতে জরিপ চালিয়ে এ প্রতিবেদন করা হয়।

এ সময় সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এ প্রতিবেদন ও জরিপ থেকে আমাদের অনুধাবন হচ্ছে, দেশে ব্যবসা ও সুশাসনের জন্য বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু সেসব প্রতিষ্ঠানের উৎকর্ষ ও সেবা প্রদানের ক্ষেত্রে অগ্রসরতা সৃষ্টি হয়নি। এক্ষেত্রে আমাদের রাজনৈতিক প্রতিশ্রæতির মধ্যে সীমাবদ্ধতা রয়েছে কি না, তা ভেবে দেখা দরকার।

মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করে সিপিডির গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ব্যবসায়ীদের অভিমত ও অভিজ্ঞতাগুলো স্পষ্ট হয়েছে এ গবেষণায়। ব্যবসায়ীদের অভিমত থেকে উঠে এসেছে কোথায় গত বছরের চেয়ে অবস্থার উন্নতি আর কোথায় অবনতি হয়েছে। ১২টি স্তম্ভের ভিত্তিতে এ জরিপ চালানো হয়। এর মধ্যে দেখা গেছে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, উদ্ভাবনী যোগ্যতায় দেশের অগ্রগতি খুবই কম। এছাড়া জরিপে দেশের ব্যবসা পরিবেশের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা নিরূপণের জন্য ব্যবসায়ীদের কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল। সে হিসেবে দুর্নীতি বাংলাদেশে ব্যবস্থার জন্য সবচেয়ে বড় সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে। ব্যবসায়ীদের অধিকাংশই ঘুষের প্রবণতা কমার কথা বললেও সরকারি টেন্ডার ও কার্যাদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে আস্থাভাজনরা বেশি সুযোগ পাচ্ছে বলে উল্লেখ করেছেন। এবারের প্রতিবেদন অনুসারে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে দুর্বল অবকাঠামো, যা গত বছর প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত ছিল। অন্যদের মধ্যে অদক্ষ আমলাতন্ত্র, শিক্ষিত ও দক্ষ জনশক্তির অভাব, জাতীয় শ্রমশক্তির ক্ষেত্রে দুর্বল মূল্যবোধ, অর্থায়নের দুষ্প্রাপ্যতা ও স্থায়ী নীতি সহায়তার অভাবের কথা বলা হয়।

সূত্রমতে, প্রতিবেদনে যে ১২টি স্তম্ভকে হিসাব করা হয়েছে সেগুলো হলো প্রাতিষ্ঠানিক অবস্থা, অবকাঠামো উন্নয়ন, সামগ্রিক অর্থনৈতিক পরিবেশ, স্বাস্থ্য ও প্রাথমিক শিক্ষা, উচ্চশিক্ষা ও প্রশিক্ষণ, পণ্যবাজার, শ্রমবাজার, আর্থিক বাজার, প্রযুক্তিগত সক্ষমতা, বাজারের আকার, ব্যবসার সফিসটিকেশন ও উদ্ভাবন প্রভৃতি। এসব স্তম্ভের আওতায় পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে সূচকের মান হিসাব করা হয়। আগের বছরগুলোর প্রতিবেদন হিসেবে দেখা গেছে, ২০১২ সাল থেকে বাংলাদেশের অবস্থান ১১৮তম থেকে ৯৯তম অবস্থানে উন্নীত হয়েছে। সে হিসেবে গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশের অবস্থান ১৯ ধাপ উন্নীত হয়েছে। দেখা গেছে, গত পাঁচ বছরে সার্বিক সূচকে ধারাবাহিকভাবেই কিছুটা অগ্রগতি অর্জন করেছে বাংলাদেশ।

 

 

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০